শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



বিতর্কে বিশ্ব জয় ও আজকের বাংলাদেশ
প্রকাশ: ৩০ জুলাই, ২০২২, ৩:৫৬ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

বিতর্কে বিশ্ব জয় ও আজকের বাংলাদেশ

আলী রীয়াজ :

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ (ডব্লিউইউডিসি) ২০২২ জিতেছে বাংলাদেশ। এ সাফল্যের নির্মাতা হচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল, বিশেষ করে সৌরদীপ পাল ও সাজিদ আসবাত খন্দকার। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই শিক্ষার্থী বাংলাদেশের জন্য যে সম্মান বয়ে এনেছেন, তা অভূতপূর্ব। উল্লেখ করা দরকার যে এই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দল এ বিজয় অর্জন করল।

এ অর্জন বাংলাদেশের গণমাধ্যমে যতটা গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল, ততটা পায়নি। ক্রীড়া বা অন্য ক্ষেত্রে এ ধরনের সাফল্য অর্জিত হলে যে আবেগ এবং উৎসাহ নিয়ে আলোচনা হতো, তার কিয়দংশও চোখে পড়েনি। বিজয়ী দলের সব সদস্যকে, বিশেষ করে সৌরদীপ ও সাজিদকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। একটি বিতার্কিক দলের পেছনেও অনেকেই থাকেন, এ সাফল্যে ভূমিকার জন্যও তাঁরাও অভিনন্দন প্রাপ্য।

এ বিজয় অকস্মাৎ এসেছে তা নয়, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পর্যায়ে বিতর্কচর্চার যে ধারা গড়ে উঠেছে, তারই সাফল্য বলে একে বিবেচনা করা দরকার। এ বিজয় এ চর্চার বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করলে তার সাফল্য কেবল একটি প্রতিযোগিতার বিজয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিতর্কচর্চা দীর্ঘদিন ধরেই চললেও এখন তা আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতর্ক ক্লাব গড়ে উঠছে, শিক্ষার্থীরা তাতে অংশ নিচ্ছেন। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এগুলো নিঃসন্দেহে ইতিবাচক বিষয়।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এসব আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে চর্চা এবং শিল্প হিসেবে বিতর্কের মর্মবাণী প্রসারিত হচ্ছে কি না। কেননা বিতর্ক যেকোনো বিদ্যায়তনে সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম হিসেবে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতেই পারে। সেটি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বিতর্ক অন্য যেকোনো সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের চেয়ে যেখানে আলাদা তা হচ্ছে এটি অংশগ্রহণকারীদের মানস গঠনের ক্ষেত্রে যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি তার সামাজিক ভূমিকাও আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে বিতর্ক ক্লাবের বিকাশ ও প্রতিযোগিতার বিস্তারের পাশাপাশি এ সামাজিক ভূমিকা এবং বিতর্কচর্চার মর্মবাণী উপলব্ধি করার বিষয়টি বিবেচনায় না নিলে এর প্রভাব হবে সীমিত। দীর্ঘ মেয়াদে তার ফল হারিয়ে যাবে।

বিতর্কের শিক্ষা কী?
বিতর্ক হচ্ছে শিল্প। আর যেকোনো শিল্পের মতোই এর বিকাশ নির্ভর করে চর্চার ওপরে। পরিশীলিত এবং নিবেদিত চর্চা যেকোনো শিল্পের বিকাশের অত্যাবশ্যকীয় শর্ত, বিতর্ক ব্যতিক্রম নয়। ফলে যেকোনো বিদ্যায়তনে যখনই বিতর্কচর্চার কথা উঠছে, তাকে কেবল ক্লাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না, অন্যত্র প্রয়োগের সুযোগও তৈরি করতে হবে। বিতর্কচর্চা যে শিক্ষাগুলো দেয়, সেগুলোকে শ্রেণিকক্ষে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে চর্চার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

বিতর্কের সেই শিক্ষাগুলো কী? প্রথম ও মৌলিক শিক্ষা হচ্ছে সমতার ধারণা। যেকোনো বিতর্কের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা যে পক্ষই অবলম্বন করুন না কেন, তাঁরা যে একই সমতলে দাঁড়িয়ে কথা বলেন, সেটাকে কেবল দেখার বিষয় বলে বিবেচনা করা যাবে না। উপলব্ধি করতে হবে যে প্রত্যেকেই সমান মর্যাদার জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। সমতার এ ধারণার আরেকটি দিক হচ্ছে প্রতিপক্ষকে সমান বলে বিবেচনা করা।

