সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



মাহবুবা ফারুক এর গুচ্ছকবিতা
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

মাহবুবা ফারুক এর গুচ্ছকবিতা

মাহবুবা ফারুক এর গুচ্ছকবিতা

কবি : মাহবুবা ফারুক

ভালোবাসা

আমার কোনো কাজ নেই

কোনো কাজ জানিনা আমি

শুধু তোমার চেহারা মুখস্থ করি

কোনো কাজ নেই বলে বার বার

ফোনের আয়নায় দেখি তোমার মুখ

স্পর্শ করি চেনা নম্বর

হ্যালো হ্যালো বলি বাতাসের কাছে

নাম ধরে জোরে ডাকি

আমার চোখ গেঁথে দিই তোমার চোখে

বুকের ভেতরের বুদবুদগুলো উসকে দিই

আর কোনো কাজ নেই আমার

উঁচু নীচু ঢেউয়ের মত রাস্তা

তোমার আমার মাঝখানে থাকা সেতু

হেঁটে পার হই বুকে দুপুর নিয়ে

আমাকে বিছিয়ে দিই তোমার চারপাশে

গায়ে বুনি ভালোবাসার চিহ্ন

আড়াল করে ওম দিই

আর কোনো কাজ নেই আমার

ভালোবাসা ছাড়া কোনো কাজ থাকতে নেই ।

অসমাপ্ত উপন্যাস

বলেছিলেন অনেক কাজ বাকি আছে

একসাথে হেঁটে যেতে কত কথা হলো

হাত ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে গেলেন

তারপর মাকেও দেখি ডেকে নিলেন

দরজা খুলে দেখি বাবা নেই মা নেই

একটা অসমাপ্ত উপন্যাস পড়ে আছে

সেই ঘটনার ভেতর দিয়ে ছুটছি

পেছনে আমার ভাইবোন সন্তান স্বজন

সবাই লিখে চলেছে আর খুঁজছে শেষ পাতাটা।

বেগমের বিয়ে

এবার নিয়ে তিনবার ভাঙলো বিয়ে বেগমের – চুল কম গায়ের রঙ কালো গরীবের মেয়ের বিয়ে ভাঙা মৃত্যুর কাছাকাছি কষ্ট। চারপাশে কানাকানি ফিসফিস। বেগমের খেলতে যাওয়া বন্ধ। খেলার সাথীরা জেনে গেছে সব। দরজা এঁটে চুপচাপ কাঁদে ঘরে। হাটবারে ফরমাশ দেয়না লাল ফিতা- বাসনা সাবান – তেলের। বেশি শান্ত হয়ে গেছে বেগম। বাবা-মা বুঝে আবার বুঝেনা। তাদেরও বলতে হয় লোকের কথার জবাবে সাতপাঁচ। মা বলেছিল – নে বেগম, পাশের ঘরের ভাউসের আলগা চুল মাথায় কিছুক্ষণ বাইন্ধা রাখ। আর এই রঙডা মুখে মাখা। এইবার ও ছেলে পক্ষ চুল দেখতে চায় যুদি? বেগম শক্ত গলায় বলেছিল – না পরুম না নকল চুল। আমি তো নকল না। ধান ভানি। পানি আনি গাং থাইকা কাংখে কইরা। রান্ধি বাড়ি। কোনোটা তো নকল না। মানুষরে আদর যতœ করি – ঠকাইনা কেউরে। তাইলে কেন আমার পিঙলা চুলেরে সাজামু নকল জিনিস দিয়া? মাথায় চুল পাতলা। বুদ্ধি কিন্তু কম না। আমি অনেক কাজের বোঝা নিতে পারি। কষ্ট সইতে পারি। মা বলে – আহা মাইয়া বুঝসনা। এই সবের কুনু দাম আছে? সুন্দর ই আসল। প্রথমে দেখার বিষয় বড়। বেগম কাঁদে – শোন মা, এই জিনিস তো আমার হাতে নাই। কপালে আঙ্গুল তুলে বলে – এই খানে। বুঝলি ? এই খানে যা লিখা আছে তাই হবে। আমি কি সারা জীবন নকল সাইজা থাকমু ? এইডা কি হয় ক ?

