মামুনুর রশীদ নোমানী : আজ হয়তো আমি কবরে থাকতাম ভুল চিকিৎসার কারনে। আল্লাহর রহমতে ড. ডাঃ শাহ কেরামত আলী কাকার সঠিক চিকিৎসায় বেচেঁ যাই। ২০১৩ সালের ১৮ জুন সকালে খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। সকাল ৯টা চল্লিশ মিনিটের সময় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল করেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। জরুরী বিভাগের ডাক্তার আমাকে সিসিইউতে এডমিশনের অর্ডার প্রদান করেন। সিসিইউতে গিয়ে ভর্তি হই। সিসিইউর কর্তব্যরত ডাক্তার আঃ মান্নান আমাকে হার্টের চিকিৎসা প্রদান শুরু করে। একের পর এক ইনজেকশন তাও নাভিতে। রাতে অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। সকালে আমি বুঝতে পারি আমার ভুল চিকিৎসা হচ্ছে। এখনো কেউ জানেনি আমি শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। আলাপ করি আমার অভিভাবক অধ্যাপিকা শাহ সাজেদা আপার সাথে। তিনি পরামর্শ দিলেন তুমি ঢাকায় গিয়ে কাকা ড. ডাঃ শাহ কেরামত আলীর কাছে যাও। আমি কর করে ডিটেইলস বলবো। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ থেকে সকাল বেলা ফাইলপত্র নিয়ে পালিয়ে ঢাকা যাই। ঢাকা গিয়ে শুনলাম কাকা ঢাকার বাইরে। আসবে ৩০ জুন। আমি ঢাকায় থেকে যাই আর ব্যথার ট্যাবলেট খাই আর অপেক্ষা করি কাকা কখন আসবে। ৩০ তারিখ সকালে ফোন করা মাত্রই কাকা বললো আমি মুগদা বালুর মাঠে হাটছি তাতাতাড়ি চলে এসো। কাকাকে মাঠে দেখা পাই। দেখা মাত্রই কাকা বললো তোমার কিছু হয়নি। টেনশন করোনা। তিনি আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেলেন। সাথে নাদীমের মামা আলহাজ্ব লুৎফুর রহমান ভাই। বাসায় গিয়ে আমার বিগত দিনের চিকিৎসার কাগজপত্র দেখলেন। প্রেসার সহ অন্যান্য পর্যবেক্ষন করে আমাকে বললো এই কাগজ নিয়ে এখনই মালিবাগের পদ্মা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে গিয়ে আমার কথা বলবে। কাগজে ৩৫ পার্ছেন্ট কনছেশন করার কথা লিখে দিলেন। পরিক্ষা দুটি ছিল এ্যান্ডোসকপি আর এইচ পাইলোরী এল জিজি। আমাকে পদ্মা ডায়াগনষ্টিক থেকে বলা হলো খালি পেটে সকাল ৬ টায় আসবেন।
৩১ জুন সকালে হাজির হই পদ্মা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। যিনি এ্যান্ডোসকপি করলেন তিনি কাকার ছাত্র। ডাক্তার প্রফেসর এম এ কে খন্দকার কল করলেন কাকার কাছে। কাকা বললো এখনই রিপোর্ট দিয়ে দেও। ও আমার পুত্র। রিপোর্ট নিয়ে কাকার কাছে গেলাম তিনি বললো নোমানী আমি যা বরেছি তাই হল। পরিক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্টে আসলো আমার গ্যাষ্ট্রিক। কাকা আমাকে ৫ পদের ঔষধ দিলেন।
ঔষধের বিল হল দুইশত চল্লিশ টাকা। ৩১ জুন থেকে ঔষধ খাওয়া শুরু করলাম। আমার অসুখ ভালো হলো। এর পর প্রায়ই কাকার সাথে মোবাইলে ও ফেসবুকে যোগাযোগ হতো। পুনঃরায় কাকার কাছে ২০১৩ সালের ৩১ আগষ্ট গিয়েছি। তিনি তিন পদের ঔষধ দিলেন খেতে থাকি। পুরোপুরি শিশুর মত সুস্থ্য হয়ে গেলাম। ২০১৫ সালে কাকার কাছে বলি কাকা আমি ঠিক আছি কিনা। তিনি বিপি দেখলেন জিহবাহ দেখলেন। বললেন তুমি নোমানী কথা শুননা। কাকা প্রথমবারেই লিখে দিয়েছিলো সকালে -বিকেলে আধা ঘন্টা করে হাটবে। সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫২ মাইল হাটবে। ভাজাপোড়া খাবেনা। কাকার কথা শুনেনি তার কাছে ধরা পড়ে গেলাম। কাকা আবার লিখে দিল এসব কথা। পাশাপাশি লিখে দিল “ফলে বাড়ে বল “।
কাকা এবার দু’পদ ঔষধ লিখে দিয়ে বললো ঔষধের পাশাপাশি যা বলেছি তা ফলো করিও বেচেঁ থাকতে হলে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা গিয়ে তার কাছে যাই। বললাম কাকা শরীরটা ভালো লাগছেনা। কাকা তিন পদ ঔষধ লিখে দিলেন দাম মাত্র ষাট টাকা। ঔষধ নিয়মিত খেলাম সুস্থ্য হয়ে গেলাম। কাকার নির্দেশনা না মানার ফলে মাঝে মাঝে শরিরটা খারাপ হয়ে যায়। আবার ফলো করি ভালো হয়ে যাই। কাকা বড় মাপের একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের নিউট্রেসন বিভাগের ডিন ছিলেন। ছিলেন একাধিক হাসপাতাল ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। ড. শাহ কেরামত আলী ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ আমেরিকায় ইন্তেকাল করেন। 2023 সালের ১৯ মার্চ কাকার 5ম মৃত্যু বার্ষিকী। কাকা ভালো থাকবেন যেখানেই আছেন। আপনি থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। যতদিন বেচেঁ থাকবো আপনি থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন।