পদ্মা সেতু দেখতে এলেন বরিশাল নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০০ নারী-পুরুষপদ্মা সেতু দেখতে এলেন বরিশাল নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০০ নারী-পুরুষ
এতদিন বিভিন্ন জনের কাছে পদ্মা সেতুর গল্প শুনেছেন। কেউ কেউ সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে পদ্মা সেতুর ছবি দেখেছেন। তবে সবারই ইচ্ছে ছিল, স্বপ্নের সেতু দেখার। কিন্তু যাতায়াত ও অর্থের অভাবে কাছ থেকে পদ্মা সেতু দেখা হয়নি। অবশেষে তাদের সেই ইচ্ছে পূরণ হলো।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে একসঙ্গে পদ্মা সেতু দেখতে এলেন বরিশাল নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০০ নারী-পুরুষ। পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন একেক ওয়ার্ডের ৩০০ নারী-পুরুষ পদ্মা সেতু দেখতে আসবেন। ৩০টি ওয়ার্ডের সর্বমোট ১০ হাজার নারী-পুরুষ পদ্মা সেতু দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।
তাদেরকে পদ্মা সেতু দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের খবর অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রথমদিন সকাল ৯টায় নগরীর গড়িয়ার পাড় থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০০ নারী-পুরুষ এবং শিশু-কিশোরকে নিয়ে ছয়টি বাস পদ্মা সেতুর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পদ্মা সেতু দেখার পর দুপুরের খাবার খেয়ে বিকালে নগরীতে ফেরার কথা তাদের।
পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়া নারী-পুরুষের উদ্দেশে গড়িয়ার পাড় এলাকায় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন প্রতিমন্ত্রী। বক্তব্য শেষে ফিতা কেটে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। প্রতিদিন একটি ওয়ার্ডের ৩০০ নারী-পুরুষ ছয়টি বাসে পদ্মা সেতু দেখতে যাবেন। এরপর আগ্রহী বাড়লে বাস বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
শুধু নগরী নয়, সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মানুষজনকেও পদ্মা সেতু দেখতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহামুদুল হক খান মামুন।
প্রথমবার পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়া ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, ‘আমার পরিবারের পক্ষে টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিমন্ত্রী সুযোগ করে দেওয়ায় কাছ থেকে পদ্মা সেতু দেখবো। বাসে উঠেই খুব ভালো লাগছে। এতদিন বিভিন্ন জনের কাছে পদ্মা সেতুর গল্প শুনেছি। মাঝেমধ্যে টেলিভিশনে সেতুর ছবি দেখেছি। কিন্তু পদ্মা সেতু কাছ থেকে দেখতে পাবো, কখনও ভাবিনি। আমার স্বপ্নপূরণ হলো।’
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা আছমা বেগম বলেন, ‘অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ফেরিতে করে বরিশাল থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। ওপারে যেতে সময় বেশি লাগায় ফেরিতেই স্বামী মারা গেছেন। ওই সময় পদ্মা সেতু থাকলে স্বামীকে কম সময়ে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানো যেতো। হয়তো বেঁচে যেতেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেরা ঢাকায় লেখাপড়া করে। ফেরির যুগে তাদের আসতে-যেতে অনেক সময় লাগতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রতি সপ্তাহে ছেলেরা আমাকে দেখতে আসে। তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বরিশালে আসে তারা। একদিন থেকে পরদিন ঢাকায় চলে যায়। এমন সুযোগ করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আজীবন দোয়া করবো।’
ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৭০ বছরের হামিদ আলী বলেন, ‘এতদিনেও পদ্মা সেতু দেখা হয়নি। তবে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কিছুদিন আগে প্রতিমন্ত্রী এক জনসভায় পদ্মা সেতু দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তা এত দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন, আশা করিনি। কারণ অনেক জনপ্রতিনিধি প্রতিশ্রুতি দিলে ভুলে যান। তবে আমাদের প্রতিমন্ত্রী কথা রেখেছেন। এজন্য ধন্যবাদ। একইসঙ্গে পদ্মা সেতু করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’
গড়িয়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী তাসলিমা বেগম বলেন, ‘তিন বেলায় খাবার জোগাতেই হিমশিম খাই। এর মধ্যে পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়া আমার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। কোনও দিন চিন্তাও করি নাই, দেখতে যাবো। কিছুদিন আগে প্রতিমন্ত্রীর লোকজন এসে জানতে চাইলেন, পদ্মা সেতু দেখতে যাবো কিনা। সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলাম যাবো। আজ পদ্মা সেতু দেখতে যাচ্ছি। আমার কাছে এখনও অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।’
এমন উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশ করেছি। এসব সভা-সমাবেশে সবার কাছে জানতে চেয়েছি, বাস্তবে পদ্মা সেতু দেখেছেন কিনা? বেশিরভাগ লোকজন বলেছিলেন, আর্থিক সংকট ও যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় দেখতে যেতে পারেননি। এরপর বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাদের পদ্মা সেতু দেখাতে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। প্রতিশ্রুতি পূরণ ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দরিদ্র মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য এই উদ্যোগ নিই। পর্যায়ক্রমে সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ১০ হাজার মানুষকে পদ্মা সেতু দেখাতে নিয়ে যাওয়া হবে। যেতে আগ্রহী বাড়লে পরে বাস বাড়ানো হবে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শুধু পদ্মা সেতু নয়, সরকারের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এখন পর্যন্ত আমার এলাকার যেসব লোকজন দেখেনি, তাদের বাস্তবে দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’