কুয়াকাটা প্রতিনিধিঃ কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানা সদরে গড়ে উঠেছে ছোট বড় প্রায় দেড় শতাধিক স্থাপনা। ভূমি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিনটি সরকারী খাস পুকুর ও শিববাড়িয়া নদীর পাড় দখল করে তোলা হয়েছে এসব কাঁচা পাকা স্থাপনা। স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে মাত্র এক’শ থেকে দেড়’শ গজ দুরের পুকুর গুলি এভাবেই বছরের পর বছর ধরে দখল হলেও উদাসীন সংস্লিস্ট কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করেই তোলা হয়েছে এসব স্থাপনা। আর এসব দখল বানিজ্য হচ্ছে সরকারী দলের সুবিধাভোগী নেতাদের ছত্রছায়ায়।
দখলদারদের এসব দখল প্রক্রিয়া পাকাপোক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড রয়েছে কয়েক ধাপ এগিয়ে। প্রতি বর্গফুট নাম মাত্র মুল্যে এক সনা বন্দোবস্ত দিয়ে একশ্রেনীর অসাধু কর্মচারীরা দখলদারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। দখলদারদের সহায়তায় ভূমি প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এমন অবস্থানে ক্ষুদ্ধ স্থানীয় সাধারন মানুষ। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে মাত্র এক’শ গজ দূরে সরকারী খাস পুকুরটির চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে ৪০টি পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা স্থাপনা। স্থানীয় প্রভাবশালী শাহজাহান খলিফা, দুলাল ডাক্তার, সত্তার মুসুল্লী, আ. মালেকসহ ছয়জনে তুলেছেন দ্বিতল পাকা ভবন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জন্য জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে এ পুকুর পাড়েই। সেই জমিও দখল হওয়ার পথে। এ খাস পুকুর থেকে মাত্র ২০ গজ দুরেই মহিপুর-সেরাজপুর সড়কের পাশে বেরিবাঁধের জলাশয় (৪৭/১ পোল্ডার) যা স্থানীয়দের কাছে কালীবাড়ী পুকুর নামে পরিচিত।
এ পুকুরের চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে অন্তত: ৫০টি পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা স্থাপনা। সামান্য যে ফাঁকা জায়গাটুকু রয়েছে সেখানে নিয়মিত ফেলা হচ্ছে ময়লা আর্বজনা। বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে সেখানে খুটি গেড়ে, পাটাতন তৈরি করে দখলে নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন। এ পুকুর পাড় দখল করে চারতলা স্থাপনা তৈরি করেছেন মৎস্য ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা ফজলু গাজী। ইউপি সদস্য দুলাল, কালাম শিকদার, মালেক হাজী, কালাচান কর্মকার গড়ে তুলেছে দ্বিতল আবাসিক ভবন। এসব ভবনের সকল র্বজ্য নিস্কাশন করা হচ্ছে এ পুকুরেই। ফলে পুকুরটি এখন হয়ে উঠেছে মশা-মাছির একমাত্র প্রজনন কেন্দ্র হিসাবে। র্দুগন্ধে বিপন্œ হচ্ছে বাজারের পরিবেশ। একইভাবে এ পুকুরটি থেকে মাত্র পঞ্চাশ গজ দুরের দ্বিতীয় কালিবাড়ী খাস পুকুরটি দখল করে গড়ে উঠেছে অন্তত: ৩৫টি আধাপাকা ও কাঁচা আবাসিক স্থাপনা। মহিপুর থানা কৃষকলীগ সভাপতি আ.সত্তার, হোটেল সাইদসহ আ.লীগ অঙ্গ সংগঠনের পরিচয়ে পুকুরটির চারপাশ দখল করে আবাসিক ও বানিজ্যিক স্থাপনা তুলেছে। এসব অবাসিক বাসাবাড়ীর সকল বর্জসহ মলমূত্র এ পুকুরে নিস্কাসনের ফলে ব্যবহার অনুপযোগী করে ফেলা হয়েছে। তৈরি হয়েছে মশা-মাছির প্রজননসহ র্দুগন্ধের গুদাম ঘরে। একই অবস্থা মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন পিছনের পুকুরটির। এর উত্তর পাড় দখলের পায়তারা চলে প্রতিনিয়িত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সামাজকর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ সাধারন মানুষ জানান, ওয়ান ইলেভেনের সময় এ তিনটি পুকুর পাড়ে গড়ে ওঠা সকল স্থাপনা ভেংগে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে স্থানীয় কতিপয় সুবিধাভোগী নেতার ছত্রছায়ায় ভূমি অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মচারীর সহায়তায় পুনারায় গড়ে ওঠে অবৈধ স্থাপনা। তারা আরো বলেন, আগে কাঁচা স্থাপনা থাকলেও বর্তমানে পাকা ও আধা পাকা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সাবেক ইউপি সদস্য হাজী আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, এই তিনটি পুকুর ছিল সাধারন মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের একমাত্র অবলম্বন। এ পুকুরে মাছের চাষ হত। বড় বড় মাছ ছিল। মানুষ ধরে খেত। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানের পুকুর গুলির অস্তিত্ব এখন বিলীন হয়ে গেছে। ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে তার দোকানে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের টিম একটি দোকানের পাটাতন ভেংগে পানি সংগ্রহ করে। ততক্ষনে তার দোকনটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সমাজকর্মী শহীদুল আলম বলেন, পুকুর তিনটি দখলের ফলে মহিপুর শহরে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের জন্য পানির সকল উৎস বন্ধ হয়ে গেছে।
পুরো মহিপুর বন্দর এখন মশা-মাছির দখলে। ফজলু গাজী, কালাচাঁন কর্মকারসহ বেশ কয়েকজনের দাবী পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ডিসিআর কেটে তারা পাকা স্থাপনা তৈরি করেছেন। কালাচাঁন কর্মকার বলেন, প্রতি বছর মোটা টাকার বিনিময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে একসনা লিচ গ্রহন করেন। শর্তানুযায়ী একসনা বন্দোবস্ত নেয়া জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মান করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পরেনি তারা কেউই।
মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি অফিসার আজিজুর রহমান (তহশিলদার) বলেন, পূর্বতন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা এক বছরের বন্দোবস্ত দিয়ে গেছেন। আর এ সুযোগ কাছে লাগিয়ে বন্দোবস্ত গ্রহীতারা পাকা স্থাপনা তুলেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় একের পর এক নতুন স্থাপনা উঠছে। এর বিরোধিতা করায় আমার পূর্বতন কর্মকর্তাকে ন্যাকক্কারজনকভাবে বিদায় নিতে হয়েছে। আমি যোগদানের পর সকল বিষয় উর্ধ্বতনদের অবহিত করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো.অলিউজ্জামান বলেন, আমাদের সকল বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। মহিপুরে যেসব বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে তার মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হয়ে গেছে। এখন যেসব স্থাপনা রয়েছে তা সম্পূর্ন অবৈধ। ইতোমধ্যে ৩০.১০.২০১৭ তারিখে ২৯৭ নং স্মারকের মাধ্যমে এসব উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মহিপুরের যে সমস্ত খাস পুকুর ও খাস জমি বেদখল হয়ে গেছে তা উদ্বারে খুব দ্রুত এবং জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন প্রভাবশালীকেও ছাড় দেয়া হবেনা।