নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সতেরো বছরেও ছাত্রদলের কলেজ কমিটি হয়নি বরিশালের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ছাত্রদলের নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ছে ক্যাম্পাসগুলো। কেন্দ্র ঘোষিত কোন কর্মসূচিও পালন হয় না ক্যাম্পাসে। হয় না মিটিং-মিছিল ও সমাবেশ। সব মিলিয়ে প্রায় অস্তিত্বহীন বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। ছাত্রদলের এ নিষ্ক্রিয়তা অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ছাত্রদল কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে নেতাকর্মীরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, সংগঠনকে গতিশীল করতে দীর্ঘ ১৫ বছর পর ২০১৮ সালের ১৮ আগষ্ট মহানগর ছাত্রদলের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। দুই বছর মেয়াদী ওই কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে সদস্যেদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ঘোষিত পাঁচ সদস্যের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস পরও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি। নিয়মানুযায়ী মহানগর কমিটি গঠনের পর দু’বছর মেয়াদ থাকে। আর এ মেয়াদকালীন সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি দিতে হবে। অথচ বর্তমান মহানগর ছাত্রদল কমিটির মেয়াদ দু’বছর দু’মাস পার হয়ে গেলেও আজও ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কমিটি দিতে সমর্থ হয়নি। যেখানে মহানগর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিই গঠিত হয়নি সেখানে কলেজ ও নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা দুরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের মহানগর কমিটি হওয়ার পর পরই সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি ও করোনাকালীন কারনে কার্যক্রম স্থগিত ছিলো। তবে চলতি মাসের ভিতর বরিশাল মহানগরীর কলেজ কমিটি ও মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ড পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। সূত্র মতে, সর্বশেষ বিএম কলেজে মশিউর রহমান মঞ্জু ও ফজলুল বারি চয়ন কমিটি গঠন হয়েছিলো। আর বরিশাল কলেজে গঠিত হয়েছিল পারভেজ আকন বিপ্লব, সমির ও বাবলু পরিষদ। একইসাথে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে ছাত্রদলের নির্বাচিত কমিটি না থাকলেও কলেজ কমিটি ছিলো। ২০০৩ সালে ছাত্রদলের এই কমিটির পর অদ্যবধি কোন কমিটি দেয়া হয়নি বিএনপির পক্ষ থেকে। অথচ ওই সময়ে যারা নেতৃত্বে ছিলো তারা অনেকই পুরোমাত্রায় পেশাগত জীবন ধারন করছেন। এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতৃত্বহীনতার কারণে দলের নবীন-প্রবীণ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ আর হতাশা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। বাধ্য হয়েই তারা এখন ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোতে নাম লেখাচ্ছেন বলে জানান তারা। তবে এ ব্যাপারে নগর ছাত্রদল সভাপতি রেজাউল করিম রনি বলেন, আমাদের কলেজ কমিটিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অচিরেই নতুন কমিটি দেয়া হবে। কিন্তু দেড় যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ায় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদলের নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পরেছে এতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আপনি আগের যারা সভাপতি ছিলেন তাদের সাথে কথা বলেন। এদিকে নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মসিউল আলম সেন্টু র্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ায় এ বিষয়ে তথ্য কিভাবে পাবো জানতে চাইলে কোন সদুত্তর মেলেনি। সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসগুলোতে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে সভাপতি, সম্পাদক, সহ সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক, সহ সাধারণ সম্পাদক, সাংগাঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, প্রচার সম্পাদকসহ অন্যান্য পদ ও সদস্য রয়েছে। তবে ছাত্রদলের কমিটি কবে নাগাদ বরিশালের ক্যাম্পাসগুলোতে দেয়া হবে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বরিশাল বিভাাগীয় টিম প্রধান জাকিরুল ইসলাম জাকির বলেন, ইতিমধ্যে ছাত্রদলের কমিটি দেয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রে দফায় দফায় সভা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বরিশালের অন্যান্য জেলার কলেজগুলোতে কমিটির ব্যাপারে কার্যক্রম চলছে। সর্বশেষ বার্তা হলো অচিরেই আমরা কমিটি দেবো। কিন্তু দেড় যুগেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও কমিটি কেনো দেয়া হয়নি জানতে চাইলে কোন সদুত্তর মেলেনি। সরেজমিন সূত্রে, বরিশাল বিএম কলেজ, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল ল’ কলেজ, বরিশাল ইসলামিয়া কলেজ ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজগুলোর কোনটিতে ছাত্রদলের কমিটি নেই। এর মধ্যে বরিশাল বিএম কলেজের বিভিন্ন বিভাগের একাধিক ছাত্র ইলিয়াস তালুকদার, জহির রায়হান, খালেদ বাবর, নুরুল্লাহ মোমেন, শফিউল বাশার, রকিব, বাবু, জুমার, শুভ ও শাওনসহ অনেকেই হতাশা প্রকাশ করে বলেন, দলের জন্য শ্রম দিলেও আজও ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন হয়নি। আমাদের ছাত্রত্ত্ব প্রায় শেষের পর্যায় কিন্তু দলের জন্য কাজ করেও ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার আগে কোন স্বীকৃতি নিয়ে যেতে পারছি না। এমন হতাশা নিয়ে যখন আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ করি তখন শুধু শোনানো হয় স্বান্তনার কথা কিন্তু কমিটি দেয়া হয় না। বরিশালের কলেজগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি না থাকার ব্যাপারে বরিশাল নগর বিএনপির সভাপতি, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সাংসদ এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয়ভাবেই কমিটিগুলো বন্ধ ছিলো। আশা করি অচিরেই বরিশালের কলেজগুলো ও মহানগর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।