৫/৬ জন শিশু শিক্ষার্থী স্কুলে রওয়ানা হয়েছে। কিছুদূর যাওয়ার পর একজন পড়ে গেল। কাঁদা-পানিতে ভিজে একাকার হয়ে ফিরে এলো বাড়ি। বৃদ্ধ বের হবে বাজারে, তাকে ধরে নিতে লাগবে আরো দুইজন। আর গুরুত্বর অসুস্থ রোগী হলে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতেই রুহু আসে যায় অবস্থা। বর্ষার দিনে এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় চর খাজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের। তারা বলছেন, শুধু একটি রাস্তা সংস্কারের অভাবে গ্রামটির মানুষ কতটা কষ্টে আছে তা বর্ণনা করাটাও কষ্টসাধ্য।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কাজিরহাট থানার ৬নং বিদ্যানন্দনপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে চর খাজুরিয়া গ্রাম। অনেকের কাছে এটি ছোট চর খাজুরিয়া গ্রাম নামেও পরিচিত। গ্রামের অর্ধকিলোমিটারের একটি রাস্তা মৃত: কাদের মাষ্টার বাড়ির সামনে দিয়ে চলে গেছে। গ্রামটির ৫শতাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এটি। গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর ভাষাণচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নবারুণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভাষাণচর বিদ্যানন্দপুর মহাবিদ্যালয়ে যেতে লাগে এই রাস্তা। এছাড়া দফাদার বাজার, নতুনবাজার ও লঞ্চঘাটে যাওয়ার পথও এটি।
অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার বেহাল দশা দেখলে মনে হবে না এই গ্রামে কোন জনপ্রতিনিধি আছেন। এখানকার বাসিন্দারা বলছেন, মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছে বলতে বলতে হয়রান, এখন আর তারা রাস্তার সংস্কারের জন্য আবেদনও করেন না। কারণ গত একযুগ ধরে কতশতবার রাস্তার জন্য বলা হয়েছে তার কোন হিসেব নেই, কিন্তু কোন ফল পাননি। তারা জানান, আশপাশের রাস্তা সংস্কার হয়, পাকা হয়, কিন্তু কাদের মাস্টার বাড়ির সামনের রাস্তা কাঁচাও হয় না।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদক কথা বলেন গ্রামের ৭ জন ব্যাক্তির সঙ্গে। তারা বলেন, রাস্তাটি এখন নেই বললেই চলে। রাস্তার মতো যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা মূলত জব্বার ডাক্তারের আখ চাষের জমি। কিন্তু রাস্তা না থাকায় ওই জমি দিয়েই সবাই হাটেন, এতে কিছুটা রাস্তার মতো মনে হয়।
এলাকার বাসিন্দা বজলু সরদার বলেন, রাস্তার অবস্থা এক কথায় বেহাল, জনপ্রতিনিধিরা আছেন অন্য এলাকা নিয়ে, এই রাস্তা নিয়ে তাদের কোন খোঁজ নেই। কি কারণে রাস্তা হচ্ছে না তা জানি না। তবে রাস্তাটি করা উচিত।
দুঃখ প্রকাশ করে বাবুল মোল্লা বলেন, কিছুদিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম, এই রাস্তায় এসে স্ত্রীকে বাইক থেকে নামিয়ে একা চলার চেষ্টা করি। হঠাৎ উল্টে বাইকসহ পাশের খালে পড়ে যাই। এতে হাতে-পায়ে বেশ চোট লাগে। পরে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। পাইলিংসহ রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
কলেজ ছাত্র সুমন বলেন, রাস্তাই তো নেই, পাশের জমি দিয়ে হাটি। বর্ষার দিনে তো হাটাও যায় না। এমন অবস্থা হয় যেন চাষ দেয়া ধানক্ষেতে হাটছি। কোন পরিবহণ চলতে পারে না। ভারী বস্তা কিংবা বাজার মাথায় নিয়ে হাটতে হয় এই অর্ধকিলোমিটারের পথ। আর বয়স্করা বের হলে সঙ্গে নাতি বা কাউকে যেতে হয়, যাতে পড়ে গিয়ে আহত না হন।
এদিকে, গ্রামপুলিশ (আনসার) আবুল মোল্লা গত ৩০ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ডাক্তারের কাছে নিতে হয়। তার স্ত্রী রুবি আক্তার জানান, অনেক কষ্টে ভ্যানে করে কয়েকজনের সহায়তায় আবুল মোল্লাকে বাড়ি থেকে বের করা হয়।
ইউপি মেম্বার শাহ আলম মাতুব্বর বলেন, ফান্ড পাই না, তাই করতে পারি না। যে ফান্ড পাই, তা দিয়ে অন্য রাস্তা মেরামত করি তাতেই শেষ হয়ে যায়। অন্য রাস্তা মেরামত করতে পারলে এটা কেন করেন না? এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান শাহ আলম মাতুব্বর। তবে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার রাস্তাটি মেরামতের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানান তিনি।
গত একযুগেও রাস্তাটিতে জনপ্রতিনিধিরা কোন নজর পড়েনি, শুধুমাত্র ভোটের সময় আসেন পরে কোন খবর রাখেন না- এলাকাবাসীর এমন অভিযোগ আছে জানালে ৬নং বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ. জলিল মিয়া বলেন, নানান কারণে রাস্তাটি সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে সবকিছু রেডি হয়ে গেছে, ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর আওতায় বরাদ্ধ দেয়া আছে, ২ মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।