বিতর্কের বিভিন্ন ধরন বা স্টাইল আছে। যেমন পার্লামেন্টারি ধরন, যার মধ্যে ব্রিটিশ পার্লেমেন্টারি ফরম্যাট, অক্সফোর্ড ফরম্যাট, লিংকন, ডগলাস ফরম্যাট, পাবলিক পলিসি ডিবেটিং ফরম্যাট। কিন্তু ফরম্যাটের এসব ভিন্নতা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষকে সমানভাবে বিবেচনার কোনো ব্যত্যয় নেই। কারণ হচ্ছে বিতর্কে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনায় না নিয়ে তাঁদের মতামতকে সমমর্যাদায় দাঁড় করিয়ে তাঁর যুক্তিকে অনুধাবন করে তাকে খণ্ডনের চেষ্টা করা।

বিতর্ক হচ্ছে যুক্তি, তর্ক এবং তথ্যের সমন্বয়। বিষয়ের উপস্থাপনার জন্য আমাদের কেবল আবেগ নয়, দরকার হয় যুক্তির। উপস্থাপনার ক্ষেত্রে প্যাশন বা আবেগের দিক থাকলেও তা এ তিনের সমন্বয়কে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। সাফল্যের জন্য বিতার্কিকদের যেসব দক্ষতা বা স্কিল অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়, বিশেষ করে তাঁদের উপস্থাপনার জন্য, তার একটি হচ্ছে রেটরিকের তিন উপাদান ব্যবহার করা—এথোস, পাথোস ও লোগোস।

এথোস হচ্ছে নৈতিক আবেদন, পাথোস হচ্ছে আবেগের আবেদন এবং লোগোস হচ্ছে যুক্তির আবেদন। এগুলোর যথাযথ সমন্বয় হচ্ছে সাফল্যের চাবিকাঠি। লক্ষণীয় যে আমি এর সমন্বয়ের কথা বলেছি। এখানেই কলহের সঙ্গে তার পার্থক্য। কলহ আবেগের বিষয়, বিতর্ক আবেগের বিষয় নয়। কলহ হচ্ছে অসহিষ্ণুতার প্রকাশ, কিন্তু বিতর্ক হচ্ছে তার বিপরীত—সহনশীলতার প্রকাশ। এটি কেবল একটি বিতর্কের প্রশ্ন নয়, চর্চা হিসেবে, শিল্প হিসেবেই বিতর্কের শিক্ষা।

আনুষ্ঠানিক বিতর্কের এমন ধরন আছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের দলবদলের মাধ্যমে তাঁদের ভিন্ন ভিন্ন যুক্তি তুলে ধরতে হয়, এতে করে তাঁরা বিপরীত যুক্তিগুলো সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। সফল বিতার্কিক প্রথমেই তাঁর প্রতিপক্ষের যুক্তিগুলো কী সেটা বোঝার চেষ্টা করেন, যাতে করে আগে থেকেই সেগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করা যায়।

বিতর্কে যাঁরা অংশ নেন এবং যাঁরা শ্রোতা-দর্শক, তাঁরা ভিন্ন যুক্তিটি অনুধাবন করতে পারেন। যে কারণে বিতার্কিকের কাজ হচ্ছে কোনো বিষয়ে বিতর্কের সময়ে তাঁর নিজের ব্যক্তিগত অভিমতকে পাশে ঠেলে রাখা, এমনকি যখন তিনি তাঁর পছন্দের বিষয়ের পক্ষেও কথা বলছেন। নৈর্ব্যক্তিকভাবে বিষয়কে তুলে ধরতে না পারলে তার আবেদন সমর্থকদের বাইরে পৌঁছাতে পারে না।

বিতর্কের কৌশল বা বিতার্কিকদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা গোড়াতেই যা বলেন তা আমাদের স্মরণ করা দরকার—কোনো অবস্থাতেই তথ্য বা প্রমাণকে বদলে দেওয়া বা মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না; কোনো অবস্থাতেই ফ্যাক্টস (প্রকৃত ঘটনা) বা অবভিয়াস ট্রুথকে (সুস্পষ্ট সত্য) অস্বীকার করা যাবে না। এটি অবশ্যই সততার জন্য দরকার, কিন্তু এর একটি শিক্ষাও আছে, তা হচ্ছে জবাবদিহির শিক্ষা। বিতর্কচর্চার মধ্য দিয়ে এ শিক্ষাকে ধারণ করতে হবে, জীবনাচরণে তার ব্যবহার করতে হবে।

