যমুনার ক্যানেল পার হয়েই প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর, ২০২২, ১:২৪ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যমুনা নদীর ছোট-বড় ক্যানেল পার হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আশা করছে চরের শিশুরা। একেকটি নৌকায় ১২ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী উঠে। সবার গন্তব্য শিক্ষালয়। তাদের বিদ্যালয়ের আশা-যাওয়ার একমাত্র ভরসা নৌকা। এমনকি বাড়ি থেকে বের হতে একটু দেরি হলেই সেদিন আর যাওয়া হয় না স্কুলে। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের দুর্গম যমুনার শাখা নদীর পাশেই বোয়ালকান্দি দাখিল মাদ্রাসা এবং চরবোয়ালকান্দি ও রেহাইমৌশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। এই সকল বিদ্যালয় যমুনার ভাঙনে বিপর্যস্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থীকে যমুনার ক্যানেল পার হয়ে যেতে হয় স্কুল ও মাদ্রাসায়। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ রয়েছে টাঙ্গাইল জেলার ইছাপাশা এলাকার। তারা সবাই বোয়ালকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ছিল।
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালের দিকে রাক্ষসী যমুনায় ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ায় তারা ওই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরও একই অবস্থায় বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে। সূত্রে জানা যায়, বোয়ালকান্দি একটি বিশাল বড় গ্রাম ছিল। প্রতি বছর যমুনায় ভাঙতে ভাঙতে সিংহভাগ চলে গেছে যমুনার পেটে। যার কারণে নদীতে বিভিন্ন ক্যানেল সৃষ্টি হয়েছে। ক্যানেলে পানি থাকায় শিক্ষার্থীদের নৌকায় করে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। চরবোয়ালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী আসলাম, রোজিনা, মাইসা, মুন্নি ও আসিফ জানায়, প্রতিদিন সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় একমাত্র ভরসা নৌকা। এরপর স্কুলের পোশাক পরে বই-খাতা নিয়ে নৌকায় করে বিদ্যালয়ে যাওয়া। কোনো সময় মাঝি না পেয়ে নিজেদেরই নৌকা চালাতে হয়। এ জন্য অনেক দিন ক্লাস ধরতে পারি না। বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে রোদ ও বৃষ্টি উপক্ষা করে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয় আমাদের। স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবক জানান, উপজেলার সীমান্তবর্তী সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের যমুনার পূর্বপারসহ উপজেলার প্রায় ২৫টি বিদ্যালয়ের শিশুদের যাতায়াতের এমন করুণ অবস্থা কয়েক যুগ ধরেই। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে ৩ থেকে ৪টা বড় নৌকার ব্যবস্থা করলে বর্ষার শুরু থেকে পানি শুকানো পর্যন্ত এই শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার অনেক সুবিধা হবে। সদিয়া চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সিরাজ জানান, চরাঞ্চলের নৌকায় প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচল করে। বর্ষার পানি কমে গেলেও চরাঞ্চলের ক্যানেলে পানি থাকে। বছরের প্রায় ৫ মাস শিশু শিক্ষার্থীসহ সবাইকে নৌকায় চলাচল করতে হয়। চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, উপজেলার সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান যমুনার চরে অবস্থিত। যার ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নৌকায় পারাপার হতে হয়। আমরা এরইমধ্যে উপজেলার ১৬টি প্রতিষ্ঠানে নৌকা দিয়েছি। যে প্রতিষ্ঠানে নৌকা নেই সেই সকল প্রতিষ্ঠানেও নৌকার ব্যবস্থা করা হবে।