সম্পাদকের নোট: মীরা জাতভ ভারতের পুরস্কারজয়ী তৃণমূল নারীবাদী সংবাদমাধ্যম, খবর লহরিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ভারতে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা ও বর্ণপ্রথা নিয়ে সাহসী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। এখানে থাকছে লন্ডনে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের গ্রীষ্মকালীন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সম্মেলনে তাঁর দেয়া বক্তৃতাটি।
বৈশ্বিক সাংবাদিক সমাজের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম অনুগ্রহ করে আমাকে এই অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির সুযোগ করে দেয়ায় আমি সম্মানিত ও আনন্দিত। আমার নাম মীরা জাতভ, আমি একজন সাংবাদিক, এবং বর্ণপ্রথাবিরোধী নারীবাদী।
সত্যি কথা বলতে কি, আমি সত্যিই ভাবিনি যে, এখন আপনাদের যা বলতে যাচ্ছি– সেই প্রসঙ্গ দিয়ে আমার বক্তব্য শুরু করব। কিন্তু আমি মনে করি, এটি আপনাদের জানানোটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখানে আসার জন্য মঙ্গলবার সকালে নয়াদিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছাই। বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করতে গেলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ আমাকে ফিরিয়ে দেয়। আমার কাগজপত্র – ভিসা, আমন্ত্রণপত্র ও টিকিট – সবকিছু ঠিকঠাক সাজানো ছিল। তবুও আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তারা বলেছে, সাংবাদিক হলে আমাকে অ্যাক্রিডিশনের প্রমাণ দেখাতে হবে। তারপর তারা জানায়, কিছু বিশেষ নিয়মের কারণে সাংবাদিকদের অতীত ইতিহাস যাচাই ও নজরদারির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তারা আমাকে আরও বলে যে, অনুষ্ঠানটি হবে পুরোপুরি ইংরেজিতে, তো সেখানে আমার মতো হিন্দি-ভাষী গ্রাম্য একজন নারী কী করবে। আমাকে যেতে দেয়ার আগে এভাবে নানান হয়রানি-হেনস্তা চলে প্রায় পৌনে এক ঘন্টা ধরে।
এই অভিজ্ঞতা জানানোটা আমি জরুরি মনে করি, কারণ এই ঘটনা থেকে এমন অনুভূতি হয় যে, সাংবাদিকতা একটি বিপজ্জনক পেশা। মানুষও মনে করে যে, এটি আগের অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক পেশা। মনে হয়, সাংবাদিকেরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হুমকির মুখে।
মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি, প্রায় ২৫ বছর আগে উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশের বুন্দেলখন্ড নামের এক অনুন্নত অঞ্চল থেকে আমার পথচলা শুরু হয়েছিল। ২০০২ সালের ৩১শে মে আমরা সাতজন – আমি আর আমার সহযোদ্ধারা – দলিত, বহুজন [অ-উচ্চ বর্ণের জনগোষ্ঠী], মুসলমান গ্রামীণ নারী – খবর লহরিয়া নামে একটি অতি-স্থানীয় সংবাদপত্রের বীজ বপন করেছিলাম, যা আজ বিকশিত হয়েছে পুরো বিশ্বের দেখার জন্য।
আজ আমি আপনাদের সামনে আমাদের সেই যাত্রাপথটি নিয়ে কিছু বলতে এসেছি, যেই পথের সঙ্গী ছিল প্রতিকূলতা আর কষ্টার্জিত বিজয়। আমার বিশ্বাস, এখান থেকে আমাদের সবারই কিছু শেখার আছে।
যাঁর হাত ধরে সিআইজের পথচলা শুরু হয়েছিল, সেই গ্যাভিন ম্যাকফেইডেন-কে নিয়ে আমি কিছুটা পড়াশোনা করেছি। এবং আমার মনে হয়, যে কঠিন সময়ের প্রতিক্রিয়ায় সিআইজে গড়ে উঠেছিল সেই একই রকম সময় আমরা এখন আবার দেখছি। আমি শুধু আমার দেশ, রাষ্ট্র নিয়েই কথা বলি। সেখানে সাংবাদিকতা পার করছে অভূতপূর্ব প্রতিকূল সময়। যেখানে এখন ক্ষমতাকে জবাবদিহি করার কথা, সেখানে আমরা চুপ থাকা ও কিছুই না করার পথ বেছে নিয়েছি। যেখানে ক্ষমতা এখনও আমাদের মাথা নোয়াতে বলেনি, সেখানে আমরা হামাগুড়ি দিয়ে চলছি।
