শামীমা সুলতানা। কবি,প্রবন্ধকার এ পরিচয়েই তাকে জানি। বাংলা কবিতায় প্রেম-ভালোবাসা,গ্রামীন জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ,স্বদেশ প্রেম সহ সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখে চলছেন বিরামহীন। গতানুগতিক গদ্য আর ছন্দবদ্ধ লেখার বাহিরে ও বাংলা কবিতায় ভিন্ন একটি আবহ তৈরী করে পাঠক হৃদয়ে স্হান করতে সক্ষম হয়েছেন অল্প সময়ে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেই শামীমা সুলতানার লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। নিয়মিত তার কবিতার পাঠক হয়ে উঠার মাধ্যমে তার কবিতার প্রেমে সিক্ত হই। মাঝে-মধ্যে তার কবিতার সমালোচনা ও করেছি দ্বিধাহীন চিত্তে। আর সেটা করেছি একজন পাঠক,শুভাকাংঙ্খী এবং কবিতার প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণে। তাছাড়া বিরুপ সমালোচনা তো প্রশংসারই নামান্তর।
শামীমা সুলতানার গল্পের সাথে সাক্ষাত ঘটে তার প্রথম উপন্যাস “সবজ প্রেমের বিষাক্ত নির্যাস” বইটি পাঠের মধ্য দিয়ে। বইটি খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছি। নান্দনিক উপস্হাপনার ভাঁজে ভাঁজে ফুটে উঠেছে সমাজ বাস্তবতার এক নিপূণ চিত্র। পুরো বইটি পড়ে আমার মনেই হয়নি যে,গল্প লেখায় তিনি নবীন। বরং কবিতার মতো গল্প লেখায় ও তিনি সমান পারঙ্গম। গল্প লেখায় তিনি নিজেকে রপ্ত করেছেন ঈর্ষণীয় ভাবে।এটাতো চরম সত্য যে,কবিতার জটিল শরীর যিনি নিপূণ ভাবে বিনির্মাণ করতে পারেন, নিঃসন্দেহে তিনি গদ্য কিংবা গল্পের সু-উচ্চ মিণার স্পর্শ করতে পারেন অনায়সেই। কবি শামীমা সুলতানা ও সে কাজটি করেছেন দক্ষতার সাথে,অত্যন্ত সাবলীল ভাবে।
শামীমা সুলতানা তার বইয়ের প্রতিটি পরতে তার দক্ষ হাতের নিপূণ ছোঁয়ায় তুলে এনেছেন গ্রামীণ জীবনের রুঢ় বাস্তবতা,অগুণতি শিল্পীর কুঁচিকায় আঁকা পৃথিবীর অনিন্দ্য সুন্দর আমাদের মাতৃভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য,মনোরম আর নৈসর্গিক দৃশ্যের মোহনীয় বর্ননায় চমৎকৃত হবেন পাঠক।
অতি চমৎকার ভাবে লেখক তার বইয়ের মূল্যবান অনুষঙ্গ মা-বাবাকে উপস্হাপন করেছেন অকৃপন ভাবে। মা-বাবার মূল্যবোধ কিভাবে সন্তানকে প্রভাবিত করে তার চরম পরাকাষ্ঠা ‘সবুজ প্রেমের বিষাক্ত নির্যাস’ বইটি। মা-বাবার নিস্পাপ ভালোবাসা পৃথিবীর অন্য সকল কিছুর চেয়ে তুচ্ছ এ কথাটি লেখক বিভিন্ন বাস্তবতা আর উপমার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন। একজন লেখকের শক্তিমত্তার পরিচয় এখানেই।
মানুষের প্রতি মানুষের অপরিসীম হৃদয়িক ভালোবাসা,দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধের এক অনবদ্য উপস্হাপনায় পোক্ত এ বইটি। সমগ্র বইয়ের অবিচ্ছেদ্য চরিত্র কামিল আর তরিকদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে বোধ হয় পৃথিবীটা এত মোহনীয়,সুন্দর! তিথি এবং তার বাবা মায়ের আদর-স্নেহ আর আপত্য ভালোবাসায় সিক্ত তুশা ও খু্ঁজে পেল একটি দায়িত্বপূর্ণ নিবিড় সম্পর্কের অটুট বন্ধন। সীমাহীন নিষ্ঠুর পৃথিবীর বারান্দাটা কখনো স্বর্গীয় সুখের স্পর্শে আলোড়িত হয় আলোচ্য চরিত্রের মতো নিস্পাপ মানুষ গুলোর দায়িত্বপূর্ণ মায়াবী ভালোবাসায়।
হৃদয় পোড়া ঘ্রাণ আর প্রেমের পবিত্র শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয় আবেগের বিষাক্ত কালো থাবায়। নুয়াল নিদারুণ পবিত্র ভালোবাসাকে গলাটিপে হত্যা করে। আর এর পরিণাম প্রেমের সমাধি রচিত হয়। নিচক ক্ষণিকের আবেগের তাড়না সাগর সঙ্গমে জলাঞ্জলী দেয় ভালোবাসার মধুর স্বাদ আর স্বপ্নকে। প্রেমের অমর কাব্য রচনাকে সাবলীল ভঙ্গীতে পাঠকের কাছে নান্দনিক উপস্হাপনার মাধ্যমে কবি শামীমা সুলতানা তার রচনাশৈলীর শক্তিমত্তার ইঙ্গিত দেন।
“সবুজ প্রেমের বিষাক্ত নির্যাস” বইটি পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। উদার ব্যক্তিত্বশীল চরিত্র গুলো পাঠকের হৃদয় ছু্ঁয়ে যাবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। লেখকের রুচিবোধ আর শিল্প মনস্ক দৃষ্টি ভঙ্গীর
প্রসারতার স্ফুরণ ঘটেছে বইটিতে। সাহিত্য বিচারে বইটি টিকে যাবে বলে আমি আশাবাদী। পাঠকের কাছে বইটি ভালো লাগবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।