পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বিশ্বমানের কার্পেট তৈরি হচ্ছে। এসব কার্পেট বিক্রি হচ্ছে আড়ং, অঞ্জন’সসহ বিভিন্ন নামীদামি ব্রান্ডে। দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও বিভিন্ন পর্যটন এলাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। ঢাকায় কার্পেট কারখানায় কাজ করে এলাকায় সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন তেঁতুলিয়ার সদর ইউনিয়নের পানিহাকা গ্রামের সাইদুল ইসলাম। মাসে তার গড় আয় হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা।
কারখানা ঘুরে দেখা যায়, রংবেরংয়ের উল আর সুতা দিয়ে কার্পেট তৈরি করছেন কারিগররা। কারিগরদের মধ্যে অর্ধেকই নারী। এসব নারীরা স্বামীর ঘর সংসার ঠিক রেখে পরিবারে আর্থিক সাপোর্ট দিতে উল আর সুতায় বুনছেন উন্নতমানের কার্পেট। কার্পেটের পাশাপাশি তৈরি করছেন ফ্লোরমেট, ওয়ালম্যাট, প্রেসম্যাট, পাপোস, কুসন কভার, কলম দানি, কলেজ ব্যাগ ও মোবাইল ব্যাগ।
এ কাজ করে তাদের দিনে আয় হচ্ছে ৪শ থেকে ৫শ টাকা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীও কাজ করছেন এ কারখানায়। তারা পড়ালেখার পাশাপাশি কার্পেট তৈরির কাজ শিখে হয়ে উঠেছেন কারিগর। মাস শেষে তারাও আয় করছেন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। মান ও ফিট হিসেবে একেকটি কার্পেট বিক্রি হচ্ছে পাঁচশত থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কারিগররা জানান, তারা প্রতিদিন গড়ে ৫শ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। যেহেতু প্রোডাকশন ভিত্তিক কাজ, তাই আকার ভেদে কার্পেট তৈরি করতে সময় লাগে। যেমন দুই বাই তিন ফিটের কার্পেট তৈরি করতে সময় লাগে একদিন, তিন বাই পাঁচ ফিট কার্পেটের দুই দিন, চার বাই পাঁচ ফিট কার্পেট তিন দিন ও পাঁচ বাই সাত ফিটের কার্পেট তৈরি করতে ৪ দিন সময় লাগে। এসব সাইজ হিসেবে কার্পেট তৈরি করে তারা ৩৫০ টাকা থেকে ২১০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।
নারী কারিগর পারভীন আক্তার বলেন, আমার তিন মেয়ে। পরিবারে স্বামী-স্ত্রী মিলে পাঁচজন আছি। আমার পরিবারে আমার স্বামী কৃষি কাজ করে। তার উপার্জনে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলছিলো না। সেজন্য আমি এখানে এসে কাজ শিখে রোজগার করছি। উপার্জনের টাকা দিয়ে বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছি। একই কথা বলেন সকিনা খাতুন, মৌসুমী আক্তারসহ অন্য নারী কারিগররা।
অপর কারিগর আজিবদ্দিন জানান, আমি গাজীপুরে গার্মেন্টে কাজ করতাম। এখানে সাইদুল ভাইয়ের কারখানায় পরিবার নিয়ে কাজ করছি। এখানে কাজ করে খুব ভালো লাগছে। অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি পড়ালেখার পাশাপাশি এখানে এসে কাজ করি। উপার্জনের টাকা দিয়ে পড়ালেখার খরচ চালাতে পারছি। পাশাপাশি আমার পরিবারকেও সাহায্য করতে পারছি।
উদ্যোক্তা সাইদুল জানায়, বছর সাতেক আগে রাজধানী ঢাকায় কার্পেট কারখানায় কাজ করতাম। সেখানে দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজের এলাকায় কারখানা গড়ার স্বপ্ন তৈরি হয়। তাই চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে নিজের উপার্জন আর এনজিও থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে দুটি কার্পেট মেশিন কিনে কাজ শুরু করি। পরে এলাকার কয়েকজনকে কাজ শিখিয়ে ‘রংরেরং এন্ড হ্যান্ডিক্রাফটস’ নামের একটি কারখানা গড়ে তুলি।
৫ বছরের কঠোর পরিশ্রমে এখন তার কারখানায় ৪০টি মেশিনে কাজ করছেন ৪০ জন কারিগর। এসব কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন তার সহধর্মিনী রুমি আক্তার।
তিনি আরও বলেন, আমার কারখানায় তৈরি প্রতিটি পণ্যই উন্নতমানের। দেশের বিভিন্ন এলাকাসহ বিদেশ থেকেও আমার কারখানার কার্পেটের অর্ডার আসছে। ইচ্ছে আছে কারখানাটা বড় করার। সরকার উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক প্রণোদনা কিংবা স্বল্প সুদে ঋণ ব্যবস্থা করে দিলে কারখানার পরিধি বাড়াতে পারবো। এলাকার শিক্ষিত বেকারদের কাজ শিখিয়ে তাদের কর্মসংস্থান তৈরি করার ইচ্ছে আছে।
সাইদুলের সহধর্মিনী রুমি আক্তার বলেন, আমার স্বামী ঢাকা থেকে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসে এই কারখানা তৈরি করেছেন। এলাকার অনেক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণ পেলে কারখানা আরও বড় করতে পারবো।