নওগাঁর মহাদেবপুরের সদ্য এমপিওভুক্ত সমাসপুর দারুল উলুম ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে গোপনে তিনজন কর্মচারী নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে।
ওই মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর মাদ্রাসায় পিয়ন, আয়া ও নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগের জন্য সমাসপুর গ্রামের তিনজন প্রার্থীর সঙ্গে গোপনে ৩০ লাখ টাকায় সমঝোতা হয় বলে অভিযাগে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসার সুপার আয়া পদের জন্য ৮ লাখ টাকা, নিরাপত্তা প্রহরী পদের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং পিয়ন পদের জন্য ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনজনকে নিয়োগের সমঝোতায় নাম সর্বস্বহীন দুটি দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. হাবিবুর রহমান মোবাইল ফোনে সুপারের নিকট কোনো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন জানতে চাইলে অনেক চেষ্টার পর একটি পত্রিকার নাম বলতে পারলেও অপরটির নাম বলতে পারেননি তিনি।
ওই পদগুলোর জন্য আবেদনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কপি, পত্রিকার নাম বা প্রকাশের তারিখ জানতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম আজাদ তাদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণও করেন এবং পত্রিকার নাম ও প্রকাশের তারিখ বলবেন না জানিয়ে তাদের পত্রিকা খুঁজে নিতে বলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, কাউকে না জানিয়েই মাদ্রাসার সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ ও সভাপতি মো. আব্দুল মান্নান গোপন সমঝোতায় প্রায় ৩০ লাখ টাকায় আয়া, পিয়ন ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।
পিয়ন পদের জন্য আবেদনে ইচ্ছুক সমাসপুর গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে মো. আব্দুর রহমান বলেন, মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম আজাদ পিয়ন পদে নিয়োগের জন্য তার সঙ্গে ১১ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। পরে তার চেয়েও বেশি টাকা পাওয়ায় তাকে না নিয়ে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যজনকে নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
আয়া পদের জন্য আবেদনে আগ্রহী মোছা. উম্মে হানির মা অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে নেওয়ার জন্য আট লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হলেও পরে গোপনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যজনকে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন মাদ্রাসার সুপার।
মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান গোপনে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার সময় কোনো ঘর ছিল না। তিনি বিভিন্ন দোকানে ও ইটের ভাটায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা বাকি করে মাদ্রাসায় কয়েকটি ঘর নির্মাণ করেছেন। সেগুলো টাকা পরিশোধের জন্য ওই তিনজনকে নিয়োগের মাধ্যমে কিছু টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে বিজ্ঞপ্তি দিলে অনেকেই আবেদন করবেন, তারা তাদের মনোনিত ব্যক্তিকে নিতে পারবেন না। তাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়নি। তবে কত তারিখে এবং কোনো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা মাদ্রাসা সুপারই ভালো বলতে পারবেন।
কত তারিখে এবং কোনো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন জানতে চাইলে ওই মাদ্রাসার সুপার আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিজ্ঞপ্তি আমরা কেন দিয়েছি, কোনো পত্রিকায় দিয়েছি, আবেদনের শেষ তারিখ কবে তা আপনাদের কেন জানাবো, এটা আপনাদের খুঁজে নিতে হবে। বিজ্ঞপ্তি আমরা কোথায় দিয়েছি, কেন দিয়েছি তা যেখানে বলার দরকার সেখানেই বলব। সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে কোনো কিছুই জানাব না।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভালো কাজ করেছে, সুপার খুব ভালো কাজ করেছে। আপনারা কেন নিউজ করবেন?
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব প্রতিষ্ঠানই টাকা নেয়। এটি কমিটির ওপর নির্ভর করে।