আবাসিক ভবনে আগুন: দুর্ঘটনা মোকাবিলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকা জরুরি
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৫৪ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের একটি ১২ তলা আবাসিক ভবনে রোববার সন্ধ্যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনের সূত্রপাত লিফটের শর্টসার্কিট থেকে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় ৪ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এর আগে আতঙ্কিত হয়ে ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর থেকে চারজন লাফিয়ে নিচে পড়েন, যাদের মধ্যে এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি মর্মান্তিক। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
দেশে অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। এতে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রচুর প্রাণহানিও ঘটছে। তারপরও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন হচ্ছে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত। এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ, উদ্ধার প্রক্রিয়া ও জনসচেতনতা যতটুকু থাকা দরকার, তার অধিকাংশ নেই বললেই চলে। অন্যদিকে রাজধানীর প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ মানুষের নিজস্ব বাড়ি নেই। তারা অন্যের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসাবে থাকেন। সেসব বাড়িঘরে কী ধরনের নির্মাণসামগ্রী ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা তাদের জানা থাকার কথা নয়। ফলে তারা নিজেদের অজান্তেই দুর্ঘটনার শিকার হন। এছাড়া আজকাল রেডিমেড ফ্ল্যাট কেনার চল হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় কোনো ক্রেতার পক্ষে জানা সম্ভব নয়, সেগুলোয় যথাযথ মানের নির্মাণসামগ্রী ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে কি না। আমরা মনে করি, কোনো ভবন বা স্থাপনা নির্মাণে কী ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করা যাবে, তার একটা বিধিবদ্ধ নিয়ম বা বাধ্যাধকতা থাকা উচিত। আর এ কাজটি সরকারকেই করতে হবে।
বস্তুত সরকার প্রণীত ‘বিল্ডিং কোড’ মেনে ভবন নির্মাণ, রাজউকের অনুমোদিত নকশা বাস্তবায়নে কড়াকড়ি, নির্মিত ভবনের ঝুঁকি নিরূপণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী ভবনের রেট্রোফিটিং ও একটি ‘কনটিনজেন্সি প্ল্যান’ (আকস্মিক দুর্ঘটনা মোকাবিলায় পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা) তৈরি করতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশে অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার প্রযুক্তির ব্যবহার চালু হয়েছে। বাংলাদেশেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। এছাড়া অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা এবং নিয়মিত মহড়া ও স্বেচ্ছাসেবক তৈরির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। দেশে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এ অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডসহ সম্ভাব্য সব ধরনের বিপদ ও ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে হলে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হওয়া উচিত।