শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



অধ্যক্ষের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি
প্রকাশ: ১৭ জুন, ২০২৩, ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

অধ্যক্ষের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাৎ * কলেজ চালাচ্ছেন স্বেচ্ছাচারী কায়দায় * কলেজ প্রতিষ্ঠাতার লিগ্যাল নোটিশ
ইকবাল হোসেন সুমন:

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ‘কালিকাপুর আব্দুল মতিন খসরু সরকারি ডিগ্রি কলেজ’র অধ্যক্ষ মো. মফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ এবং অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

কুমিল্লার ঝাউতলা সিটি করপোরেশন এলাকায় অধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম বানিয়েছেন ৬ তলা বাড়ি (হোল্ডিং নং ৩৪৯/১)। কুমিল্লার ধর্মসাগর পশ্চিম পাড় ডিসি রোডে সিলভার গোল্ড থেকে কিনেছেন ২ হাজার বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৪ কোটি টাকা। ঝাউতলায় নিরাময় হাসপাতালের দুটি শেয়ার কিনেছেন। যার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। কুমিল্লার রেসকোর্সে কিনেছেন জমি। এগুলো দৃশ্যমান সম্পদ। গভর্নিং বডিকে উপেক্ষা করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে তিনি স্বেচ্ছাচারী কায়দায় কলেজ চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত বেতন ও ফি থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং নানা খাত থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে অর্থ আত্মসাৎই তার অবৈধ আয়ের উৎস। প্রায় দুই যুগ ধরে কলেজটিতে থাকায় তিনি এই আধিপত্য বজায় রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে ৬ জুন তাকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন কালিকাপুর আব্দুল মতিন খসরু কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাজ্জাদ হোসেন। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের (হাইকোর্ট ডিভিশন) আইনজীবী স্বর্ণকমল নন্দীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশটি পাঠানো হয়। লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ মো. মফিজুল ইসলাম।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে কালিকাপুর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরুর নামে কলেজটির নামকরণ করেন। মফিজুল ইসলাম এই কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। কলেজটি ২০১৮ সালে সরকারিকরণ করা হয়। অভিযোগ থেকে জানা যায়, নিয়োগের সময় মফিজুল ইসলামের যোগ্যতার ঘাটতি থাকলেও বোর্ডকে ম্যানেজ করে নিয়োগ পান তিনি।

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাজ্জাদ হোসেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে আরও বলেন, অধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম ছিলেন এক সময়ের শিবির নেতা (১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত শিবিরকর্মী) এবং পরে জামায়াত নেতা। নিয়োগের সময় তার অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকলেও বোর্ডকে ম্যানেজ করে নিয়োগ পান। তিনি আরও বলেন, অধ্যক্ষ তার কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে ফেলেন। এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দুর্নীতিসহ এই বিষয়টি জানার পর অধ্যক্ষকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। তদন্তের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থানে লিগ্যাল নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

দুর্নীতির খাত : কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মাসিক বেতন ৫০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা আদায় করা হয়। চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম ফিলাপ বাবদ ১৯৫০ টাকার স্থলে ৫ হাজার টাকা আদায় করেছেন। উপবৃত্তি, শ্রেণি পরীক্ষার ফি, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশংসাপত্র, মূল সনদপত্র উত্তোলনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয় যার কোনো হিসাব নেই এবং এসব ক্ষেত্রে প্রকৃত অঙ্কের রসিদ দেওয়া হয় না। রেজুলেশন ও কলেজের হিসাব খাতায়ও উল্লেখ থাকে না প্রকৃত হিসাব। ১২শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। মসজিদের ফিও অতিরিক্ত আদায় করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে লিগ্যাল নোটিশে। প্রতিবছর প্র্যাকটিক্যালের নামে শত শত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হয় অতিরিক্ত অর্থ। প্রতিবছর আদায়কৃত লাখ লাখ টাকা নানা কায়দা-কৌশল ও জোগসাজশে তিনি আত্মসাৎ করেন-চাকরির নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এছাড়া দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছরে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ-বাণিজ্য, শিক্ষক-কর্মচারীদের হয়রানি করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে কলেজের সাবেক গভর্নিং বডির সদস্য নুরুল ইসলাম মাস্টার, জামশেদ চেয়ারম্যান ও ফরিদ উদ্দিন মাস্টার যুগান্তরকে বলেন, অধ্যক্ষ মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সত্য। তার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে বলতে গেলে কর্ণপাত করেন না। উলটো অপমানিত হতে হয়।

দুর্নীতি, অনিয়ম করে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সম্পর্কে মুঠোফোনে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বাজে সাংবাদিক বলে মন্তব্য করে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তবে লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘এখনো জবাব দেইনি। সময়মতো দেব। আর মামলা হলে বিষয়টি দেখব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শক্রমে অধ্যক্ষ কলেজ পরিচালনা করেন বলে লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুড়িচংয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদা আকতার বলেন-অধ্যক্ষের অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে কিছু জানি না। তবে লিগ্যাল নোটিশের একটি অনুলিপি পেয়েছি।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া