গত এক দশকে ভয়াবহ দুর্নীতির ফলে ক্ষুদ্র একটি গ্রুপের মানুষকে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। পর্যবেক্ষক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্যমতে, এই সময়ে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে বিপুল অর্থের পাচার। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের মূল্য বিষয়ক ইনভয়েসের মাধ্যমে বছরে ৮২৭ কোটি ডলার পাচার হয়েছে । গত এক থেকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের এই আমানত ইঙ্গিত দেয় যে, অর্থ বিদেশে গিয়েছে। ২০২১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৫৫.১ ভাগ। বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১০ লাখ ফ্রাঁঙ্ক।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছে আগামী তিন বছরে বাংলাদেশ ৪৫০ কোটি ডলার বেইল আউট প্যাকেজের জন্য অনুরোধ করেছে। এই সহায়তা করতে আইএমএফ আগ্রহী। এটা নিশ্চিত করে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পর এ অঞ্চলে তৃতীয় দেশ বাংলাদেশ, যারা সাম্প্রতিক সময়ে আইএমএফের দরজায় কড়া নেড়েছে।
পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় যখন ফলাও করে রিপোর্ট প্রচার হয়েছে, তখন আসন্ন সংকটের বিষয়ে বার বার (বাংলাদেশের) সরকার অস্বীকার করায় কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশ পরিস্থিতি রাডারের নীচে ঢাকা পড়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বছরের পর বছর ধরে দেশের অর্থনৈতিক সফলতার কথা বলে এসেছেন। সম্প্রতি তারা আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতু উদ্বোধন উদ্যাপন করেছে। সরকার দাবি করছে, তারা স্বল্প সুদে অনিয়ন্ত্রিত ঋণ হিসেবে ‘বাজেট সাপোর্টের’ জন্য অনুরোধ করেছে। এর ফলে তারা এই অর্থকে নিজেদের ইচ্ছেমাফিক ব্যবহার করবে। এটি হলো একটি আগাম ব্যবস্থা, যাতে অর্থনীতি কোনো সমস্যায় না পড়ে। বিষয়টি সত্য নয়।
বিশাল আর্থিক দুরবস্থা
আর্থিক সমর্থন খোঁজার জন্য ঢাকা শুধু আইএমএফের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এ ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের কাছে একশ’ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে। শুধু এ বছরে প্রায় ২.৫ থেকে তিন বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে বেশ কিছু বহুজাতিক এজেন্সি ও দাতা দেশের কাছে। এর মধ্যে আছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি বা জাইকা। উপরন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাট, বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার সীমিত করা, জ্বালানি রেশনিং করার মতো চলমান কৃচ্ছ্রতাসাধনের মতো পদক্ষেপগুলো বিবেচনায় নিলেও তা এই সংকটের বড় কোনো ক্ষতি করতে পারেনি এখনো। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকুচিত হবে, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতি, প্রতিদিন স্থানীয় মুদ্রার মান পড়ে যাওয়া এবং তীব্র জ্বালানি সংকট নিয়ে সরকারের দাবি সন্দেহজনক। যেহেতু আইএমএফ এবং অন্য বহুপক্ষীয় এজেন্সিগুলো বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের দরজা উন্মুক্ত করছে, সেহেতু দেশটি কীভাবে এখানে এসেছে তা বোঝাও অপরিহার্য।
এই চলার পথই বলতে পারে সমাধান কোথায়?
অন্য সবার মতো ঢাকাও বিশ্বাস করতে পারে যে, কোভিড-১৯ মহামারির ফলে এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে অর্থনীতির গতি ধীর হয়েছে। বর্তমান দুর্দশার জন্য এই পরিস্থিতি দায়ী। কিন্তু তাতে কাহিনীর মাত্র একটি অংশ বর্ণনা করা হয়। কিন্তু পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বহুপক্ষীয় বিভিন্ন এজেন্সির কাছ থেকে বাংলাদেশ ঋণ নিয়েছে কমপক্ষে ১৭০ কোটি ডলার। ২০২১ সালের অক্টোবর নাগাদ বাজেট সাপোর্ট হিসেবে উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে কমপক্ষে ৩০০ কোটি ডলার ধার নিয়েছে। এই অর্থ নেয়া হয়েছে মহামারির বিরূপ প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। রিপোর্ট করা হয়েছে যে, ২০১৯-২০২০ এবং ২০২১-২০২২ সালে বিভিন্ন বহুপক্ষীয় এজেন্সির কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট হিসেবে বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে ৫৮০ কোটি ডলার। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সাপোর্ট হিসেবে আইএমএফের কাছ থেকে ঢাকা গ্রহণ করেছে ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পেয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিনামূল্যে ৬ কোটি ১০ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। সরকার বিভিন্ন রকম প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাব করেছে। তারা বার বার দাবি করেছে যে, অর্থনীতি শুধু ঘুরেই দাঁড়ায় নি, একই সঙ্গে তা নাটকীয়ভাবে পুনরুদ্ধারের রোডে উঠে গেছে। বিশ্বব্যাংক থেকেও এই আশাবাদের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। এই তথ্যগুলো দুটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসে। বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া পর্যাপ্ত সাপোর্টকে ব্যবহার করে গত বছরেই মহামারি থেকে আর্থিক অবনমনকে সমাধান করা উচিত ছিল। ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দাবি করা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার ঋণ নিচ্ছে।
তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকটের কারণ কি?
