শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ

মামুনুর রশীদ নোমানী : দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী আইন শিক্ষার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বরিশাল ‘ল’ কলেজ। বর্তমানে বরিশাল ‘ল’ কলেজের নাম শহীদ এ্যাডভোকেট আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ আইন মহাবিদ্যালয় করা হলেও বরিশাল ‘ল’ কলেজ নামেই পরিচিত এই প্রতিষ্ঠান। কয়েক যুগের পুরনো প্রতিষ্ঠান বরিশাল ‘ল’ কলেজের শুরুর লগ্ন থেকেই বরিশালে নিযুক্ত জেলা প্রশাসকরা অত্র কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। হঠাৎ চলতি বছরের ৯ মে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আদেশে সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে বরিশাল ‘ল’ কলেজে হাজির হন আনোয়ার হোসেন।বরিশাল ‘ল’ কলেজে আনোয়ার হোসেন সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরই তিনি কলেজের উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ভাউচার দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কলেজের আয় ব্যয়ের হিসাবের জন্য একটি চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ফার্ম থেকে একজন চার্টার্ড একাউন্টের মাধ্যমে হিসাব-নিকাশ করা শুরু হয়। যার দায়িত্বে ছিলেন এম. হায়দার আলী।হায়দার আলীকে বরিশাল ‘ল’ কলেজের হিসাব-নিকাশ কি পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান- বরিশাল ‘ল’ কলেজে সভাপতি অবৈধভাবে তার আত্মীয় জামাইকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করেন। যাহার মধ্যে অন্যতম হলো আইন বহির্ভূত টেন্ডারবিহীন বরিশাল ‘ল’ কলেজে উন্নয়নের নামে অর্থ খরচের ভাউচার।তিনি আরো বলেন- কলেজের সভাপতির স্ত্রী কাউন্সিলর নির্বাচনের সময় নির্বাচনী খরচের অনেক ভাউচার ‘ল’ কলেজে দিয়েছেন। যা দেখে আমি আপত্তি জানাই। এছাড়াও অনেক ভাউচার রয়েছে, যা আমার সামনে আনেনি হিসাবের সময়।‘ল’ কলেজের শিক্ষক কমিটির সদস্য এক শিক্ষিকাকে হিসাব-নিকাশের ভাউচারে আপনি কোন স্বাক্ষর করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমি কোন স্বাক্ষর করিনি কলেজের হিসাব নিকাশের ভাউচারে। সেই শিক্ষিকার স্বাক্ষর জাল করেছেন বলে অভিযোগ করেন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট এম. হায়দার আলী।হায়দার আলী আরো বলেন- ‘ল’ কলেজে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও তার জামাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সকল আইন বহির্ভূতভাবে কলেজের অর্থ খরচ করেছেন এবং এত বড় একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের সভাপতি প্রায় সময়ই অফিসকক্ষে এসে একটি চেয়ার নিয়ে বসে থাকে। যাতে শিক্ষকরাও বিরক্ত বোধ করে আমাকে অনেক শিক্ষকই অভিযোগ করেছেন।
হায়দার আলী আরো বলেন- আমাকে বিধি মোতাবেক বরিশাল ‘ল’ কলেজ থেকে হিসাব নিকাশের জন্য নিয়োগপত্র দেওয়া হলেও আমি স্ব”ছ হিসাব নিকাশ করায় তারা আমার হিসাব নিকাশের রিপোর্ট গ্রহণ করেনি। কলেজে যিনি এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন তার এই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা হলো সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত কারণ তিনি অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য এই ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেয়েছেন। আমি যখন অধ্যক্ষের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির পেপার দেখতে চেয়েছি, তা কলেজের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেখাতে পারেনি। বরিশাল ‘ল’ কলেজটি সম্পূর্ণ অনিয়মের উপর চলছে বলে মন্তব্য করেন হায়দার আলী।এদিকে বরিশাল ‘ল’ কলেজের সভাপতির উপরে হামলার ঘটনার বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপ-অধ্যক্ষকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেনি।বরিশাল ‘ল’কলেজের সভাপতির উপর কেন হামলা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে ¯’ানীয় আরিফুর রহমান অপুকে কল করলে তিনি জানান- বরিশাল ‘ল’ কলেজের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শশুর-জামাই হওয়ায় তারা কলেজের উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ করতেছে এবং বরিশাল ‘ল’ কলেজের সামনে অমৃত ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী বিজয় বাবুর কর্মচারীরা জাতীয় নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেয়ায় ‘ল কলেজের সভাপতি তাদেরকে গালাগালি করায় অমৃতের কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে ‘ল’ কলেজের সভাপতির উপর হামলা চালায়। যাতে তিনি আর এ কলেজে সভাপতি থেকে কোন দুর্নীতি না করতে পারে।
