স্টিমার সার্ভিস বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের দুর্ভোগ
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১:০০ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) প্যাডেল স্টিমারগুলোর সার্ভিস বন্ধ থাকায় পথে পথে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুট লাভজনক হওয়ায় বেসরকারি লঞ্চ কোম্পানিগুলো একের পর এক বিলাসবহুল লঞ্চ বহরে যুক্ত করলেও নানান অব্যবস্থাপনায় লোকসানের অজুহাতে বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে স্টিমার সার্ভিস। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই যাত্রীসংকট আর তেলসংকটের অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় বরিশাল-ঢাকা রুটের রকেট বা স্টিমার সার্ভিস।
সার্ভিস বন্ধ হওয়ার পর বেকার হয়ে পড়েছেন বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেকার হয়ে পড়া এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ফলে চূড়ান্তভাবেই এ রুটের সার্ভিস গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যেই ১০ জনকে অন্যত্র পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এসব খবর জানতে পেরে দক্ষিণাঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখতে পুনরায় স্টিমার সার্ভিস চালুর দাবি তুলেছেন সাধারণ যাত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা প্যাডেল স্টিমার চাঁদপুর-বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত সাত থেকে আটটি স্টেশনের যাত্রীদের পরিবহন করে আসছিল। পরে মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত ছয়টি স্টেশনের যাত্রী পরিবহন করছিল স্টিমারগুলো। বর্তমানে এ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
যাত্রীরা জানান, বৈরী আবহাওয়ায় যাতায়াতে তাদের বেসরকারি লঞ্চের চেয়ে সরকারি নৌ-যানের ওপর ভরসা বেশি। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলার সভাপতি প্রফেসর শাহ্ সাজেদা বলেন, ব্রিটিশ আমলে তৈরি ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার বন্ধ হয়ে গেলে পর্যটকদের পাশাপাশি নিয়মিত যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। বেসরকারি লঞ্চ কোম্পানিগুলোর একের পর এক বিলাসবহুল লঞ্চ সার্ভিসে যুক্ত হয়ে দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০টি নৌযান যাত্রী পরিবহন করে। অথচ নদীবেষ্টিত বরিশালে সরকারি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলো একাধিক লঞ্চ পরিচালনা করতে পারলে সরকারি স্টিমার সার্ভিস কেন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি দক্ষ জনবল দিয়ে এ সার্ভিস পুনরায় চালু করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নির্বিঘ্ন চলাচলের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল কার্যালয়ের সহ-মহাব্যবস্থাপক খান মোহাম্মদ ইমরান (রুহান) বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বরিশাল থেকে সর্বনিম্ন ছয় জন থেকে সর্বোচ্চ ২৮ জন যাত্রী পেয়েছে স্টিমার সার্ভিস। এ কারণে লোকসান ঠেকাতে দক্ষিণাঞ্চল রুটে চলাচলকারী তিনটি স্টিমার সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গত ১৭ সেপ্টেম্বর। শেষ দিনের যাত্রায় ঢাকা থেকে ১০৪ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালে এসেছিল স্টিমার। আর বরিশাল থেকে যাত্রী গেছে মাত্র ২৮ জন। আর পুরো স্টিমারের কেবিনগুলো ছিল ফাঁকা। এত কম যাত্রী হওয়ায় তেলের মূল্য তোলাও সম্ভব হয়নি। টানা তিন মাস লোকসান দিতে হয়েছে স্টিমার সার্ভিসকে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত স্টিমার সার্ভিস চলাচল করত। পথে চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, হুলারহাট, সন্ন্যাসী, বড় মাছুয়া ও কাউখালী হয়ে মোরেলগঞ্জ পৌঁছাত স্টিমার। একইভাবে মোরেলগঞ্জ থেকে ঢাকা যেত স্টিমার। তবে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহায় বরিশাল-ঢাকা রুটে বিশেষ সার্ভিস দিত স্টিমার। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই বড় ধরনের প্রভাব পড়ে স্টিমার সার্ভিসে। আর এরই মধ্যে বেড়ে যায় জ্বালানি তেলের মূল্য।
এদিকে বিআইডব্লিউটিসি বরিশাল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্টিমার সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকটা বেকার হয়ে পড়েছে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এজন্য ১০ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কার্যালয় থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ বদলি করা হয়েছে বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপককে। দায়িত্বে থাকা সহ-মহাব্যবস্থাপকও অন্যত্র বদলি হওয়ার চেষ্টা করছেন।
বিআইডব্লিউটিসির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমারগুলোকে ১৯৯৫ সালে পুনরায় সংস্কার করা হয়। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত প্যাডেল স্টিমার পিএস অস্ট্রিচ, পিএস মাহসুদ, টার্ন, লেপচা ও এমভি শেলার পাশাপাশি পরে নির্মিত এমভি মধুমতি ও বাঙালি ঐতিহ্য পর্যটন মৌসুমে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে নির্ভরযোগ্য নৌ-যান হিসেবে প্রাধান্য পেলেও এসবই এখন অতীত।