শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



বিআরডিবির টাকা নয়ছয় নিয়ে তদন্ত-মূল্যায়ন গরিবের প্রকল্পের দুই কোটি টাকা অন্যের পকেটে
প্রকাশ: ৬ আগস্ট, ২০২৩, ১:৩৩ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

বিআরডিবির টাকা নয়ছয় নিয়ে তদন্ত-মূল্যায়ন গরিবের প্রকল্পের দুই কোটি টাকা অন্যের পকেটে

*আদেশের পরেও পিডির বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়নি * বাজারদর যাচাই এবং দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিও ফাঁসতে পারে
*গরিবের প্রকল্পের দুই কোটি টাকা অন্যের পকেটে

*লোপাট হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩ (পজীপ)-এর কয়েক কোটি টাকা।

সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এই প্রকল্পে কেবল ফটোকপিয়ার ক্রয়েই কমপক্ষে ২ কোটি টাকা অপচয়ের তথ্য পেয়েছে। বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি দামে কেনা হয়েছে ২২২টি ফটোকপি মেশিন। এগুলো কিনতে পদে পদে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

বিভিন্নভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর)। গ্রামের গরিব মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সরকারের এই টাকা সংশ্লিষ্টদের পকেটে ঢুকেছে।

আইএমইডি’র সমীক্ষার খসড়া প্রতিবেদন এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের তদন্ত পর্যালোচনা করে এই প্রকল্পে অনিয়মের এসব তথ্য মিলেছে।

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত ‘৬০ হাজারের ফটোকপিয়ার দেড় লাখে, লুটপাটের আয়োজন গরিবের প্রকল্পে’ শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। তদন্তে দুর্নীতি-অনিয়মের সত্যতা মেলে। আর্থিক শৃঙ্খলা-পরিপন্থি কাজ করায় তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের ভিত্তিতে পিডিকে (প্রকল্প পরিচালক) সোমবার তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

অথচ শনিবার সন্ধ্যায়ও বিআরডিবি’র সরকারি ওয়েবসাইটে পজীপ-৩ প্রকল্প পরিচালক হিসাবে তার নাম দেখা গেছে।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও তা করা হয়নি। তদন্তের সুপারিশ অনুযায়ী, বাজারদর যাচাই কমিটি ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার বিকালে বিআরডিবি’র মহাপরিচালক আ. গাফ্ফার খান যুগান্তরকে বলেন, পিডিকে পদ থেকে অব্যাহিত দেওয়ায় ডিপিডি কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে নতুন পিডি নিয়োগ দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, এই সপ্তাহেই পজিপ-৩ এর পিডি আলমগীর হোসেন আল নেওয়াজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। তবে বাজারদর যাচাই কমিটি ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।

এর আগে যুগান্তরের অনুসন্ধানে উঠে আসে, বিআরডিবি’র পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩ এর ২২২টি ফটোকপিয়ার মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত হয় গত বছরের শুরুর দিকে। তখন দেশের বাজারে টোসিবা ব্র্যান্ডের ‘ই-স্টুডিও ২৮২৩ এএম’ মডেলের একটি ফটোকপিয়ারের খুচরা মূল্য ছিল ৬০-৬৫ হাজার টাকা। পাইকারিতে যা ছিল আরও কম। অথচ বাজার দরের আড়াই গুণ বেশি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় দাপ্তারিক প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে স্পেসিফিকেশন ও বাজার দর নির্ধারণ কমিটি।

পরবর্তীতে গ্লোরী অফিস সল্যুশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিটি মেশিন সরবরাহ করে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা দরে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানই বিআরডিবিকে সরবরাহের কিছুদিন আগে একই পণ্য অন্যত্র সরবরাহ করে ৬০ হাজার টাকা দরে, যা ফটোকপিয়ার ক্রয়ের টেন্ডারে অভিজ্ঞতা হিসাবেও উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপরেও চড়া দামে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ফটোকপিয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে দুই কোটি টাকারও বেশি লোপাট হয়েছে।