গণতন্ত্র ও বিতর্ক
এ কথা বহুবার বহুভাবেই বলা হয়েছে যে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য বিতর্ক জরুরি বিষয়। যে সমাজে বিতর্কের ধারা নেই, সেই সমাজে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। কিন্তু বিতর্কের ধারা মানে কেবল বিদ্যায়তনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিতর্কচর্চা নয়। এর অর্থ হচ্ছে সমাজে বিতর্কের পরিবেশ থাকা, সহিষ্ণুতা থাকা, বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকা।

বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিতর্কচর্চার ধারা যখন বিকশিত হচ্ছে, তখন সমাজে আমরা তার বিপরীত ধারাই দেখতে পাই। রাষ্ট্র ও সমাজ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে; যুক্তিবাদিতার বদলে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে আবেগের বাহুল্য, অন্যের যুক্তিকে গ্রহণ করা তো দূরে থাক, শুনতেও আগ্রহী হচ্ছি না। রাষ্ট্রক্ষমতায় যাঁরা আছেন, তাঁরা ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল নন; যেসব আইন তৈরি হয়েছে তা ভিন্নমতকে অপরাধে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁদের ভেতরেও অনেকের প্রবণতা হচ্ছে তাঁদের বক্তব্যকে চূড়ান্ত বলে প্রমাণিত করা।

বিতর্ক মানুষকে চিন্তাশীল করে, দায়িত্ববান করে। তাহলে যখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এত বিতর্ক প্রতিযোগিতা হচ্ছে, বিতর্কের সংগঠন গড়ে উঠেছে, তখন সমাজের ভেতরে এসব গুণ ক্রমাগতভাবে কেন অবসিত হচ্ছে? সে ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিতর্কের চর্চা কি কোনো ভূমিকাই পালন করতে পারছে না? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।

বিভিন্ন সময়ে বিতর্কচর্চা
বিতর্কচর্চাকে কেন এ প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হবে? অনেকেই এ প্রশ্ন তুলতে পারেন। তাঁদের জন্য এবং যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক বিতর্কচর্চার সঙ্গে যুক্ত তাঁদের বিতর্কের ইতিহাস স্মরণ করা দরকার। বিতর্ক সভা বা ডিবেটিং ক্লাবের বিকাশ হয়েছে অষ্টাদশ শতকে ব্রিটেনে। ওই শতকের মধ্য পর্যায় পর্যন্ত লন্ডনে ডিবেটিং সোসাইটির ব্যাপক প্রসার ঘটে। এ ডিবেটিং সোসাইটিগুলোর উদ্ভব ঘটেছিল জনপরিসরে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের পথ তৈরি করার জন্য।

এর আগে পর্যন্ত যেসব আলাপ–আলোচনার জায়গা ছিল, সেগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল না, প্রচলিত যেসব প্রতিষ্ঠান ছিল সেগুলোতে প্রবেশাধিকার সীমিত ছিল বিভিন্নভাবে। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ইতিহাসের অধ্যাপক ডোনা টি এন্ড্রু দেখান যে ১৭৭০ সাল নাগাদ লন্ডনে এ ধরনের ডিবেটিং সোসাইটির ব্যাপক বিস্তার ঘটে। কিন্তু এসব বিতর্ক সভা বা ডিবেটিং ক্লাবে যে সবার সমান প্রবেশাধিকার ছিল, তা মনে করার কারণ নেই।

এসব বিতর্ক সভা ঊনবিংশ শতাব্দী নাগাদ হ্রাস পায়। ইউরোপে, বিশেষত ব্রিটেনে এসব বিতর্ক সভার উদ্ভব ও বিকাশের পেছনে এনলাইটেনমেন্ট যুগের প্রভাব ছিল। জনপরিসরে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকারের অনুপস্থিতি কার্যত গোটা ইউরোপের ক্ষেত্রেই সমভাবে কার্যকর ছিল। জার্মান দার্শনিক য়ুর্গেন হাবারমাস তাঁর দ্য স্ট্রাকচারাল ট্রান্সফরমেশন অব দ্য পাবলিক স্ফেয়ার গ্রন্থে জনপরিসরের ধারণা উপহার দেওয়ার সময় দেখান যে জনপরিসরের বিকাশ এবং সেখানে উন্মুক্ত বিতর্কের সঙ্গে যুক্ত আছে বুর্জোয়া মধ্যবিত্তের বিকাশের ইতিহাস।

