মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



“টাকা আর দালালি” দুইয়ে মিলে একাকার সাংবাদিক
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১:১০ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

“টাকা আর দালালি” দুইয়ে মিলে একাকার সাংবাদিক

সাংবাদিকতা পেশাটি “টাকা আর দলাদলি”র কাছে এভাবে জিম্মি হবে জানা ছিল না৷ একজন সাংবাদিকের হওয়ার কথা ছিল দল নিরপেক্ষ এবং দেশের কল্যাণের জন্য নিবেদিত কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো।

বাংলাদেশের সাংবাদিকরা বিশ্বে একটি বিচিত্র প্রজাতির প্রাণী। বিচিত্র প্রাণী এই কারণে বলছি যে;- এই দেশের সাংবাদিকরা পুরোদমে দু’ভাগে বিভক্ত। যেকোন ইস্যু নিয়ে এদের দু’ভাগ না হলে চলবে না। বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকাগুলো দেখুন। জাতীয়পত্রিকাগুলোর একটি পক্ষ আওয়ামীলীগের গুনগানে ব্যস্ত; আরেকপক্ষ বিএনপির গুনগানে ব্যস্ত। মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা পত্রিকাগুলো হয়তোবা সরকারের কু’নজরে নয়তোবা জনপ্রিয়তার তলানিতে।

একজন সাংবাদিকের তো নিরপেক্ষ হওয়ার কথা ছিল। আওয়ামিলীগ কিংবা বিএনপি কোন দলের পক্ষে নয় বরং প্রয়োজনে প্রতিটি দলের বিপক্ষে লেখা প্রকাশের কথা ছিল সাংবাদিকদের। আফসোস হয় বাংলাদেশের অধিকাংশ সাংবাদিকরাই এই নিরপেক্ষনীতি ভূলে গেছেন। কেন ভুলে গেলেন? কি এমন প্রভাব যেটির কারণে আজকে সাংবাদিককে মানুষ “সাংঘাতিক” হিসেবে পরিচিত করে তুলছে? জাতীয় দলের একজন সফল ক্রিকেটার যিনি এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়েই বারবার অভিযোগ তুলছেন।

১. সেবা নয়, ভিজিটর চাই
খবরের শিরোনাম দেখে চোখ কপালে উঠে যায়। হাত কাপাকাপি করে যেন নিউজটা দ্রুত পড়ি৷ ফোরজি নেটওয়ার্কও বিরক্ত মনে হয়! হ্যা, এতটাই চাটুকার শিরোনাম করে আমাদের নিউজপেপারগুলো। নিউজ লিংকে ক্লিক করার পর পুরো নিউজ পড়ে শিরোনামের সাথে মিল খোজে পাওয়া ভার।

এভাবেই সাংবাদিকগণ কিছু ভিজিটর প্রাপ্তির জন্য আমাদের ধোকা দেন৷ তাদের কর্মকান্ড দেখে মনে হয়, যেকোন মূল্যে ভিজিটর চাই। সাধারণ মানুষকে শিরোনামে ধোকা দেওয়ার মধ্যে তারা যেন আনন্দ খোজে পান; পিশাচ এক আনন্দ অথচ সেবার মান কমতির দিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

২. সাংবাদিকতার চেয়ে টাকা বড়
বাংলাদেশের সাংবাদিকরা বর্তমানে টাকামুখী নীতি গ্রহণ করেছেন। টাকার কাছে নিজেদের আত্মসম্মান বিকিয়ে দিয়ে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছেন। ফলে আমরা একটি আদর্শবান ন্যায়পরায়ণ এবং নিরপেক্ষ সাংবাদিক সমাজ পাচ্ছিনা।

অনেক সাংবাদিক আছেন, যাদের টাকা দিলে যেকোন বিষয়েই নিউজ করতে প্রস্তুত। নায়িকাদের ৮টি আম খাওয়ার ঘটনাও জাতীয় দৈনিকের পৃষ্ঠায় ছাপা হয় অথবা কোন ফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপন নিউজ আকারে চালিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাপারটি এমন নয় যে, টাকার বিনিময়ে বিজ্ঞাপন নিউজ করা পোর্টালগুলো ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান বরং স্বয়ং জাতীয় সারির পত্রিকাগুলোই এরকম করছে।

একটি নিউজ কলামে ১০ কিংবা ১২টি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন হচ্ছে। অনেলসময় বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় মূল নিউজ আড়ালে চলে যাচ্ছে। এদের মান এতটাই কমে গেছে যা অন্যান্য দেশের নিউজপোর্টালগুলো দেখলে লজ্জা লাগে। টাকার জন্য সাংবাদিকতা এতই তলানিতে চলে গেছে।

৩. রাজনৈতিক দলের কাছে জিম্মি
রাজনৈতিক দলের কাছে বাংলাদেশের সাংবাদিকগণ জিম্মি এটি নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। তবে যেটি বলার প্রয়োজন সেটি হলো, দু ধরনের জিম্মি অবস্থা বাংলাদেশে রয়েছে। প্রথমটি হলো ইচ্ছাকৃত জিম্মি অর্থাৎ নিজের উদ্দ্যেশ্য হাসিলের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে ইচ্ছাকৃত যুক্ত হওয়া।

অপরটি হলো অনিচ্ছাকৃত জিম্মি। এক্ষেত্রে কোন শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের কাছে বাধ্য হয়ে থাকতে হয়। অনিচ্ছাকৃত জিম্মির সংখ্যা বাংলাদেশে কমই রয়েছে বরং নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য সাংবাদিকদের রাজনৈতিকরণ দেখা যায়।

