মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ১৯ মিনিট ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বরিশাল নগরীর একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটির এমবিএ পাস করা ছাত্রী উদীচী ও বরিশাল নাটকের সদস্য শামসুন্নাহার নিপা (২৫)। সেখানে লিখেছে— ‘সব প্রস্থান বিদায় নয়…’। এর পর রাতে তিনি নিজ বাড়িতে ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেন।
বুধবার সকালে নগরীর উত্তর মল্লিক রোডের বাসা থেকে নারী সাংস্কৃতিক কর্মী শামসুন্নাহার নিপার লাশ উদ্ধার করা হয় বলে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই আকলিমা বেগম জানিয়েছেন।
শামসুন্নাহার নিপা নগরীর উত্তর মল্লিক রোডের জাহান ম্যানশনের মৃত ফজলুল করিমের কন্যা। নিপা তার বোন ডালিয়ার সঙ্গে থাকতেন।
এসআই আকলিমা জানান, ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় নিপার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিজের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ফাঁস দেওয়ায় গলায় একটি কালো দাগ ছাড়া আর কোনো চিহ্ন নেই। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বাসায় বোন ডালিয়া ঘুমিয়ে থাকায় কিছু টের পায়নি জানিয়ে এসআই আকলিমা বলেন, সকালে ঘুম ভেঙে বোনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন। কী কারণে এ ঘটনা ঘটছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।
নগরীর একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটির এমবিএ পাস করা ছাত্রী নিপা উদীচী ও বরিশাল নাটকের সদস্য। এ ছাড়া নিয়মিত আবৃত্তি করত বলে জানিয়েছেন উদীচী বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন।
এদিকে নিপার ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, ৮ ঘণ্টা আগে (দুপুর ১২টা ১৯ মিনিট) সর্বশেষ স্ট্যাটাস দিয়েছে নিপা। সেখানে লিখেছে— ‘সব প্রস্থান বিদায় নয়…’। এর আগে ২৫ জুন তার ৫৯টি ছবি পোস্ট করেছিল। এর আগের দিন ২৪ জুলাই একটি পোস্ট দিয়েছে নিপা। সেখানে লিখেছে— ‘পোস্ট দেখলাম একটা ছেলে আত্মহননের পথ বেছে নিয়ে আবার ফেসবুকে পাবলিক পোস্ট করছে। কোনো মানুষই মরতে চায় না। তার পরও ঠিক কতটা যন্ত্রণায় থাকলে এমন কাজ করে যে, পরিস্থিতিতে না পড়লে বুঝবে না। পোস্ট কেন করছে ঠিক জানি না, হয়তো তখনো তার বাঁচার ইচ্ছেটা ছিল, হয়তো চেয়েছিল তার যন্ত্রণা কেউ বুঝুক। উনি বেঁচে গেছে। অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েছে। তবে আমার মনে হয় উনি মরে গেলেই আসলে বেঁচে যেত। না তার মানে আমি সবাইকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দিচ্ছি না। আমরা মানুষ চলে গেলে আফসোস করতে পারি, বেঁচে থাকার জন্য মোটিভেট করতে পারি; কিন্তু সেই মানুষটার যন্ত্রণা লাঘব করে শান্তিতে বাঁচার পথটুকু বলতে পারি না। উনাকে যারা বাঁচিয়েছে, তারা বড় জোর একসপ্তাহ পাশে থেকে সাপোর্ট করবে। ব্যস্ত দুনিয়ায় সবাই আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বে। উনি আবার যন্ত্রণায় ভুগবে, আবার আত্মহননের পথ খুঁজবে।
এর শেষ কোথায়? কেন মানুষ অন্য মানুষের বাঁচার আকুতি ভুলে আত্মহনন কেন করে সেটির কারণ খুঁজে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না?’
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম জানান, প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে নিশ্চিত করে বলতে পারব।