সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা হলো, সংবাদপত্রের সংবাদ হবে নিরপেক্ষ। হ্যাঁ, পত্রিকাভেদে সম্পাদকীয় নীতিতে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে এটা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রত্যাশিত নয়। তাই পাঠকনন্দিত পত্রিকাকে সমাজের মানুষের রুচি-চাহিদা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি-কালচারের সঙ্গে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তা এড়িয়ে যেতে হবে। তবেই একটি সংবাদপত্র চলমান সমাজের রাজনৈতিক হিংস্রতা, কুশিক্ষা, ধর্ম অবমাননা, বিকৃত রুচি, জিঘাংসু মনোবৃত্তি, নারী-শিশুর প্রতি অসম্মানবোধ, পারস্পরিক সহানুভূতিবোধের অভাব, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, নৈতিক অধঃপতন অবসানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তাই ধর্ম, জনগণ ও দেশের স্বার্থে সাংবাদিকদের কলমকে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সমাজকে সচেতন করে তুলতে হবে। সাংবাদিকদের কলমকে আরও সৎ ও আন্তরিকভাবে ব্যবহার করতে হবে_ ঘুণেধরা এ সমাজের নানাবিধ ব্যাধির বিরুদ্ধে, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ব্যবসায়ীদের অনৈতিকতার বিরুদ্ধে। এমন সত্য প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে নিয়োজিত সাংবাদিকদের পথনির্দেশ করে কোরআনে কারিমের সূরা হুজরাতের ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে লিপ্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’ এই আয়াত হতে পারে আদর্শবাদী সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বড় গাইডলাইন। পক্ষান্তরে সতর্কতার জন্য একটি হাদিসের বাণীও সামনে রাখা যেতে পারে। হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট, যা শুনবে তা যাচাই ছাড়া বর্ণনা করা।’ (আবু দাউদ)
সাংবাদিকতা হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সম্মানজনক পেশা। সে জন্যই সাংবাদিকদের সমাজের অতন্দ্র প্রহরী বলা হয়। স্বাধীন সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অপরিহার্য বিষয়, তা আর নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। তার পরও অনেক সময় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা সম্ভবপর হয় না। এ জন্য পাঠক সময়বিশেষ বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন, যা মোটেও প্রত্যাশিত নয়। সাধারণ মানুষের আন্তরিক প্রত্যাশা হলো, সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে খবরাখবর, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গল্প-উপন্যাস প্রকাশ করুন। পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও এ কথা মনে রাখা দরকার_ পেশাগত স্বাধীনতা যেমন তাদের কাম্য, তেমনি স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা কাম্য নয়।

সাংবাদিকতা পেশায় সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো এই পেশার নীতিনৈতিকতা। খেয়াল-খুশিমতো কোনো কিছু লেখা কিংবা বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশ ও বিশেষ কোনো শ্রেণীর স্বার্থ চরিতার্থ করার মাধ্যম সংবাদপত্র নয়। সংবাদপত্রের মূল দায়িত্ব হলো,
দেশ-জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কথা বলা, নাগরিকদের মধ্যে নীতিবোধ সৃষ্টি করা, মানুষের কল্যাণে আত্মনিবেদিত হওয়া। আমরা কামনা করি, সাংবাদিকরা তাদের পেশায় সামগ্রিকভাবে বস্তুনিষ্ঠতা, সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখুন। যথাযথ সূত্র ও তথ্যের আলোকে লিখিত খবরে সব ধরনের ভারসাম্য ও ন্যায্যতা নিশ্চিত হোক। সমকালের প্রতিষ্ঠালগ্নে এটাই আমাদের আন্তরিক কামনা।
মুফতি এনায়েতুল্লাহ : শিক্ষক ও কলাম লেখক