বন্দী জীবন শুরু হলো ১৭ মার্চ থেকে। আমার বাবা পেশায় শিক্ষক। বাসায় বাবাকেই শিক্ষক হিসেবে পেলাম। আমার ছোট ভাই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা পড়ালেখার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ দুই ভাই বাবার সঙ্গে একসঙ্গে আদায় করতাম। সেটা ছিল এক অন্য অনুভূতি।
এখন তো অনেকটাই বন্দী। বাইরে বের হতে না পারা ছিল অনেক কষ্টের। স্কুলের মাঠ, বন্ধু, শিক্ষক—সবার কথা অনেক মনে পড়ত। ফোনে কথা হয় বন্ধুদের সঙ্গে এবং বন্ধুদের সংসদ বাংলা টিভি চ্যানেলের ক্লাস হওয়ার কথাটি জানাতাম। সেই সঙ্গে পড়ালেখার পাশাপাশি বিনোদন হিসেবে প্রথম আলোর পড়ালেখার পাতা, বিভিন্ন খবর, বিভিন্ন ঘরোয়া খেলা এই বন্দী জীবনে অনেক বিনোদন দিত।
ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে ৩টি নতুন শব্দ জেনেছি—লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন। সেই সঙ্গে বিশ্বের খবর জানার টেলিভিশন ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ রাখছি।
একজন স্কাউট সদস্য হিসেবে অন্য স্কাউট সদস্যদের সঙ্গে দিনাজপুর বড় ময়দানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযানে অংশ নিই। একদিন ফেসবুকে দেখলাম, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক খেটে খাওয়া মানুষ কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না। এ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ‘সেভ আর্থ সেভ বাংলাদেশ’ নামে একটি উদ্যোগের মাধ্যমে কয়েকজন বন্ধু মিলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি জানাই। অনেকে আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। আমরা তা দিয়েই ১০ পরিবারকে ১০ কেজি পরিমাণ চাল, ডাল, তেল, লবণ, সাবান দিয়ে সহযোগিতা করি।
বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে ‘পরিবেশ বাঁচাও বাংলাদেশর বাঁচাও’ শিরোনাম একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকার জন্য বন্ধুরা মিলে ম্যাসেঞ্জারের কাজ করছিলাম এই বন্দী জীবনের মধ্যে থেকেই।
এর মধ্যে পরিবার উদ্বিগ্ন থাকে আমার মাকে নিয়ে। আমার মা পেশায় একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। তিনি এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে চাকরি করেন। তিনি প্রতিদিন অনেক অসুস্থ মানুষের সেবার কাজ করেন। তাই তাঁকে নিয়ে আমাদের অনেক দুশ্চিন্তা হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা আমার মাকে যেন সুস্থ রাখেন এবং এ সময় অনেক অসুস্থ মানুষের সেবা করতে পারেন।
সর্বোপরি আমাদের এ ভাইরাস মোকাবিলায় সচেতন হতে হবে, বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না, সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে ২০ সেকেন্ড ধরে, তাহলেই এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। সৃষ্টিকর্তার নিকট এই দোয়া করি, মহান সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদের সবাইকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করুক।
* শিক্ষার্থী, দিনাজপুর জিলা স্কুল