লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ ১১ বছরেও শেষ হয়নি। পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তিসহ নানা জটিলতায় একদিকে যেমন এই সেতু নির্মাণে বিলম্ব ঘটেছে, অন্যদিকে নির্মাণব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। পরবর্তী সময় সেতুর ডিজাইন সংশোধনের পর পুনরায় কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সংশোধিত ডিজাইনে সেতুর উচ্চতা বাড়িয়ে নির্মাণকাজকে দুই অংশে বিভক্ত করা হয়। একাংশ পুরোনো অবকাঠমো এবং মাঝখানের ১০৭ মিটার, অন্য অংশ স্টিলের অবকাঠামো। পরবর্তী সময় স্টিলের অবকাঠামো নির্মাণকালে লঞ্চের ধাক্কায় নির্মাণ কাজের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
পটুয়াখালীবাসী দীর্ঘদিন ধরে লোহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। এই সেতু নির্মিত হলে জেলা সদরের সঙ্গে দশমিনা, বাউফল ও গলাচিপা এই তিন উপজেলার সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপিত হবে। তাছাড়া, রাঙ্গাবালী উপজেলা ও ভোলার সঙ্গে অনেক সহজ হবে যোগাযোগ। এ অবস্থায় সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের তত্ত্বাবধানে ৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে লোহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
এদিকে, কাজ চলমান অবস্থায় দুই বছর পর ২০১৪ সালে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় নির্মাণকাজে আপত্তি জানায়। এ অবস্থায় ঐ বছর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে সেতু নির্মাণের ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর দেখা দেয় জটিলতা। এ অবস্থায় ঠিকাদারকে তার কাজের অনুকূলে ২৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। এ সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ ও সেতু নির্মাণের মোট ব্যয় হয় ২৯ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার ৩৭৯ টাকা।
এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, শুরুতে লোহালিয়া সেতুর উচ্চতা বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন ছিল ৯ দশমিক ৫৭ মিটার। সেই অনুযায়ী সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তবে লোহালিয়া সেতু অনুমোদনের সময় পায়রা বন্দরের কথা বিবেচনা করা হয়নি, যা বর্তমানে বিবেচনায় আনা হচ্ছে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে ভবিষ্যতে লোহালিয়া নদী দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করবে। লোহালিয়া সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় সে সময়ে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করা হয়। সেতুর ডিজাইন সংশোধন করে উচ্চতা আরো বৃদ্ধি করা হয়। এখন পায়রা সমুদ্রবন্দরের স্বার্থে সেতুর উচ্চতা হবে ১৩ দশমিক ৫ মিটার এবং সেতুর মাঝখানে ব্যবহার করা হবে স্টিলের প্লেট। নতুন ডিজাইন অনুযায়ী এই সেতুর দৈর্ঘ্য ১০৭ মিটার বৃদ্ধি করে ৫৭৬ মিটার করা হয়। মূল সেতুর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং স্টিলের কাঠামোর নির্মাণব্যয় ২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
এলজিইডি পটুয়াখালীর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাইনুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের জুনে লোহালিয়া সেতুর মাঝখানের স্টিলের অংশের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এ সময় দেখা দেয় আবার বিপত্তি। নির্মাণকাজের শুরুতেই গলাচিপা-ঢাকাগামী দোতলা লঞ্চ সেতুর নিচ দিয়ে দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় ধাক্কা দিলে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ অবস্থায় বন্ধ করতে হয় নির্মাণ কাজ। পরবর্তী সময় স্থানীয় সরকার ও নৌপরিবহন আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে শুষ্ক মৌসুমে তিন মাস সেতুর নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ রেখে ঐ সময়ের মধ্যে মাঝখানের স্টিলের অংশের কাজ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী চলতি পহেলা নভেম্বর থেকে পুনরায় কাজ শুরু করা হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ পটুয়াখালীর সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী দিপুল কুমার বিশ্বাস বলেন, মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ আগেই শেষ হয়েছে। আর কোনো বিপত্তি না ঘটলে মাঝখানের স্টিলের অংশের কাজ আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হবে। পরবর্তী সময় আনুষঙ্গিক কাজ শেষে আগামী বছরের জুনে সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।