আমি আপনাদেরকে আমার নিজ রাজ্য, উত্তর প্রদেশ সম্পর্কে বলি, যেটি সাংবাদিকদেরকে তাদের কাজের জন্য অপরাধী বানানোর চেষ্টায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে। এমনকি সাধারণ নাগরিকেরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেবল নিজের অনুভূতি প্রকাশের দায়ে শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন, শুধুই নিজের অনুভূতি প্রকাশের জন্য। জাতীয় অপরাধ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানেও উত্তরপ্রদেশের অবস্থা শোচনীয়। সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনাসহ নারীদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ এবং সহিংস রাজ্য হিসেবেও শীর্ষে আছে এটি। প্রান্তিক সামাজিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রেও উত্তর প্রদেশের অবস্থান শীর্ষে — দেশজুড়ে দলিতদের বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনার এক চতুর্থাংশ, অর্থাৎ প্রায় ২৫ ভাগই ঘটে আমার রাজ্যে।
এই পরিসংখ্যানও পুরো চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারে না। সহিংসতার যে ঘটনাগুলো সরকারি রেকর্ডে নথিভুক্ত হয় না– সেগুলোও হয়তো আপনারা অনুমান করতে পারবেন। দলিত বহুজন নারীর রক্ত, ঘাম ও শ্রমে গড়ে ওঠা খবর লহরিয়া এমন সহিংস মরুপ্রান্তরেই ফুল ফুটিয়েছে। আমাদের সমাজ সবসময় দলিত নারীদেরকে রেখেছে শ্রেণীবিভক্ত সমাজ ব্যবস্থার তলানিতে, তবুও আমি কখনো এমন কোনো প্রজন্মের নারীদের কথা শুনিনি, যারা নিজেদের শক্তি ও কণ্ঠ খুঁজে পেয়েছে, নির্ভীক ও স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। এর কোনোটাই সহজ ছিল না, এখনও নয়।
খবর লহরিয়ার স্টোরি মানেই গ্রামীণ, প্রান্তিক, নব্য শিক্ষিত নারী সমাজের গল্প। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা জনস্বার্থ সাংবাদিকতার স্টোরি। ২০০২ সালে আমরা সাত বহুজন নারী যখন খবর লহরিয়া নামে একটি নতুন পত্রিকা বের করি, তখন সেখানে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। কারা এই নারী, যারা নিজেদের সাংবাদিক বলার সাহস করেছে? আমরা ছিলাম স্ব-শিক্ষিত। আমরা নিজেদের স্থানীয় ভাষায় লিখতে চেয়েছিলাম কারণ আমাদের চাওয়া ছিল, এই অঞ্চলের নারীরা আমাদের পত্রিকা পড়ুক, আমাদের সঙ্গে কথা বলুক।
আমাদের না ছিল কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, না ছিল সাংবাদিকতার শিক্ষা। আমরা প্রথমবারে ছাপিয়েছিলাম ১,০০০ কপি। এবং এগুলোর প্রতিটিই আমরা নিজেরা বিক্রি করেছি। মূলত এই বিষয়টিই অন্য গণমাধ্যমের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য গড়ে দেয়। ২০১৬ সালে খবর লহরিয়ার ডিজিটালে মোড় নেওয়ার আগ পর্যন্ত, স্টোরির খোঁজে ও পত্রিকা বিতরণে আমরা বেশিরভাগ পথ পায়ে হেঁটে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়াতাম। আমরা এমন সব জায়গায় গিয়েছি, যেখানে সরকার, মূলধারার গণমাধ্যম, এমনকি রাজনীতিবিদেরা কখনো যায়নি। আমরা মানুষের গল্প শুনতাম। সে জায়গাগুলোতে আমরা বারবার ফিরে গিয়েছি। তাদের গ্রহণযোগ্যতা পেতে আমাদের বছরের পর বছর সময় লেগেছে – সর্বোপরি আমরা ছিলাম শূদ্র ও প্রাক্তন শূদ্র, “অস্পৃশ্য” সম্প্রদায় – আমরা বর্ণ, অর্থনীতি ও পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জেঁকে বসা বৈষম্যের শিকার হয়েছি, এবং হয়ে যাচ্ছি।