মূল এবং জাতীয় সারির পত্রিকাগুলোর দিকে তাকালেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যায়৷ নয়াদিগন্তের মত পত্রিকাগুলো যেমন বিএনপিপন্থী তেমনি জনকন্ঠ কিংবা ইত্তেফাকের মত পত্রিকাগুলো আওয়ামীপন্থী। টিভি চ্যানেলের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি পরিলক্ষিত। একাত্তর টিভি তো সরকারের ইশারায় চলে বলেও লোকে বলে।

সাংবাদিকরা কেন রাজনৈতিক মেরুকরণে যুক্ত হবে? একজন সাংবাদিক যদি কোন দলীয় হয় তবে তার কাছ থেকে নিরপেক্ষ সংবাদ পাওয়া অসম্ভব৷ একটি পত্রিকার মালিক কেন প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ বা বিএনপিপন্থী হবে? এটি বোধগম্য নয়। তারপরও নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয় এই কারনে যে- ভাগ্যিস এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে “সাংবাদিক লীগ” বা “সাংবাদিক দল” এর জন্ম হয়নি তবে অচিরেই জন্ম হয়েও যেতে পারে।

৪. বিদেশ নীতি (ভারত-পাকিস্তান)
বিদেশপ্রীতি বা বিদেশনীতি নিয়ে আমাদের সাংবাদিকদের জুরি বা কদরের কমতি নেই। “মাসির চেয়ে পিসির দরদ বেশি”- এই উক্তিটি বাংলাদেশি সাংবাদিকদের বেলায় প্রচুর খাটে। একটা উদাহরণ দিয়ে সেটি বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

সুশান্ত নামক এক ভারতীয় অভিনেতা আত্মহত্যা করে মৃত্যুবরণ করেছেন। সুশান্তের আত্মহত্যা নিয়ে আমাদের জাতীয় সারির পত্রিকা প্রথমআলো প্রায় ২০ এর অধিক নিউজ করেছে। সর্বনিম্ন ২০টি নিউজ কাভার করেছে আমাদের প্রথমআলোর মতো জাতীয় পত্রিকা! চোখ চড়ক গাছ! কিন্তু আমার ঠিকই বমি আসে।

পৃথিবীর আর কোন দেশের জাতীয় পত্রিকা সুশান্তকে নিয়ে এতগুলো নিউজ কাভার করেছে বলে আমাদের জানা নেই; স্বয়ং ভারতের জাতীয় পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমসও এতগুলো নিউজ কাভার করেনি। শুধুমাত্র ভিজিটরের আশায়, বিদেশনীতির কারণে একজন ব্যাক্তির আত্মহত্যায় এতগুলো নিউজ কাভার করতে পারে প্রথমআলো।

এখানেই কি শেষ? ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সামান্য উত্তাপ ছড়ালেই লেখার পর লেখা পাবলিশ করে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা। যেন যুদ্ধ বাধিয়ে দেওয়ার জন্য এরা উঠেপড়ে লাগে। ভারত পাকিস্তানের খবর ছাপতে গিয়ে দেশের অনেক বড় বড় খবরগুলোও আমাদের আড়ালে পড়ে যায়। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে উত্তাপ সারাবছরই থাকে এবং তারপরও দু’দেশের মধ্যে বানিজ্যের ঘাটতি নেই কিন্তু আমাদের সাংবাদিক ভাইরা ছড়িয়ে দেন- যুদ্ধ লেগে গেল গেল। কিছু বাড়তি ভিজিটর পেলে যেনো তাদের অন্ন জুটে আর কি!

৫. টিআরপি ধরে রাখা
টিআরপি বা টার্গেট রেটিং পয়েন্ট হচ্ছে মার্কেটিং বা এডভার্টাইজ মানদন্ড। যার যত বেশি টিআরপি, তার এডভার্টাইজ মার্কেট ভ্যালু তত বেশি। টিআরপি ঠিক করা হয় সাধারণত কোন পত্রিকা বা মিডিয়ার সার্চ ও ভিজিটর সংখ্যার উপর উপর ভিত্তি করে।

আমাদের দেশের পত্রিকাগুলো টিআরপি ধরে রাখার জন্য ভূয়া নিউজ প্রকাশ করে৷ চাটুকার সংবাদ ছেপে মানুষদের বিভ্রান্ত করে টিআরপি বাড়ায় অথচ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এটি হয়না। অন্যান্য দেশের মিডিয়া প্রয়োজনে টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দেয়। উন্নত সাংবাদিকতার সাথে আমাদের নিম্ন সাংবাদিকতার এখানেই তফাত।

আমরা সরকারকে খুশি করার জন্য যেমন চাটুকারে লিপ্ত হই তেমনি গুজব কিংবা অশ্লীল শিরোনাম ব্যবহার করে মিডিয়ার ভিজিটর বাড়াই। কেবল নিচু প্রকৃতির সাংবাদিকতার উদাহরণ এই দেশেই রয়েছে।

সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সাংবাদিকদের মধ্যে সবাই যে খারাপ ব্যাপারটি এমনও নয়। আমাদের ঢাকা স্টাফের সিইও সাহেব তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন- লাগলে না খেয়ে থাকবো তবু যেন কোন সংবাদে ভিজিটর আকর্ষণ করার জন্য দৃষ্টি দেওয়া না হয় বরং শিরোনাম অবশ্যই অর্থবহ হতে হবে। ঢাকা স্টাফ একটি এডিটরিয়াল মিডিয়া যা এখন পর্যন্ত মানুষের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছে।

আশাকরি একদিন সুস্থ সাংবাদিকতা দেখবো বাংলাদেশে।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া