শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



ক্ষুধাযুক্ত নয়, ক্ষুধামুক্ত হোক পৃথিবী
প্রকাশ: ১২ আগস্ট, ২০২২, ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

ক্ষুধাযুক্ত নয়, ক্ষুধামুক্ত হোক পৃথিবী

এম এ মাসুদ

সাধারণত প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্যের যোগান কম হলে খাদ্য সমস্যা এবং কোনও দেশে ফসলহানি ঘটলে এবং ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে তখন সেখানে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। ক্ষুধা,  ক্ষিদা,  ক্ষিদে,  খাদ্যাভাব, অন্নাভাব, আকাল যাই বলি না কেন সবই দুর্ভিক্ষের প্রতিশব্দ মাত্র।

বিশ্বে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বৈশ্বিক উষ্ণতা বা গ্রিন হাউস ইফেক্ট ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া গিয়ে পড়ছে কৃষি খাতসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর। বাড়ছে অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, শীলাবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এছাড়া, ফসলের বিভিন্ন রোগ, পঙ্গপাল ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের আক্রমণ বা ইঁদুরের উপদ্রবও ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, বিঘ্নিত হয় খাদ্য নিরাপত্তা। দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। আর সেই দুর্ভিক্ষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

সাধারণত দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে খাদ্যের অভাবকে বা অপ্রতুলতাকে দায়ী করা হলেও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ১৯৮১ সালে পোভার্টি অ্যান্ড ফেমিনস নামে গবেষণা নিবন্ধে বলেন, “মূল বিষয়টি আসলে সেরকম নয়। খাদ্য বণ্টনে বৈষম্য ও অসমতা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। ওই নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, সমাজের প্রতিটি মানুষের ‘Entitlement’ তথা কোনো দ্রব্যসামগ্রী অর্জনের সক্ষমতা রয়েছে। একজন ব্যক্তির Entitlement বেশকিছু কারণে (যোগানের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম বাস্তবায়ন, ফসলে কীটপতঙ্গের বিস্তার বা যুদ্ধের কারণে খাদ্য বণ্টনে ব্যাঘাত) পরিবর্তন হতে পারে।

সংঘাত বা যুদ্ধজনিত কারণেও যে খাদ্যাভাব ও অপুষ্টি দেখা দিতে পারে তা সংঘাতে জড়িত অঞ্চল বা দেশেও দেখা যায়। কয়েক বছর ধরে চলা যুদ্ধে বিধ্বস্ত ইয়েমেনে খাদ্য সংকটে ভুগছে দেশটির লাখ লাখ মানুষ। গত বছর অপুষ্টি ও অনাহারে মৃত প্রায় ফায়াদ সালিম নামে ৭ বছরের এক শিশুর ছবি সামনে আসার পরই কারো বুঝতে অসুবিধা হয়নি দেশটিতে খাদ্য সংকট কতটা প্রকট। রাজধানী সানায় হাসপাতালে ভর্তি ওই শিশুর ওজন ছিল ৭ কেজি! আর সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে সাদা-গোলাপী ফ্রক পরা আলুথালু চুলের একটি শিশু খাবারের প্লেট নিয়ে মাটিতে বসেছিল। যার জামাটি ছিল ভীষণ নোংরা ও মুখে ছিল আঘাতের চিহ্ন। জুতাও ছিল না পায়ে। হয়তো সে তার আপনজন হারিয়েছে, সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে দয়ায় বেঁচে থাকা ওই শিশু ক্ষুধার্ত ভেবে নিজের খাবার এক ফটোসাংবাদিককে খাওয়ার জন্য এগিয়ে দিয়েছিল। গত বছরে শিশুটির এমন মানবতার জন্য ছবিটি ছিল বেশ আলোচিত।

সে যাই হোক, করোনা মহামারির প্রাদূর্ভাবে শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়া, কর্মসংস্থান হারানোসহ নানাবিধ কারণেই বিশ্বে অনাহারের মুখে থাকা মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউক্রেন-যুদ্ধ এই সংকট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রধান ডেভিড বিসলি বলেছেন, ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ঠিকভাবে খেতে পাচ্ছেন না। তারা অনাহারের মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।

২০২২ সালের শুরুতেই অনাহারের মুখে থাকা মানুষের সংখ্যা ছিল ২৭ কোটি ৬০ লাখ। করোনার আগে সংখ্যাটা ছিল ১৩ কোটি ৫০ লাখ। করোনা ও যুদ্ধ বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষকে অনাহারের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছে।

জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, আগামী মাসগুলিতে নিরন্ন মানুষের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। পরিস্থিতি ভয়ংকর জায়গায় চলে যেতে পারে। মোট ৪৫টি দেশের পাঁচ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে এক পা দূরে দাঁড়িয়ে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের মতে, এটা রীতিমতো চিন্তার বিষয়। জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আফ্রিকার। জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, যুদ্ধ, জলবায়ুর পরিবর্তন, করোনার কারণে এত মানুষ অনাহারের মুখে দাঁড়িয়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সাপ্লাই চেন-এর উপর ভয়ংকর চাপ পড়েছে। ইউক্রেন থেকে দানাশস্য ও তেল আনা যাচ্ছে না। বিশ্বের খাদ্যশস্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শীর্ষ তালিকার দুই দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। রাশিয়া ও ইউক্রেন মিলে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ গম এবং অর্ধেক সূর্যমুখি তেলের উৎপাদক তারা। রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে সবচেয়ে বেশি পটাশ বিশ্বের অন্য দেশে যায়।

এই অবস্থায় ইউক্রেন থেকে যাতে দানাশস্য ও তেল অন্য দেশে পাঠানো যায়, তার ব্যবস্থা করা দরকার। না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। নিরন্ন মানুষের সংখ্যা এখন রকেটের গতিতে বাড়ছে। জরুরি ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা না নিলে, ইউক্রেন-যুদ্ধের প্রভাব ভয়ংকর জায়গায় যাবে।

শিল্পোন্নত দেশগুলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলেও তাদের সমস্যা নেই। খাদ্যঘাটতি থাকলেও তারা না হয় উদ্বৃত্ত শিল্পপণ্য রপ্তানি করে খাদ্য আমদানির মাধ্যমে খাদ্যের প্রয়োজন মেটাতে পারে। ঐ সমস্ত শিল্পোন্নত দেশে খাদ্য আমদানি নিয়ে কখনো কৌতুককর অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকের গোড়ার দিকে একবার সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের ঘোড়ার খাদ্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ মেট্রিকটন গম আমদানির জন্য প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এশিয়া ও আফ্রিকার ক্ষুধার্ত মানুষের খাদ্যাভাবের কথা বিবেচনা করে ঐ প্রস্তাবটি নাকচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ বা অনুন্নত দেশসমূহ! তাদের কী হবে? এসব দেশের জনসাধারণকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখতে হলে তো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ও উপযুক্ত মানের খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্য সংকটে তো দরিদ্র মানুষ ভোগে অনাহার, অপুষ্টিসহ নানান রোগব্যাধিতে। ক্ষুধা মানুষকে আগ্রাসী করে তোলে। ফলে খাদ্য সমস্যা থাকলে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা হয়ে পড়ে কঠিন। এতে সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায় ও বিঘ্নিত হয় সামাজিক শান্তি। চাহিদার তুলনায় খাদ্য উৎপাদন কম হলে খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি পায়। খাদ্য সংগ্রহ দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে দরিদ্র মানুষের। দাম বৃদ্ধি পায় খাদ্যশস্যের, বৃদ্ধি পায় সার্বিক মূল্যস্তর। দেখা দেয় মুদ্রাস্ফীতি। খাদ্য আমদানিতে টান পড়ে দুষ্প্রাপ্য বৈদেশিক মুদ্রার। ফলে আমদানি কমে শিল্পপণ্যের। উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় শ্রমিকের। সক্রিয় হয়ে ওঠে কালোবাজার ও চোরাচালানকারীরা ও বৃদ্ধি পায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ শিল্পে অনেকটা অনগ্রসর। শিল্পোন্নত দেশসমূহের মতো তারা তো আর চড়া  দামে খাদ্যশস্য আমদানি করতে পারবে না।  সুতরাং বাংলাদেশের মত কৃষিপ্রধান দেশে খাদ্যসমস্যা দূরীকরণে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন একান্ত অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে আমাদেরও নজর দিতে হবে কৃষিতেই।

সবশেষে বলা যেতে পারে, সংঘাত বা যুদ্ধ কখনো সুফল বয়ে আনে না। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রধান ডেভিড বিসলির দেওয়া তথ্যানুযায়ী ঠিকভাবে খেতে না পারা ওই ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষের দিকে তাকিয়ে হলেও ইয়েমেন, সিরিয়ায় অবসান হওয়া দরকার গৃহযুদ্ধের। শান্তি স্থাপন হোক ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে। অবসান হোক রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের। আর শান্তিময় হয়ে উঠুক গোটা পৃথিবী।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া