প্রায় শত কোটি টাকার কাজে ধীরগতি, ভোগান্তি বেড়েছে বহুগুন!
প্রকাশ: ২২ মে, ২০২২, ৩:১৬ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
বরিশাল – ভোলা – লক্ষিপুর মহাসড়ক
নাজমুল হক সানী : প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে লক্ষিপুর-ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশাল অংশের সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও নির্মাণ কাজে ধীরগতিসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগ সাজসে নিম্নমানের দায়সারা কাজ করছেন বলেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। কাজের ধীরগতিতে পশ্চিমাঞ্চলের লাখো মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে এখন বহুগুন।
জানা যায়, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মেঘনার উপকূলীয় জেলা ভোলার – লক্ষিপুর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেনি। আর্থসামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া এ জেলার সড়ক ও সেতু ব্যবস্থার উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে একটি প্রকল্প হচ্ছে লক্ষিপুর -ভোলা-বরিশাল মহাসড়ক প্রশস্ত করণ ও সংস্কার। এ সড়ক বাস্তবায়নে সরাসরি সুফল ভোগ করবে বরিশাল – ভোলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। এ প্রকল্পের আওতায় বরিশালের অংশে রয়েছে লাহারহাট ফেরিঘাট থেকে দিনারপুল পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। কাজটি পেয়েছে ঢাকার ঠিকাদারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড তাদের হয়ে কাজ করছেন বরিশালের ঠিকাদার উজ্জ্বল নামে এক ব্যক্তি।
কাজের শুরু থেকেই নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ অনুসরণ না করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। বর্তমানেও একই অবস্থা এবং দায়সারা কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
তাদের অভিযোগ বালুভর্তি (ফিলিং) করে যান চলাচল এবং যোগাযোগ নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না, পাশাপাশি পুরনো লেন মিলিয়ে কাজ করার কথা থকলেও তাও হচ্ছে না। সড়কে পুরোনো-পরিত্যক্ত পাথর ও ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। খোয়া ও বালু দিয়ে সাববেইজ করার কথা থাকলেও আগের কার্পেটিং সিলকোট ফের ব্যবহার করা হচ্ছে। সাববেইজের অনুপাত হবে ৭০ ভাগ খোয়া ও ৩০ ভাগ বালুর সংমিশ্রণে। কিন্তু এখানে নির্ধারিত বালু না দিয়ে ভিটি বালু ও নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
মাটি বাইরে থেকে এনে (ক্যারিং করে) রাস্তার পার্শ্ব বাঁধাই করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বিভিন্ন গাছের গুঁড়ি, ময়লা-আবর্জনা দিয়ে করা হচ্ছে এ কাজ। তবে, সরকারিভাবে সড়ক নির্মাণ কাজের তদারকিতে কেউ নেই, পাশাপাশি ঠিকাদারেরও কোনো নিজস্ব প্রকৌশলী নেই, শুধু শ্রমিক দিয়ে নির্মাণ কাজের তদারকি করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
শনিবার (২৪ মে) ওই সড়কের ১১ কিলোমিটার ঘুরে নির্মাণ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। রাস্তার বালুতে গাড়ী চলাচল ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-পথচারীরাও বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বলে জানান ।
বরিশালে ঠিকাদারের দায়িত্বে থাকা উজ্জ্বল জানান কাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। আর কাজের ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন জমি অধিগ্রহণের কারনে কাজের সময় চলে গেছে, তাই কাজ করতে একটু সময় লাগছে। বর্তমানে মালামালের দাম অনেক বেশি। বিলম্বে কাজ করলে তো ঠিকাদারের আরো ক্ষতি।
তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান শুরুতে কিছুটা অনিয়ম হলেও এখন সঠিক নিয়মে কঠোর তদারকিতে কাজ চলছে। কাজের ধীরগতির হবার মূল কারন জমি অধিগ্রহণ। ১১ কিলোমিটার সড়কের ৭ কিলোমিটারের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারনে আমরা কিছু করতে পারছি না। জমি অধিগ্রহণের সমস্যা সমাধান করে দ্রুত গতিতে কাজ সম্পন্ন করা হবে।
নির্মান সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে প্রকল্পের ব্যায় আরো বাড়ানো জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।কাজের মেয়াদে আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে জানান এ প্রকৌশলী।