আমি কখনোই ভুলতে পারব না আমার আদিবাসী সহকর্মী শান্তির অভিজ্ঞতাগুলোর কথা, রিপোর্ট করতে যাওয়ার পর গ্রামবাসীরা যাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছিল। জাতপাত তুলে তাঁর মুখের ওপর অবমাননাকর শব্দ ছুড়ে দিয়ে বলেছিল: ‘একজন অশিক্ষিত নারী, তুমি রিপোর্টিংয়ের কী জানো?’ প্রথমবার যখন আমরা শহরে পত্রিকা বিক্রি করতে গিয়েছিলাম, তখন মানুষ ভেবেছিল, আমরা ভিক্ষা চাইছি। “অস্পৃশ্যতার” সংস্কৃতি এখনও পুরোপুরি যায়নি। ঘরে, কর্মস্থলে এখনও আমরা এর শিকার হই।
নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে খবর লহরিয়ার রিপোর্ট করা প্রথম ঘটনাগুলোর একটি ছিল মণিপুরের দুর্গম বনাঞ্চলের এক আদিবাসী নারীকে নিয়ে। এই অঞ্চলে সাধারণ মানুষের জীবন প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত হয় বহিরাগত, ডাকাত ও পুলিশের কবলে পড়ে। সেখানে পুলিশের হাতে এক আদিবাসী নারীর নির্মম নির্যাতনের কথা আমাদের কানে এসেছিল। সেই নারী, ডাকাতদের খাবার দিয়েছে– এমন সন্দেহে চলে এই নির্যাতন।
ঘটনাটি আমরা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছিলাম এবং এই বর্বরতার জন্য পুলিশের জবাব চেয়েছিলাম। সেখানকার মূলধারার রিপোর্টারেরা আমাদের সাবধান করেছিল। কেউ কেউ হুমকিও দিয়েছে, কিন্তু আমরা পিছপা হইনি। আমার মতে, এই প্রতিবেদনটিই নারীবাদী পত্রিকা হিসেবে আমাদের সুনাম সুদৃঢ় করেছে এবং আসন্নের পূর্বাভাস দিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক সেই নারীরা অস্ত্র হিসেবে কলম তুলে নিয়েছিলেন গভীরে চেপে বসা একটি বৈষম্যমূলক সমাজের কাছে নির্ভীকভাবে নানা প্রশ্নের জবাব দাবি করার জন্য, যা ছিল এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ।
রয়টার্স ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজমের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো মতামতই সমাজের প্রতিফলন ঘটাতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সেটি বার্তাকক্ষের ভেতরে প্রতিফলিত না হয়। আমি যা বলার চেষ্টা করছি, তা হলো: এই ২০২২ সালে এসেও গণমাধ্যমের মালিকানা এবং সম্পাদকীয় নিয়ন্ত্রণ আছে অল্প কিছু ক্ষমতাবান মানুষের হাতেই। সেখানে খুব বেশি মানুষের এখতিয়ার নেই। ২০১৯ সালে, অক্সফাম ও নিউজলন্ড্রির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঐতিহ্যগতভাবে শ্রেণিবিভক্ত সমাজ ব্যবস্থার চূড়ায় থাকা ব্রাহ্মণেরা [ভারতের] জনসংখ্যার মাত্র চার শতাংশ, অথচ বার্তাকক্ষগুলোতে তাদের অংশগ্রহণের হার ৮৮%। দেশের ৮০ ভাগই যেখানে “পিছিয়ে পড়া” বর্ণের দলিত ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী, সেখানে সংবাদমাধ্যমে তাঁদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।
এসব প্রতিবেদনের ফলাফলগুলো বেশ ভয়াবহ। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোতে একজনও দলিত বা “পিছিয়ে পড়া” অন্য বর্ণের আদিবাসী উপস্থাপক নেই। আমাদের ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশিত মোট নিবন্ধের মাত্র পাঁচ শতাংশ দলিত/বহুজন/আদিবাসী সাংবাদিকদের লেখা, আর হিন্দি পত্রিকায় এই হার মাত্র ১০%, যা কিছুটা হলেও ভালো। তবে এগুলো নিছকই প্রতিনিধিত্ব বা বৈচিত্র্যের পরিসংখ্যান। বার্তাকক্ষগুলোতে দলিত/বহুজন/আদিবাসী সাংবাদিকদের এমন অনেক অনেক অভিজ্ঞতা আছে– যেগুলো আমরা এখনও জানি না।
আমরা মনে করি, শুরু থেকেই এই প্রশ্ন ভারতীয় গণমাধ্যমকে জর্জরিত করেছে। আমাদের গল্প, জীবন ও কাজ সম্পর্কে লেখার দায়িত্ব কাদের হাতে থাকবে? আমি মনে করি, খবর লহরিয়া এই রকমের একটি মিডিয়া জগতের দীর্ঘস্থায়ী ফুলবতী গাছ, যার কাছে আমাদের সবচেয়ে মৌলিক — এমনকি অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা – প্রশ্নেরও উত্তর আছে।