সূত্রে জানা যায়- আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী তার ভাই এরা একেকটা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে যার অনেক প্রমাণ রয়েছে। এই পরিবারে কোন লোক যাতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব না পায় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন ।আরো বলেন- বরিশাল ‘ল’ কলেজ আমাদের ঐতিহ্য তাই এই কলেজের সভাপতি দায়িত্ব থেকে দুর্নীতিবাজ আনোয়ার হোসেনের দ্র“ত অপসারণ চাই।
নাম প্রকাশে অনি”ছুক বরিশাল সদর হাসপাতাল রোডের এক বাসিন্দা জানান- আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী পূর্বেও একটি এনজিওর নামে ৬শত পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। তাদের থেকে টাকা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে। যার জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে ভুক্তভোগী ৬শত পরিবার। তারা অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘোড়াঘুড়ি করেও কোন ফল পায়নি।তিনি আরো বলেন- আনোয়ার হোসেন জগদীশ সারস্বত স্কুলের সভাপতি হওয়ার পর সারস্বত স্কুল একেবারে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যা নগরীর সকলেই জানে। আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রীর দুর্নীতির বিষয় নিয়ে অনেক পত্র-পত্রিকায়ও লেখালেখি হয়েছে।বরিশাল ‘ল’ কলেজের একজন স্টাফ নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন- আনোয়ার হোসেন বরিশাল ‘ল’ কলেজের সভাপতি দায়িত্ব পাওয়ার পরই অবৈধভাবে ‘ল’ কলেজের অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য প্রথমে তিনি সকল শিক্ষকদেরকে আইনবহির্ভূত মাসিক ১০ হাজার টাকা করে সম্মানি বাড়িয়ে দিয়ে কলেজের সকল শিক্ষককে তার অনুসারী করার চেষ্টা করে। পাশপাশি কলেজের দুজন প্রবীণ শিক্ষককে একক ক্ষমতায় বাদ দিয়ে তিনি নতুন করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনজন শিক্ষককে নিয়োগ দেন। যা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত ছিল। সেই ৩ জনের ‘ল’ কলেজে নিয়োগ পাওয়ার মত কোন যোগ্যতাই ছিল না।তিনি আরো বলেন- ‘ল’ কলেজের এফডিআর ফান্ডে অনেক টাকা থাকায় সেই টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করার জন্য আনোয়ার হোসেন সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পূর্বে ‘ল’ কলেজের গভার্নিং বডির যারা সদস্য ছিলেন তাদেরকেও তিনি বাদ দিয়ে নিজের পছন্দমত গভার্নিং বডির সদস্য নিয়োগ দেন।
তিনি আরো বলেন- আনোয়ার হোসেন বরিশাল ‘ল’ কলেজের অর্থ দিয়ে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও তিনি নিজে এক কালারের কমপ্লিট সুট বানান। সেই এক কালারের কমপ্লিট সুট নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।সদ্য বিদায়ী বরিশাল ‘ল’ কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানান- আনোয়ার হোসেন সভাপতি হওয়ার পরে বিভিন্নভাবে ভাউচার দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। আনোয়ার হোসেন বরিশাল ‘ল’ কলেজের সভাপতি হওয়ায় কলেজের সাবেক বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা সাংবাদিকদের বলেন- দুর্নীতিবাজ অর্থলোভী আনোয়ার হোসেনকে বরিশাল ‘ল’ কলেজের সভাপতির দায়িত্ব থেকে দ্র“ত অপসারন না করা হলে কয়েক যুগের ঐতিহ্যবাহী আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে।তারা বলেন- বরিশাল ‘ল’ কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই চায়না তিনি এই সভাপতি দায়িত্বে থাকেন। তিনি ‘ল’ কলেজের জন্য বিরক্তিকর হয়ে উঠেছেন। প্রায় দিনই কলেজে এসে বসে থাকেন এবং বিভিন্নভাবে ভাউচার দিয়ে কলেজের অর্থ খরচ করেন। তিনি সভাপতি হওয়ার পর বরিশাল ‘ল’ কলেজের দুইটি অনুষ্ঠানের নামে আমন্ত্রিত অতিথিদের উপহার দেয় ও তাদের আপ্যায়নের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। সেই খরচ ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক। তাই আমরা আনোয়ার হোসেনকে বরিশাল ‘ল’ কলেজের সভাপতি পদ থেকে অপসারন চাই।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া