পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণের পর নাজুক অবস্থায় থাকা ভবনটি পরিদর্শন করেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
চার দশক আগে নির্মিত এই ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে সংস্কারে কোনো অনিয়ম ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি হচ্ছে। বিধ্বস্ত ভবনটি নিয়ে কী করা হবে, সেই করণীয় নির্ধারণে আরেকটি কমিটি হয়েছে।
রাজউকের পরিচালক (জোন-৫) মো. হামিদুল ইসলাম বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর এই তথ্য জানিয়েছেন।
বুধবার সরকারি ছুটি থাকায় ভবনটি সংক্রান্ত নথিপত্র এখনও দেখতে পাননি রাজউক কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার সকালে ভবনটি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়ার আশা করছেন হামিদুল।
নর্থ সাউথ রোডে বিআরটিসির ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল থেকে শ খানেক গজ দক্ষিণে সাত তলা ‘ক্যাফে কুইন’ ভবন। বাণিজ্যিক এই ভবনের বিভিন্ন তলায় স্যানিটারি সামগ্রীর দোকান ও গুদাম, নানা রকম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল। উপরে ছিল আবাসিক ফ্ল্যাটও।
মঙ্গলবার বিকালে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে ভবনটিতে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় ভবন থেকে ইট-কনক্রিট থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামগ্রী, এমনকি মানুষও ছুটে এসে পড়ে সড়কে। ভবনটির নিচ তলা ও দ্বিতীয় তলার ফ্লোর ধসে পড়ে।
ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের কারণ এখনও জানা যায়নি। তিন দিনের মধ্যে ঢাকার দুটি ভবনে একই ধরনের বিস্ফোরণে নাশকতার সন্দেহ করছেন কেউ কেউ। তবে তেমন কোনো আলামত মেলেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পর ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। বুধবার দ্বিতীয় দিনের অভিযানে ধ্বংসস্তূপের নিচে মেলে আরও দুটি লাশ। এখনও একজন নিখোঁজ আছেন জেনে তাকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কাজ চলছে।
সাততলা এই বাণিজ্যিক ভবনটির মালিক ছিলেন রেজাউর রহমান। এক সময় তিনি ক্যাফে কুইন নামে একটি রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন এই ভবনে, সেজন্য স্থানীয়রা ভবনটি ক্যাফে কুইন বিল্ডিং নামে চেনে।
রেজাউর অনেক দিন আগে মারা গেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর এখন তার তিন ছেলে এর মালিক। মশিউর রহমান নামে এক ছেলে দেশের বাইরে থাকেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ওয়াহিদুর রহমান এবং সবার ছোট মতিউর রহমান ঢাকায় থাকেন। তারাই ভবনের দেখাশোনা করেন।
এদিকে রাতে পরিদর্শনের পর কারিগরি কমিটির আহ্বায়ক রাজউক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “ভবনটি ১৯৮০ সালের পর হতে পারে। তবে নথিপত্র ঘেঁটে আমরা এটা পাইনি। এটা যেহেতু অনেক পুরনো ভবন, তখন রাজউকও ছিল না।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নকশা বহির্ভূতভাবে ভবনটি তৈরি করা হলে ‘অবশ্যই’ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভবন নিয়ম মেনে করা হয়েছে কি না, তা বিভিন্ন সময় তদারকি হয়েছে বলে দাবি করেন রাজউক পরিচালক হামিদুল।
ভবন ধসের মৃত্যুর ঘটনায় এরই মধ্যে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে পুলিশ। ভবনের দুই মালিক ওয়াহিদুর ও মতিউরকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মো.জাফর হোসেন বলেন, রাজউক, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করছে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
“তারা যদি প্রতিবেদন দেয় ভবনটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল, ভবন মালিকদের গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে যে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, সেই মামলাটিতে ধারা পরিবর্তন হবে।”