আমরা কি সাংবাদিকতার এমন একটি পরিসর কল্পনা করতে পারি না, যেখানে আমাদের গল্পগুলোর অনুসন্ধানকারী এবং যাদের নিয়ে লেখা হচ্ছে– এই দুইয়ের মধ্যে বৈষম্য এতো বেশি নয়? খবর লহরিয়াতে আমরা কি ঠিক এ কাজটিই সফলভাবে করিনি? অবশ্যই এই পরিবর্তন রাতারাতি হয়নি। আমাদের জন্য এটি ছিল দুই দশকব্যাপী যাত্রা। তবে আমরা আমাদের শুরুর দিকের মূলনীতিগুলোতে বিশ্বাস করতাম এবং সেগুলোতে অটল ছিলাম। গ্রামীণ প্রান্তিক নারীরাই লিখবে, আমাদের এবং আমাদের কমিউনিটির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো নিয়ে। বর্ণবৈষম্যে জর্জরিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমরা যেভাবে দিনমজুরের কাজ করেছি, সেভাবে সহজে কলম চালানোও শিখে নিতে পারেন গ্রামীণ প্রান্তিক নারীরা।
আমরা কী নিয়ে লিখি? আমরা রাস্তাঘাট ও নর্দমার অবস্থা নিয়ে লিখি। বিদ্যুৎ, পানি ও কর্মসংস্থানের অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয় হিসেবে আপনার কাছে এগুলোকে খুব সাদামাটা মনে হতে পারে, কিন্তু আমাদের জন্য এসব লেখাই পার্থক্য গড়ে দেয় যে, গ্রামগুলো রাস্তা পাবে কি না, দলিত পাড়াগুলো পরিষ্কার করা হবে কি না, পরিবারের পানির চাহিদা পূরণে নারীদের জন্য হস্তচালিত পাম্প সারাই করা হবে কি না। আমরা অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে অবদান রাখা নারীদের মজুরিবিহীন, অদৃশ্য শ্রমের কথা লিখি… আমরা সেই দলিত নারীর কথা লিখি, যার অভিযোগ পুলিশ গ্রহণ করবে না, কারণ অপরাধী একজন ক্ষমতাসীন, উচ্চবর্ণের পুরুষ।
এই বিষয়গুলো তুলে ধরা আমাদের জন্য খুবই জরুরী, কারণ এগুলোই আমাদের জীবনের বাস্তবতা। প্রান্তিক নারীরা যখন তাদের জন্য নির্ধারিত গণ্ডি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন, তখন সমাজ সেটি ভালোভাবে নেয় না। তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে আমাদের ওপর। আমরা কী পোষাক পরি, কী খাই, কোথায় থাকি, কীভাবে কথা বলি – সবকিছু তারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে, সমালোচনা করে, শাস্তি দেয়। সবার জন্য ন্যায্য, ন্যায়সঙ্গত, নিরপেক্ষ সমাজ: যা আমরা সামনে আনতে চাই, তা নিয়েও সমাজ ভীত।
আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি, যেখানে ইস্যু যাই হোক না কেন, সবার আগে নারীকেই দোষারোপ করা হয়। আমরা সেই প্রপঞ্চ বদলে দিয়েছি। নারীদের – বিশেষ করে প্রান্তিক নারীদের – মতপ্রকাশ ও অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে আমরা বিকশিত হয়েছি। এই যাত্রাপথে আমরা অনেক ক্ষমতাধর অপরাধীদের নাম প্রকাশ করেছি এবং ধিক্কার জানিয়েছি৷
একথা বলা যায় না যে, এই যুদ্ধে আমরা জিতেছি। সেখান থেকে আমরা অনেক দূরে আছি। সমাজে আমাদের যা কিছু মোকাবিলা করতে হয়, সেগুলো আমরা প্রতিদিন আমাদের পরিবারগুলোর মধ্যেও মোকাবিলা করি। প্রতিদিন নিরলসভাবে আমাদের কণ্ঠ তোলার জন্য যে কী মাশুল দিতে হয়, তা কেবল আমরাই জানি।
আশা করি এখানে উপস্থিত দর্শকশ্রোতাদের কেউ কেউ হয়তো এবছর মুক্তি পাওয়া তথ্যচিত্র “রাইটিং উইথ ফায়ার” দেখেছেন। এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে আমার তিন সহযোদ্ধার জীবনের গল্প। যদিও সেটি তাদের পুরো জীবনের সামান্য একটি অংশমাত্র। সেখানে হয়তো আপনারা দেখেছেন, সমাজের দিক থেকে প্রান্তিক করে রাখা নারীদের কিভাবে বৈষম্য ও সমাজচ্যুতির হুমকি সামাল দিতে হচ্ছে। হয়তো দেখেছেন কিভাবে তাঁরা ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, সেই ক্ষমতা যা-ই হোক না কেন। হয়তো দেখেছেন তাদের স্বপ্ন আর আশা নিয়ে কথা বলতে।