বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। মাছ এবং ভাত এ দেশের মানুষের কাছে অধিক জনপ্রিয় দুটি নাম। সে কারণেই আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি হিসেবে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে মাছে-ভাতে বাঙালি নামটি আমাদের ঐতিহ্য বহন করে। বর্তমান সময়ে মাছ চাষ বেশ লাভজনক ও সহজ আয়ের অন্যতম উৎস। মূলত এটিও ভুল নয়। হরেক রকম প্রতিকূলতার মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে হয়। স্বল্প পুঁজি ও অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণে মাছের উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে বেকারত্ব দূরীকরণে মাছ চাষ বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। এই সময়ে বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছর বেকারত্ব চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার দরুন এ সংখ্যক বেকারত্ব দূরীকরণে রাষ্ট্রকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর তাই বেকারত্বের এমন সংকটময় অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে দেশের তরুণ সমাজের এমন কিছু কাজ করা দরকার, যা দ্বারা একদিকে আত্মকর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে। মৎস্য চাষ হতে পারে আত্মকর্মসংস্থানের সেই মাধ্যম।
আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মৎস্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এর পাশাপাশি পরিবারের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত মাছ বাজারজাতকরণের মাধ্যমেও প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। তবে মাছ চাষ করার পূর্বশর্ত হলো, প্রথমেই উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি, ডোবা-খাল-বিল অথবা ছোট-বড় পুকুর মাছ চাষ করার জন্য বেশ উপযোগী। আর এ রকম ডোবা-নালা-খাল-বিলের সংখ্যা আমাদের এই বাংলাদেশে শহরের তুলনায় গ্রামেই বেশি। সে কারণে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে মাছ চাষ অধিক সুবিধাজনক। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে এসব খাল-বিল ও পুকুরে পানি ভর্তি থাকে এবং ফসলের জমিতে পানি জমে যায়, যা মাছ চাষের জন্য অন্যতম সহায়ক।
আমাদের দেশে মাছ চাষের ক্ষেত্রে শ্রম ও অর্থ যা ব্যয় হয়, তার চেয়ে অধিক পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। এ ছাড়া মাছ চাষ বেকারত্ব দূরীকরণের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে বেশ গ্রহণযোগ্য। মূলত মাছ চাষের মাধ্যমে আমরা যে ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকি সেগুলো হলো- আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন। জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ মৎস্য চাষে আরও অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
অনেকে পড়াশোনা শেষ করে সার্টিফিকেট অর্জনের মধ্য দিয়ে বেকার হয়ে বসে আছে। বেকারত্বকে হতাশার কারণ হিসেবে চিহ্নিত না করে আত্মকর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে হতাশাকে বলি দেওয়ার সময় এসেছে। সে ক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থান হিসেবে ব্যক্তিজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে মৎস্য চাষ।
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষিত বেকারদের চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে। সেই ঋণ গ্রহণ করে এরই মধ্যে অনেকে সফল হয়েছেন। আরও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে দেশকে বেকারমুক্ত করা গেলেই প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান পুরোপুরি সার্থক হবে।
শিক্ষার্থী, প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী কলেজ, লক্ষ্মীপুর