বিয়ে ভাঙার পর মা তাই বারবার বলছিল – মাইয়া মানুষ এত জিদ কেন ? আমার কতা শুনলিনা। তোরে ঘরে কই রাখমু ? আশে পাশে সব মাইয়াগো বিবাহ হইতেছে। আর ? বুড়া বাপ মরলে কই যাইবি? মায়ের চোখের পানি দেখে বেগম। হাতে নেয় কোদাল আর ‘খাদি’। বজ্রপাত হয় ওর গলায় – কাম কইরা খামু মা – ছেলে গো লগে মাঠে কাম করমু। মাথায় চুল কম বইলা কাম করতে তো অসুবিধা নাই। তোগো এইসব সুন্দর দেখানি বিয়া আমি মানিনা ।

মা তাকিয়ে থাকে বেগমের সাহসী পায়ের দিকে।

মন মানেনা

তুমি কুনদিন আইবা ? পথ চাইয়া থাহি আমি

শহরো আমার ভালা লাগেনা – দম বন্দ লাগে

এইহানে মানুষ নাই খালি পাথর ইট সিমেন্ট

ফুল নাই পাতা নাই গাছ ভরা খালি কাঁটা

আমার অস্থির লাগে আমারে লইয়া যাও

লইয়া যাও আইয়া -আমি যে ডাকি তুমি হুনোনা?

এই পাষাণ জাগাত আমি থাকতাম না – না

আমারে কি ভুইললা গেছো ?হাছা কইরা কউ

ভালাবাসা কি কচু পাতার পানি ?

গেরামের গাঙ্গের পাড়ে কী জানি থইয়া আইছি

আমার পরান পুড়ে গেরামো যাইতাম – লইয়া যাও

তুমি আইয়া লইয়া যাও আমারে – – -একবার-

শরত মেঘ

শরত আকাশ সাজে যখন সাদা সাদা মেঘে

তুলো ভেবে সবগুলো তার কুড়োলাম আবেগে।

মেঘগুলোকে এক করে তা বানিয়ে নিলাম বালিশ

আকাশ বলে,আমার দুঃখ আমার বুকেই ঢালিস।

ভুল করে তুই নিয়ে গেলি নইলে কি কেউ চায়?

মেঘের মত দুঃখগুলো আমাকেই তো মানায়।

দুঃখগুলো

ঘুড়ি করে উড়িয়ে দিলে কুড়িয়ে কেন আনো

দুঃখগুলো সুক্ষ করে বক্ষে কেন টানো?

অবসরে কাজের ভীড়ে যখন যেমন থাকি

আমি তো চাই দুঃখরা দিক একটুখানি ফাঁকি।

আনবাড়িতে মান পেয়ে ওই সুখের হাবুডুবু

দুঃখ ছাড়া হতচ্ছাড়া সুখ যে কেন তবু।

বলব হেসে দুঃখ এসে থাক তো বসে পাশে

পুড়িয়ে আমায় মুড়িয়ে রাখে সে-ই ভালোবাসে।

 

লেখক:
মাহবুবা ফারুক,
জন্ম নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টায়।
পেশায় শিক্ষক। প্রকাশিত বইয়ের নাম, শিশুতোষ- প্রজাপতি, ভূতের বাড়ি কয়েকদিন, মা পাখি বাচ্চা পাখি, বাচ্চা পাখি ফিরে এলো মা পাখিটার কাছে, বনে এক বাঘ ছিল, পরিবিবির সাথে দেখা হয়েছিল, ভূতের বংশধর প্রভৃতি। এছাড়া আছে কবিতার বই- শুক্লা দ্বাদশী ও টুকরো করলে নেবো না আকাশ, বদলে যাওয়া দৃশ্যগুলো। ছোটবেলায় স্কুল ম্যাগাজিনে লেখালেখির শুরু। প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল ‘বেগম’ পত্রিকায়। বিটিভির তিনি তালিকাভূক্ত গীতিকার । বিটিভিতে প্রচার হয়েছে তাঁর লেখা নাটক।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া