ঔপনিবেশিক ভারতে বিতর্ক সভার উদ্ভব ঘটে ঊনবিংশ শতাব্দীতে। যোগেশ চন্দ্র বাদলের লেখা বাংলার নব্য সংস্কৃতি গ্রন্থে জানা যাচ্ছে যে কলকাতার ‘হিন্দু কলেজে’ হেনরি ডিরোজিও যোগদানের পরে যে একাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটাই হচ্ছে ‘নব্য শিক্ষিত ছাত্রদের প্রথম বিতর্ক সভা’। তিনি অবশ্য এ–ও বলছেন যে ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ অ্যাসোসিয়েশনকে ‘আধুনিক কালের বিতর্ক সভার মতো বিবেচনা করিলে ভুল করা হবে’।

কলকাতা স্কুল সোসাইটির পঞ্চম রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে ‘শিক্ষার্থীরা তাঁদের বন্ধুদের মধ্যে এমন সব সংগঠন গড়ে তোলেন, যার কোনো কোনোটিতে তাঁরা বিতর্ক করেন, সাহিত্য বিষয়ে তাঁদের নিজেদের রচনা পড়েন; অন্যগুলোতে তাঁরা ইংরেজি বই পড়েন এবং সেগুলোর বাংলা অনুবাদ করেন।’ ঊনবিংশ শতাব্দীতে ভারতের মুসলিম সমাজের ভেতরে আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন এবং সামাজিক বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়, তার অন্যতম বাহন ছিল বিভিন্ন ধরনের সাহিত্যিক-সামজিক সংগঠন বা আঞ্জুমান। ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি অবশ্য প্রচলিত অর্থে বিতর্ক সভা নয়, কিন্তু এ সংগঠনের বৈঠকে যে ধরনের আলোচনা হয়েছে, সেগুলোর ভেতরে সমাজে বিরাজমান বিতর্কের প্রতিফলন দেখা গেছে।

আজকের বাংলাদেশের যে সীমানা, তার মধ্যে আমরা বিতর্কের আরেকটি ধরন দেখতে পাই যা প্রচলিত বিতর্ক সভাগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কিন্তু প্রকৃত অর্থে সেগুলো বিতর্ক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় মাওলানা ও মৌলভিদের মধ্যে প্রকাশ্যে ধর্ম বিষয়ে বিতর্কের অনুষ্ঠান হতো, এগুলোকে বলা হতো ‘বাহাস’।

রফিউদ্দিন আহমেদ তাঁর গ্রন্থ দ্য বেঙ্গল মুসলিমস ১৯৭১-১৯০৬: এ কোয়েস্ট ফর আইডেন্টিটিতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাহাস—যেগুলো ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকের বছরগুলোতে গ্রামবাংলায় প্রায়শই আয়োজিত হতো, সেগুলো ছিল সবার জন্যে উন্মুক্ত বৈঠক, যেখানে ধর্মতত্ত্বের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক হতো’। রফিউদ্দিন আহমেদ ওই সব বিতর্কের মান বিষয়ে খুব ইতিবাচক মন্তব্য করেননি, কিন্তু এগুলো যে গ্রামবাংলার সমাজে এবং বিশেষ করে মুসলিম সমাজে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল, সে কথা তিনি জোর দিয়ে বলেছেন।

বিতর্কের মর্মবাণীর বিস্তার জরুরি
বিতর্কচর্চার দীর্ঘ ইতিহাস এবং কালপঞ্জি উপস্থাপন আমার লক্ষ্য নয়। আমার লক্ষ্য হচ্ছে এদিকে মনোযোগ আকর্ষণ করা যে ইউরোপে এবং অন্যত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতর্ক সভাগুলোর প্রতিষ্ঠার এবং বিকাশের পেছনে আছে বিদ্যায়তনের বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিতর্কের ঐতিহ্য। এ উপমহাদেশে তার একধরনের সূচনা বিদ্যায়তনের মধ্যেই।

কিন্তু তার বাইরেও ভিন্ন ভিন্ন ধারা ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে কেবল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিদ্যায়তনে চর্চা বিতর্কের মূল বিষয়ে পরিণত হওয়া এর দীর্ঘ ঐতিহ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, এর মর্মবাণীর জন্যও যথাযথ নয়। ফলে আজ যাঁরা বিতর্কের চর্চা করছেন, তাঁদের কাছে প্রত্যাশা যে তাঁরা কেবল বিতর্কের মঞ্চেই এ চর্চাকে সীমিত রাখবেন না। বিতর্কের যে মর্মবাণী, সেটিকে সবার কাছে তুলে ধরা এবং তাকে সমাজে ও রাষ্ট্রে সম্প্রসারিত করা দরকার।

দুজন তরুণ বিতার্কিক বাংলাদেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে এনেছেন, এখন আমাদের কাজ হচ্ছে বিতর্কের মর্মবাণী সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া।

(প্রথম আলো, ৩০ জুলাই ২০২২)




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া