হুজুগে বাঙ্গাল :স্যার আর আরাভ খান নিয়ে ব্যস্ত : বাজারে আগুনের খবর নাই
প্রকাশ: ২৫ মার্চ, ২০২৩, ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
মামুনুর রশীদ নোমানী :পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যার বিচার চাই। গ্রেপ্তার করা হোক সকল আসামীদের। এ দাবী সকলের।এ দাবী আমারও। পাচঁ বা ছয় নম্বর আসামী আরাভ খান ওরফে রবিউল ওরফে হৃদয়। আমরা এখনো জানতে পারি নাই আরাভ ওরফে রবিউল ছাড়া অন্য আসামীরা কে কোথায় আছে? । আরাভ খান এখন অনেকটাই হিরো। আমরা পরে আছি আরাভ খানকে নিয়ে।
ঘটনা : ২……
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক শিক্ষককে ‘স্যার ডাকতে বাধ্য করার’ অভিযোগ উঠেছে রংপুরে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে।
উপরের দুটি ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হৈ চৈ। নিউজ ফিড গরম। আরাভ ও স্যার বলা না বলা নিয়ে চারদিকে শোরগোল। পক্ষে বিপক্ষে লেখালেখি চলছে। প্রতিবাদও হচ্ছে। নুতন নুতন ফিচার আসছে। চলছে এসব বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আমরা বাঙ্গালী। ইস্যু পেলেই হলো। কোথায় যায়। শেষ দেখে বিদায় নিতে হয়। তবে খবর নাই বাজারের। খবর নাই যানবাহনের ভাড়ার। খবর নাই ইফতারের নামে আমরা কি খাচ্ছি।সয়াবিন তেল না পোড়া মবিল দিয়ে বেগুনী,আলুর চপ তৈরী হচ্ছে। খবর নাই লেবুর হালি কত। খবর নাই তরমুজ কেজি না পিচ আকারে বিক্রি হচ্ছে। আমরা জন্মগত ভাবেই বাঙ্গালী। ইস্যু ধরিয়ে দেয় আমরা সেই ইস্যু নিয়ে মাতাল হয়ে যাই। পাগলের মত গবেষক হই। আমাদের যে ইস্যুতে কথা বলা প্রয়োজন সে ইস্যুতে নিরব থাকি। প্রতিবাদের সাহস হারিয়ে ফেলি। অসহায়। কেন? আমরা নিজেকে নিজেই সেন্সরশিপ আরোপ করি। হ্যা আমরা দালালীতে ব্যস্ত। সত্য কথা বলতে ভুলে গেছি। দাস প্রথা ফিরিয়ে এনেছি। আমরা নিজের ক্ষতি নিজেই করে যাচ্ছি। বাজারের খবর নাই। এ নিয়ে দু কলম লেখা নাই। অথচ কে স্যার বললো না বললো তাদের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধারে ব্যস্ত। ফাঁকে অসৎ ব্যবসায়ীরা আমাদের পকেট কেটে চম্পট দিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্র করে গত কয়েক বছরে অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি। আর পেয়েছি ফেসবুক, টুইটার সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ।আসুন এসব মিডিয়াকে কাজে লাগাই নিজের জন্য, সমাজের জন্য। সোশ্যাল মিডিয়া একটা বড়সড় হাতিয়ার, যার মাধ্যমে ভালো কিংবা খারাপ, দুই দিকেই পরিবর্তন আনা সম্ভব। শুধুই যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে না দেখে, এটাকে ব্যবহার করে ঘটিয়ে দেয়া যায় অসাধারণ কিছু পরিবর্তন।
আসুন কথা বলি অন্যায়ের বিরুদ্ধে। অসংগতির বিরুদ্ধে। নিপিড়ক ও নির্যাতকদের বিরুদ্ধে। তিতা -মিঠা বুঝতে হবে। না বুঝলে আমরা আমাদের ক্ষতি করতে সহায়ক হচ্ছি।
সংসারের জরুরি দুটি পণ্য চাল ও ভোজ্যতেলের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছেই। কারো কোন পদক্ষেপ নাই। নাই প্রতিবাদ। যতটুকু প্রতিবাদ হয় তা সিকিভাগও নয়। হারিয়ে যায় সাকিব,আরাভ,হিরোআলম আর স্যার বিষয়ক খবরের নীচে।
দেড় থেকে দু’মাসের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের গরম মসলার দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত।
ইত্তেফাক এর শিরোনাম ” কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি
রোজায় বাজার গরম”
খবরে বলা হয়েছে নিত্যপণ্যের বাড়তি দরের চাপ নিয়েই এবার ভোক্তাদের রোজা শুরু । চাল থেকে ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, মাংস, সবজি, ফল—এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। গত এক বছরের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আবার রসুন, শুকনা মরিচের মতো পণ্যের দাম বেড়েছে ১০০ শতাংশের বেশি।
সিন্ডিকেট করে একটি চক্র পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। তা না হলে দাম এত বাড়বে কেন?।
ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে। অথচ এক বছর আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা। গত বছর প্রতি হালি ফার্মের ডিমের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। যা এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা হালিতে। গত বছর প্রতি কেজি গরুর মাংস ছিল ৬৫০ টাকা। যা গতকাল ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খাসির মাংস এক বছরের ব্যবধানে কেজিতে ২৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ১০০ টাকায় উঠে গেছে।নভাবে। প্রতি কেজি চিনির দাম গত বছর ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। সেই চিনি এবার বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। বিভিন্ন ধরনের ডালের মধ্যে অ্যাংকর কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, ছোলা কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। যা গত বছর এ সময় ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। প্যাকেট ময়দার কেজি গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। গত এক বছরের হিসেবে ভোজ্য তেলের দামটা তুলনামূলক কম বেড়েছে। তাও ১০ শতাংশের বেশি। গতকাল বাজারে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৮৭০ থেকে ৮৮০ টাকা। যা গত বছর ছিল ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়া এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন গতকাল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গত বছর এ সময় ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। রোজায় দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাবার তৈরির জন্য দুধের চাহিদা বাড়ে। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্যাকেটজাত বিভিন্ন দুধের দামও। গত বছর বিভিন্ন প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের কেজি ছিল ৫৮০ থেকে ৬৯০ টাকা। যা এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮৫০ টাকা।
চিনি, ডাল, তেলের পাশাপাশি রোজা উপলক্ষে বাজারে সবজি, ফলের দাম আরও এক দফা বেড়েছে।লেবুর দাম বেড়েছে লাগামহীনভাবে। প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।বেড়েছে মাছের দামও।
আমাদের লিখতে হবে ,বলতে হবে। না বললে না লিখলে বাড়বেই প্রতিনিয়ত পণ্যের দাম।
হুজুগে না পড়ে গুজবে কান না দিয়ে প্রতিবাদ করি। করি প্রতিরোধ।
হুজুগ আর বাঙালির পথচলা সমান্তরাল হলেও গুজব-হুজুগের পেছনে কম-বেশি মানুষকেই দৌঁড়াতে দেখা যায়। মানুষ মাত্রই কমদামে তাদের প্রিয় পণ্য কিনতে চায়। কেউ লাভ আর কেউ কেউ নিজ প্রয়োজনে জমিয়ে রাখতে চায় পণ্য। কেউ কেউ অন্যদের দেখে হুজুগে মাতে। বহু বছর ধরে এমন চলে আসছে। চাইলে বা চেষ্টা করলেও কী এর থেকে পরিত্রাণ সম্ভব? আমরা একটা গল্প শুনে বিদায় নেই এবং ভবিষ্যতের গুজব ও হুজুগ নিয়ে ভাবতে থাকি।
গুজব আর হুজুগের কারণে এক এলাকার লোকজন খুবই অশান্তিতে ভুগছিল। কীভাবে গুজব ও হুজুগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তার উপায় খুঁজছিল। এমন সময় এক সাধুবাবার আবির্ভাব ঘটলো। সাধুবাবার পরনে নেংটি আর গলায় গামছা। তিনি এলাকাবাসীকে জড়ো করে বললেন-সমুদ্রস্নানে যেতে হবে। তার দোয়ায় জলের সাথে ভেসে যাবে গুজব আর হুজুগ। নির্দিষ্ট দিনে সাধুবাবার পেছনে সমবেত হলো এলাকার সব লোক। সাধুবাবার নেতৃত্বে শুরু হলো প্রার্থনা ও সমুদ্রস্নান। স্নান শেষে এলাকার সব লোক তীরে উঠে দাড়াল। উঠলেন না শুধু সাধু বাবা। তিনি বুক ডুবিয়ে দাঁড়িয়েই থাকলেন। লোকজন জানতে চাইলো- সাধুবাবা উঠছেন না কেন?
সাধুবাবা জানালেন- গুজব ও হুজুগ বিদায় হয়েছে কিনা বুঝতে পারছি না। তবে প্রার্থনা ও স্নানের জলের সাথে আমার পরনের নেংটি ও গামছা যে ভেসে গেছে সেটা বিলকুল বুঝতে পারছি!
লেখক : প্রধান বার্তা সম্পাদক দৈনিক শাহনামা ও সম্পাদক বরিশাল খবর।
nomanibsl@gmail.com