আইএমইডি’র প্রতিবেদন : পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে পজীপ-৩ প্রকল্পের নিবিড় সমীক্ষা পরিচালনা করে আইএমইডি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আইএমইডি একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদনে প্রকল্পের নানা অসংগতির চিত্র উঠে আসে। এতে বলা হয়, ২০২২ সালের জুনে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান ছিল ৮৭ টাকা। তখন একটি ফটোকপিয়ারের মূল্য নির্ধারণ হয় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সে সময় একটি ফটোকপিয়ারের প্রকৃত বাজার মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায় প্রতি ফটোকপিয়ার মেশিনের জন্য এক লাখ ৫৯ হাজার পাঁচশ টাকা পরিশোধ করা হয়। চলতি বছরের জুলাইয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া বিবরণীতে ফটোকপিয়ার ক্রয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি অর্থই ব্যয় হিসাবে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ ২২২টি ফটোকপিয়ার মেশিন কিনতে গিয়ে সরকারের কমপক্ষে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়।

এ ছাড়া পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামকে বিষয়টি আলাদাভাবে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর গত ৭ জুলাই তদন্ত শেষে বিভাগের সচিবের কাছে ৭ পাতার প্রতিবেদন ও ২২৯ পাতার সংযুক্তি জমা দেন তিনি। সেখানে প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে ফটোকপিয়ার ক্রয়ের সত্যতা পান তিনি।

সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদানের প্রক্রিয়াটিকে আর্থিক শৃঙ্খলাপরিপন্থি হিসাবে উল্লেখ করেন। প্রতিবেদনে টেন্ডার দাখিলের সময়সীমা নির্ধারণে অনিয়ম ও অবাস্তব শর্ত প্রদানের সত্যতা মেলে।

পিপিআর লঙ্ঘন : আইএমইডি’র খসড়া প্রতিবেদনে এই প্রকল্পে পিপিআর লঙ্ঘনের বিষয়টিও উঠে আসে। এতে বলা হয়, টেন্ডার দাখিলের জন্য ২১ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। অথচ পিপিআর বিধি ৬১ (৪) অনুযায়ী, ২ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে এবং ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ক্রয়ের ক্ষেত্রে এই সময় ন্যূনতম ২১ দিন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে পিপিআরের বিধি ৬১ (৪) লঙ্ঘন করা হয়েছে।

এ ছাড়া দরপত্র দুটি পত্রিকায় প্রকাশ করা হলেও সিপিটিইউর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। তবে পিপিআর বিধি ৯০ (২) (ঝ) অনুযায়ী, পণ্য ও সংশ্লিষ্ট সেবা এবং কার্য ও ভৌত সেবার দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ১ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে সিপিটিইউ’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রেও পিপিআর লঙ্ঘন হয়েছে।

এর বাইরে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে এনওএ (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তাকে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে কি না জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। তাকে নন-রেসপনসিভ করা হয় এবং দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে এনওএ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী এমন করার সুযোগ নেই।

৬ সুপারিশ : পজীপ-৩ এর অনিয়ম তদন্ত করে ৬টি সুপারিশ করা হয় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিবেদনে। এগুলো হলো-পিপিআর অনুসরণ না করে পিডি মো. আলমগীর হোসেন আল নেওয়াজ আর্থিক শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজ করেছেন বিধায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বাজারদর যাচাই কমিটি কর্তৃক প্রকৃত বাজারমূল্য উপস্থাপন করা হয়নি বিধায় এই কমিটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক পিপিআর অনুসরণে দরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি বিধায় এই কমিটির বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। ক্রয়কাজে স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের পিপিএ-২০০৬ ও পিপিআর-২০০৮ সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা রয়েছে কি না তা যাচাই করে তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা।

ক্রয়কাজে সংশ্লিষ্টদের এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা দিতে প্রশিক্ষণ/সেমিনার/ওয়ার্কশপ ইত্যাদির আয়োজন করা। সর্বশেষ সুপারিশ হলো-সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাগণকে প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া