নিজ গুণে ক্ষমা করবেন, মামুনুর রশীদের উদ্দেশে শাহনাজ খুশি
প্রকাশ: ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১১:২৮ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
‘এখন কিছু জানার দরকার হয় না, মামুন ভাই। কিছু না জানা মানুষগুলো জানা মানুষকে হিংসাত্মক প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলছে। সে প্রতিপক্ষের জিঘাংসা কত নোংরা হতে পারে, তা আজ দুই দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে। যা বাকরুদ্ধ করে দেয়!’ কথাগুলো ফেসবুকে লিখেছেন অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। সম্প্রতি অভিনয়শিল্পী মামুনুর রশীদ মন্তব্য করেন, ‘রুচির দুর্ভিক্ষ পড়েছে দেশ। যে কারণে কুরুচি, কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থান। এমনকি এসব কারণেই সেখান থেকে হিরো আলমের মতো একটা লোকের উত্থান হয়েছে…।’ এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে আলোচনা ও সমালোচনা তৈরি হয়।
মামুনুর রশীদের উদ্দেশে শাহনাজ খুশি আরও লিখেছেন, ‘মামুন ভাই, আপনার হাতে তৈরি এ সংস্কৃতি অঙ্গন আলোকিত করা কত শিল্পী, কত না জানার জন্য, কত ভুলের জন্য আপনি সবাইকে বকেছেন, রাগ করেছেন। সে জন্য কেউ হয়তো থিয়েটারে আসেনি, অভিমান করেছে, দল ভেঙে নতুন দলও তৈরি হয়েছে, কিন্তু এই কুৎসিত এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ বিমাতাসুলভ কথা কি কখনো শুনেছেন? হলভর্তি মানুষের মুহুর্মুহু করতালি পেয়েছেন, শহীদ মিনারের পাদদেশে অসীম নীরবতায় আপনার বক্তব্য শুনেছে মানুষ, সব অসামঞ্জস্য নিয়ে সরকারের প্রতিও কত তীক্ষ্ণ বক্তব্য প্রকাশ করেছেন, কিন্তু কখনো কি এমন অসভ্য মন্তব্য শুনেছেন? শুধু রুচির নয়, বিবেকের বিকলাঙ্গতা কতটা, তা কি আর বলবার দরকার আছে?’
দেশের অভিনয় অঙ্গনে একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। সেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে দেশের সব আন্দোলনে তিনি উচ্চ স্বরে কথা বলেছেন।
এমন একজন মানুষকে নিয়ে কথা বলেত হলেও শৈল্পিক চর্চার প্রয়োজন উল্লেখ করে খুশি লিখেছেন, ‘শিল্প দিয়ে শিল্পীর প্রতিযোগিতা করা যায়। যাদের সে সঞ্চয় নাই, তারাই নীচতায় হরিলুট শুরু করে। সুন্দর কিছু শুরুর আগে কুৎসিত কিছু কালক্ষেপণ হয়, এটা নিশ্চয় তেমন সময়। বাংলাদেশের এত সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ধারক, বাহক অথবা উদাহরণ নিশ্চয় এরা হতে পারে না! যারা আপনার ব্যক্তিজীবন অতি কথ্য দিয়ে আপনাকে হেয় করতে চেয়েছে, সেটা তাদের দীনতা এবং ব্যর্থতার আক্রোশ! শিল্পী এবং শিল্পকে মোকাবিলা করতে শৈল্পিক কথা–যুক্তি–আচরণই লাগবে, এটা তারা জানে না। তাদের এ দীনতাকে ক্ষমা করবেন আপনি।’
খুশি আরও লিখেছেন, ‘ভাগ্যিস আপনি কোনো সরকারি মন্ত্রণালয়ে, টিভি চ্যানেলে বা কোনো সরকারের আনুকূল্যের প্রতিষ্ঠানে নাই এবং কোনো দিন ছিলেনও না। যদি সেটা থাকতেন, তাহলে কি বলত এই মন্তব্যকারীরা?
৭০–ঊর্ধ্ব প্রায় ৮০–র কাছাকাছি একজন নাট্যপ্রাণ মানুষ, যে তাঁর একটা জনম বিলিয়ে দিয়েছেন শিল্পের জন্য। বিনিময়ে উল্লেখ করবার মতো কিছুই নেননি কখনো! এখনো এই বয়সে তাঁকে সংসারের জন্য অভিনয় করতে হয়, লিখতে হয়, এই শিল্প থেকে কিছুই সঞ্চয় করেননি বলেই তাঁর অসুস্থতায় আমরা তাঁর শিল্পসন্তানেরা তাঁর হাত ধরে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে যাই, তাঁর তুলনা এবং মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে এ কোনো অশৈল্পিক দুর্বৃত্ত অন্ধকার! আমাদের কবে, কোন মোহে এত বিবেক এবং রুচির বিকালঙ্গতা হলো! আপনার সন্তানদের আপনি বরাবরের মতো নিজ গুণে ক্ষমা করবেন, মামুন ভাই।’
গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে মঞ্চনাটকে যুক্ত হয়েছিলেন শাহনাজ খুশি। সেখান থেকে জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে নতুন করে শিখেছেন। নম্রতা–ভদ্রতা, জীবনবোধের এসব শিক্ষা তাঁকে বদলে দিয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘থিয়েটারে যুক্ত হয়েছি, দেখেছি, এ এক শিক্ষার সাগর। সেখানে শুধু নাটক শেখানো নয়, দেশ তথা দেশের বাইরের প্রখ্যাত গুণীজনের জীবনবৃত্তান্ত, সংগ্রাম, জীবনের সৌন্দর্য নিয়ে চলেছে বিস্তর আলাপ! দিনরাতের কোনো হিসাব থাকে নাই। প্রতিমুহূর্তে গ্রহণ করেছি সে বিদ্যালয় থেকে। এসব কিছু জানতাম না কেন সে লজ্জায় নত থেকেছি। জানতে পারার গৌরবে বিনয়ী হয়েছি! জীবনের পরিমিতিবোধ শিখেছি, যে পরিমিতিবোধ সকল চরিত্র রূপায়ণে বড় বোধের জোগান দিয়েছে। বিনীত করেছে সৃষ্টির পায়ে! যা আমি জানি না, তা শেখার জন্য জানা মানুষের অপেক্ষা করেছি প্রেমের মতো করে।’