দেশে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে নিত্যপণ্যের দামের আকাশছোঁয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। এতে দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ভোক্তাদের। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে গরিব মানুষ। দরিদ্রদের কেউ কেউ সপ্তাহে একবার মাছ জোগাড় করতে পারলেও সারা মাসে দেখা পাচ্ছে না মাংসের। তবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে ডাল, ডিম, আলু-এসব পণ্যেরও দাম বৃদ্ধি।
তুলনামূলক কম দামের এসব পণ্য থেকে পুষ্টির জোগান পায় স্বল্প আয়ের মানুষ। আর যারা কম দামের পাঙাশ, তেলাপিয়া কিনে মাছের প্রয়োজন মেটায়, তাদেরও এখন মাথায় হাত। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর কোনোভাবেই স্বাভাবিক থাকছে না বাজার। চালের দাম বেড়েছে কেজিতে কমপক্ষে ১০ টাকা, ডাল ও আলুতে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫-৭ টাকা। ডিমের বাজারে চলছে ভয়াবহ নৈরাজ্য। ডিমের দাম বাড়ছে প্রতিদিনই। প্রশ্ন হলো, এ অবস্থায় অসহায় দরিদ্র ক্রেতাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে কীভাবে?
লক্ষণীয়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর যে হারে পরিবহণ ব্যয় বেড়েছে, নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে সে অনুপাতে বহুগুণ বেশি। বোঝাই যাচ্ছে, এ নিয়ে বাজারে চলছে কারসাজি। দুঃখজনক হলো, অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুললেও বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশের কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এ ব্যাপারে সরকার নীরব কেন? অসহায় ক্রেতারা এখন অনেক জরুরি পণ্য না কিনেই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। এদিকে গণপরিবহণ সেক্টরেও চলছে ভয়াবহ নৈরাজ্য। পরিবহণ শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে। বেশি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। যাত্রীদের অভিযোগ, ন্যায্য ভাড়া দিতে চাইলে হুমকি দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়; কখনো কখনো বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। যারা অতি মুনাফা করতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত কঠোর শাস্তি দিতে হবে। দরিদ্র মানুষের সুরক্ষার জন্য সামাজিক নিরাপত্তার পরিধি ও সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিরত থাকবে সরকার, এটাই প্রত্যাশা।