বাহ্যিক ফ্যাক্টরগুলো ছাড়াও সরকারের নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ চারটি ক্ষেত্র বর্তমান সংকটের উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোতে উচ্চ খরচ। একে প্রায়ই মেগা প্রকল্প হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ব্যাপক বিস্তৃত ঋণখেলাপির কারণে ব্যাংকিং খাতে সংকট। জ্বালানি খাতে সম্পদের অপচয়। মূলধন বা টাকার উড়াল দেয়া।
টেকসই নয়, এমন অবকাঠামো খাতে ব্যয়
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে শেখ হাসিনার সরকার বিভিন্ন দেশ ও বহুপক্ষীয় এজেন্সির অর্থায়নে বেশ কিছু বড় অবকাঠামো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে কয়েকটি হলো- পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা সিটি মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলি টানেল। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর অন্যতম পদ্মা সেতু। এতে খরচ পড়েছে প্রায় ৩৬০ কোটি ডলার। কিন্তু ২০০৭ সালে এর অনুমিত খরচ ধরা হয়েছিল ১১৬ কোটি ডলার। উচ্চাকাঙ্ক্ষী পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ হচ্ছে ১২৬৫ কোটি ডলার। কিন্তু এই প্রকল্প এখনো কমিশন্ড না হওয়া পর্যন্ত এর প্রকৃত খরচ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে না। মেট্রোরেল প্রকল্পের মূল অনুমিত খরচ ২১০ কোটি ডলার ফুলেফেঁপে দাঁড়িয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। পানির নিচ নিয়ে কর্ণফুলি টানেলের মূল খরচ ধরা হয়েছিল ৮০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। কিন্তু তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩ কোটি ডলারে। দুর্ভাগ্যজনক হলো- এগুলো কোনো ব্যতিক্রম নয়। এটাই ধারা। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করে যে, বিশ্বে সড়ক নির্মাণে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় বাংলাদেশে। এই অতিরিক্ত খরচের কারণ হলো সরঞ্জামাদির অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ, দুর্নীতি এবং দীর্ঘ বিলম্ব।
ঋণখেলাপি এবং ব্যাংকিং অনিয়ম
উপরন্তু ব্যাংকিং খাত কিছু সময় ধরে খবর হিসেবে আসছে। এক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনাদায়ী ঋণের কারণে ব্যাংকিং খাত পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১১১ কোটি ডলার। কিন্তু তাদের এই দাবি নিয়ে আপত্তি করে আইএমএফ। তারা বলেন, প্রকৃত পরিমাণ এই সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। সরকারি বর্তমান হিসাব নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এই বৈষম্যের একটি ব্যাখ্যা আছে। তা হলো ব্যাড লোন বা খারাপ ঋণকে সহজেই হেরফের করা যায় এবং ‘রাইট অফে’র মাধ্যমে তা লুকিয়ে রাখা যায়। খারাপ ঋণের সরকারি সংজ্ঞাকে পরিবর্তন করা যায় রেগুলেশনে। সহজ কথায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বিকশিত কিন্তু ভুল চিত্র তুলে ধরে ভুল তথ্য দেয়ার অভিযোগ আছে। এতে সুবিধা পায় দায়িত্বশীলরা এবং তাদের ঘনিষ্ঠ চক্র। দুর্নীতি পর্যবেক্ষক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বলেছে যে, ভয়াবহ রাজনৈতিক চাপ এবং কিছু বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর অবৈধ হস্তক্ষেপ ঋণখেলাপি নিরবচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধির কারণ। এটা কোনো নতুন ঘটনা নয়। যদিও বিশেষজ্ঞরা বছরের পর বছর ধরে এমন পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করে আসছেন, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণখেলাপিদের সাহায্য করার জন্য নীতি পরিবর্তন করার পরিবর্তে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি
পুরো দেশে বিদ্যুতায়িত করার সফলতা ২০২২ সালের মার্চে উদ্যাপন করেছে সরকার। তবে তা এসেছে উচ্চ মূল্যের কারণে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টস (কিউআরপিপি) নামের বেসরকারি খাত। ২০০৯ সালে বলা হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যাপকভিত্তিক সমাধান না পাওয়া যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এসব ইউনিট হলো একটি ‘স্টপগ্যাপ’ (বা আপাতত) পদক্ষেপ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এসব ইউনিট মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে। তবে তা সন্দেহজনক সুবিধা ছাড়া নয়। গত দশকে, বিদ্যুৎখাত বিপুল ভর্তুকি পেয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ৭১০ কোটি ডলার পেয়েছে। অন্যদিকে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন পেয়েছে তিনশ’ কোটি ডলার। উল্লেখ্য, এ ঘটনা ঘটেছে যখন ভোক্তাদের জন্য বিদ্যুতের ও জ্বালানির মূল্য বাড়ানো হয়েছে, তখন। উপরন্তু, ক্যাপাসিটি চার্জ প্রভিশনের মধ্যে রয়েছে, স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী, রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টস এবং কিউআরপিপি’র সঙ্গে চুক্তি। এর ফলে ওইসব কোম্পানি কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন সরবরাহ না করলেও সরকার তাদেরকে অর্থ প্রদানে বাধ্য হয়েছে। এসব কোম্পানির মালিকদের সঙ্গে যোগ রয়েছে সরকারের। যারা তাদের সুবিধার জন্য আরও সুবিধা দিচ্ছে। গত দশকে, ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ১২টি কোম্পানি পেয়েছে ৫৫০ কোটি ডলার। অধিকন্তু, সরকার ভারতের বিদ্যুৎ বিষয়ক কোম্পানি আধানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই যুক্তির কারণে তাদেরকে বছরে ৪২ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার ডলার পরিশোধ করবে বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ক্যাপাসিটি হিসেবে এই চুক্তির মেয়াদকাল ২৫ বছরের জন্য দিতে হবে ১১০১ কোটি ডলার।
অর্থ পাচার
গত এক দশকে ভয়াবহ দুর্নীতির ফলে ক্ষুদ্র একটি গ্রুপের মানুষকে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। পর্যবেক্ষক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্যমতে, এই সময়ে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে বিপুল অর্থের পাচার। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের মূল্য বিষয়ক ইনভয়েসের মাধ্যমে বছরে ৮২৭ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। গত এক থেকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের এই আমানত ইঙ্গিত দেয় যে, অর্থ বিদেশে গিয়েছে। ২০২১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৫৫.১ ভাগ। বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১০ লাখ ফ্রাঁঙ্ক।
উপসংহারে বাংলাদেশ যে অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়াবহ সংকট মোকাবিলা করছে তাতে এসব ফ্যাক্টর অবদান রাখলেও, আমি এটা বলবো না যে, এক্ষেত্রে অন্য কোনো কারণ নেই। এমনও বোঝাচ্ছি না যে, তা পারস্পরিকভাবে এক্সক্লুসিভ। এর পরিবর্তে, এই ক্ষেত্রগুলো অন্তর্নিহিতভাবে ক্ষমতাসীনদের উন্নয়ন নীতি এবং আদর্শের সঙ্গে যুক্ত। তাই, বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট, যা আইএমএফের ‘অ্যারাইভালকে সামনে রেখে, তা শুধু মহামারি এবং ইউক্রেন সংকটের ফলে হয়নি। এর পরিবর্তে, সরকারের অর্থনৈতিক নীতি এবং গত এক দশকে একটি জবাবদিহিহীন শাসন ব্যবস্থার দ্বারা এ পথ প্রশস্ত হয়েছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত পরপর দুটি জালিয়াতির জাতীয় নির্বাচন, কোনো চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স ছাড়াই একটি ডি-ফ্যাক্টো একদলীয় ব্যবস্থা তৈরি করেছে। যেহেতু আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক ঋণদাতারা বর্তমান সরকারের জন্য আরও ঋণ নিয়ে আলোচনা করছে, তখন দাতাদের বোঝা উচিত- ঢাকাকে বেশি অর্থ দিলেই সংকটের অবসান হবে না। একটি বেইল আউট শুধু একটি ব্যান্ডএইড হিসেবে কাজ করবে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সংকটের রক্তপাত বন্ধ করতে পারে। কিন্তু এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, তা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া সংকটের কোনো ম্যাজিক্যাল সমাধান দেবে। যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে গভীরভাবে আবদ্ধ।
(লেখক আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্রের একজন অনাবাসী সিনিয়র ফেলো। তার এই লেখাটি অনলাইন আটলান্টিক কাউন্সিলে প্রকাশিত হয় ৫ই আগস্ট। সেখান থেকে অনুবাদ)