মামুনুর রশীদ নোমানী : খালাম্মা ডাক দিতেই বলতো এই “মা ” বলে ডাকবি। কথা বলতেন সব সময় আদর করে। তাকে আমার মত সকলেই ভালোবাসতেন। তার হাতের রান্না খায়নি তা সংখ্যায় অনেক কম। যার কথা বলছি তিনি হলেন আমাদের প্রিয় রেবা খালাম্মা। এই তো সেদিন চলে গেলেন কিছু না বলে। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত আমার যোগাযোগ ছিল। হয়ত আমি তার জন্য কিছু করতে পারি নাই তবে সম্পর্ক ছিল অটুট।
এই মহা মানুষটির কথা বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয় সাংবাদিক বেলায়েত বাবলুর কথা। রেবা খালাম্মার আদরের ছোট পুত্র। বাবলু ভাই ও আমি দৈনিক শাহনামায় এক সাথে কাজ করি। সেই সুবাদে তাদের বাসায় আসা যাওয়া। বাবলু ভাই দৈনিক শাহনামা ছেড়ে দেয়ার পরেও তাদের বাসায় আমাদের যাতায়াত অব্যাহত ছিলো। তাদের পরিবারের সাথে মিশে গেছি। বাসায় না গেলে খালাম্মা, খালুজান,বাবলু ভাই ও লাবলু রাগারাগি করতো। বাসায় গেলে খালাম্মা ঢাক চিৎকার দিয়ে বলতো
দেখ দেখ কে এসেছে আমার নোমান এসেছে। বাসায় কি আছে তাড়াতাড়ি দেও। দেখার পরে বলতো নোমান তুই শুকিয়ে গেছো। পেটে হাত দিয়ে বলতো তোর পেটে কিছু নাই। যা দিছে খাও। পেট ভরে খাও।
২০০০ সাল থেকে এই ২০২০ পর্যন্ত অনেক স্মৃতি অনেক কথা। এই লিখনীতে সব বলা সম্ভব নয়। তার পেটে জন্ম না হলেও তিনি মায়ের মত ছায়া হয়ে থাকতেন। তার সাথে অনেক সমস্যার কথা বলে সমাধান পেয়েছি। আমার একটা দুর্দিনে এমন সাহস দিয়েছিলেন তা ভোলা যাবেনা। আমি কৃতজ্ঞ তার প্রতি। কোন দিন বাসায় না গেলে কল করতো। আসার পছন্দ অনুযায়ী ভর্তা শাক শবজি রান্না করতো। মাছ খাওয়াতো জোড় করে।
গোস্ত রান্না হলে জানিয়ে দিত। মুত্যুর আগের দিন খবর পাই তিনি বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমি শোনার সাথে সাথে দৌড়ে চলে যাই হাসপাতালে। শেষ দেখা হলো কিন্তু কোন কথা হয়নি। তিনি আমারমত কারো সাথে কথা বলেন নি। কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছেন স্ট্রোক করে। পরের দিন ১৮ মে’২০২০ তারিখ, সোমবার বেলা ১২টার দিকে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়না বলে চলে গেলেন( ইন্নালিল্লাহে ওইন্নাইলাইহে রাজেউন)। আপনার সাথে দেখা হবে পরপারে।
দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। ভালো থাকবেন যেখানেই আছেন। খালাম্মা আপনার স্মৃতিগুলো মনে পড়ার সাথে কান্না চলে আসে। যে কান্নার মর্ম কেউ বুঝবেনা। কারো বোঝার সক্ষমতাও নেই। আপনি ছিলেন আমাদের ছায়া। ছিলেন পরামর্শদাতা। আল্লাহ তায়ালার কাছে সবিনয় বিনীত আবেদন হে আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহে কবিরা,গুনাগে সগিরা মাফ করে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন। আমিন।