মামুনুর রশীদ নোমানী :
রাত কেটে যায় ।শুরু হয় সকাল।দুপুর বিকেল আবার রাত। এভাবেই চলছে। ঘরে ভাত নাই আতশবাজি পটকা ফুটানোর প্রতিযোগীতা। আমাদেরই এসব সম্ভব। কে শুনে কার কথা। সকালে অনলাইন জগতে ঘুরে বেড়াতেই চোখ আটকে গেল একটি সংবাদে। সংবাদটি হলো মেট্রোরেল আজ ১ জানুয়ারী বন্ধ।
কারন কি?
কারন হলো থার্টি-ফাস্ট উদযাপনে উড়ানো ফানুস মেট্রোরেলের লাইনে ও বৈদ্যুতিক তারে পড়ায় আপাতত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। রোববার (১ জানুয়ারি) সকালে আগারগাঁও স্টেশন থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও ছেড়ে যায়নি কোনো ট্রেন। বন্ধ রয়েছে টিকিট বিক্রি।
এ ব্যাপারে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, ম্যানুয়ালি এই ফানুস একটা একটা করে পরিষ্কার করতে হবে। এটা শেষ না করা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে না। দুর্ঘটনা এড়াতেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
আমরা আনন্দে আত্মহারা। আমাদের দুর্ভোগ আমরা সৃষ্টি করি। সুতরং দুর্ভোগ আমাদেরই পোহাতে হবে।
ফানুস যখন আগুন:
ফানুস পড়ে ঢাকার লালবাগ-সদরঘাটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীতে ফানুস উড়ানো ও আতশবাজির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ডিএমপি। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শনিবার সন্ধ্যা পর থেকে নগরবাসী ফানুস ও আতশবাজি দিয়ে উল্লাসে মেতে উঠে।
সংকট নিয়েই বছর শুরু :
রিজার্ভ-মূল্যস্ফীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ
সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে, চাপ বাড়বে ডলারে, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা, নতুন কর্মসংস্থানে আসবে না প্রত্যাশিত গতি * কৃষি উৎপাদন ও রেমিট্যান্স বাড়ার সম্ভাবনা।
বৈশ্বিক মন্দা ও দেশীয় পরিস্থিতিতে নতুন বছরে দেশের অর্থনীতিকে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ আসবে বৈদেশিক খাতে।
ডলার সংকট চলমান থাকবে, এর বিপরীতে টাকার আরও অবমূল্যায়ন হবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। এর পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতিতে চাপ বাড়তে পারে। আমদানি কমায় শিল্প খাতে সংকট আরও প্রকট হবে।
শেয়ার বাজার :
শেয়ারবাজারে ইউএফএস নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি ১৫৮ কোটি টাকা নিয়ে দুবাই পালিয়েছে এমডি।আর্থিক লেনদেন বন্ধের নির্দেশ * আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে-মুখপাত্র, বিএসইসি ।
শেয়ারবাজারে চার মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) নামের একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
এই টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীর। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। ২০১৮ সাল থেকে তহবিল সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে চক্রটি।
অর্থনীতি ও এলসি :
করোনার পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারির শেষদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে পুরো পরিস্থিতি পালটে যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাসসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম হুহু করে বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ যেহেতু আমদানিনির্ভর দেশ, এ কারণে দেশের বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। একই সঙ্গে বাড়ে আমদানি ব্যয়ও। এর বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমে যায়। যদিও বছর শেষে কিছুটা বেড়েছে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ে। ফলে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হয় সরকার। কমে যায় খাদ্য ও শিল্পসহ বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি।
এলসি খোলা প্রায় অর্ধেক কমে যায় আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে। এর প্রভাবে আগামী দিনে আমদানি আরও কমতে পারে। এতে দেশে আমদানি পণ্যের সংকট দেখা দিয়ে এগুলোর দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলাও কমেছে। এর প্রভাবে এই খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গার্মেন্টসহ রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা হয় ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে।
কল্পনাতীতভাবে বেড়েছে পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম। আর যায় কোথায়! হু হু করে সব জিনিসের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। বলা হচ্ছে, এ মূল্যস্ফীতি আমদানিজনিত কারণে। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। অতএব আমাদের বাজারও চড়া। চড়া সবকিছুই। চাল, ডাল, নুন, তেল, শাকসবজি, তরিতরকারি ইত্যাদির চড়া দাম ছিল সারা বছর। মাছ-মাংস, দুধ-ডিম, মুরগি-খাসি সবকিছুতেই লেগেছে মূল্যস্ফীতির ছোঁয়া।
বিশ্বে ‘ভীষণ মন্দা’ সামনে। ২০২৩ সালে সারা বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পাবে। মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এ অবস্থায় আমাদের কী হতে পারে? আমাদের সম্পর্কেও ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। আমরা এখন বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিশ্বের যে ভাগ্য, আমাদেরও সেই ভাগ্য। সহসা মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, তেলের দাম কমবে, গ্যাসের দাম কমবে, ডলার সংকট কাটবে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে-এমন ধারণা করা যায় না। তবে খাদ্যে এখনো আমরা ভালো আছি-এটি একটি আশার খবর। সরকার খাদ্য নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ নজর দিলে ২০২৩ সালে অন্তত স্বস্তিতে থাকা যাবে।
২০২৩ বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের রাজনীতি সবসময় নির্বাচনমুখী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের শুরুতেই। তার ২০২৩ সাল পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালে নির্বাচনকেন্দ্রিক মাঠ দখলে রাখতে আওয়ামী লীগ যেমন তৎপর ছিল ঠিক একইভাবে বিএনপিও মাঠে তাদের সরব উপস্থিতি জানান দিয়েছে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে। এ বছরে সেদিক থেকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডে আরও ব্যস্ত থাকবে। সাধারণ মানুষ এ বছরেও প্রত্যাশা করবে, নির্বাচনমুখী নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যেও দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকবে।
সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, রাজনৈতিক হানাহানি, সংঘাত, লড়াই, সহিংসতা চায় না দেশের মানুষ। সবার প্রত্যাশা সমুন্নত থাকুক মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনা। নারীর প্রতি আরও মানবিক হোক সমাজ।
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ২০২২ সালে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে অনেকখানি। এই উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের সমৃদ্ধির সোপান আরও উঁচুতে উঠবে, এমনটাই চায় সবাই।
ভোরে কুয়াশার ভাঁজ খুলে সূর্যের ডানায় নেমে এসেছে নতুন একটি দিন। আজ ২০২৩ সালের প্রথম সূর্যোদয়। এতে আছে অন্ধকার কেটে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। আছে সাগর সেচে মানিক তুলে আনার অমিত সম্ভাবনার আশ্বাস। একরাশ নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশায় বুক বেঁধে বিশ্ববাসী জানিয়েছে অভিবাদন-‘সুস্বাগতম ২০২৩।’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সময়কালে এক নববর্ষে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়; সে এমন শান্তির নববর্ষ নয়; পাখির গান তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়। তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে; আবরণের আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অভ্যুদয় ঘটে।’