সাব্বির আলম বাবু, ভোলা:
ঈদকে সামনে রেখে লকডাউন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলার মেঘনায় ডেঞ্জার জোনে চলাচল করা নৌযান গুলোতে ভোলা-লক্ষীপুর রুটে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। ১০০ টাকার ভাড়া নেয়া হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ট্রলার যাত্রী জাহানারা অভিযোগ করে বলেন, ‘অনেক ঝুঁকি নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি, কিন্তু তারা ভাড়া বেশি আদায় করেছে।’ লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে মেঘনার উত্তাল ডেঞ্জার জোনে চলছে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীবোঝাই ছোট ছোট ট্রলার ও স্পিডবোট। একই অবস্থা ভোলা-বরিশাল রুটেও। এতে একদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি, অন্যদিকে করোনা সংক্রামণ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা। তার ওপর রয়েছে যাত্রীদের জিম্মি করে ট্রলার মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, অবৈধ এ সব নৌযান চলাচল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলেও ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার থামছে না। লক্ষ্মীপুর থেকে ভোলাগামী ট্রলারে সংখ্যাই বেশি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) জানায়, ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেঘনা নদীর ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুট ডেঞ্জার জোনের আওতায়। এ রুটে সি-সার্ভে সনদ এবং ৬৫ ফুটের নিচে ছোট লঞ্চ বা ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে করোনা সংক্রমণরোধে দেশব্যাপী লকডাউনের আওতায় আন্ত:জেলা যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা মানছেন না ট্রলার মালিকরা। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট ট্রলার দিয়ে যাত্রী পারাপার হচ্ছে। ভোলা-লক্ষীপুর রুটে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। ১০০ টাকার ভাড়া নেয়া হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ট্রলার যাত্রী জাহানারা অভিযোগ করে বলেন, ‘অনেক ঝুঁকি নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি, কিন্তু তারা ভাড়া বেশি আদায় করেছে।’ যাত্রী জসিম বলেন, ‘আমাদের জিম্মি করে বেশি ভাড়া নিচ্ছে ট্রলার মালিকরা, দেখার কেউ নেই।’ জামাল উদ্দিন জানান, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগ নিচ্ছে ট্রলার গুলো। উত্তাল মেঘনায় যাত্রী পারাপার করছে, এতে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। লক্ষ্মীপুরের কয়েকজন যাত্রী বলেন, ‘আইন প্রয়োগকরী সংস্থার লোকজন যদি ফেরিতে আসতে দিতেন, তাহলে আমরা উত্তাল মেঘনা নদী অবৈধ যানে পার হতাম না। বাধ্য হয়ে ট্রলার বা স্পিড বোটে উটছি।’ ট্রলার চালক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ট্রলার চালানো নিষেধ তা আমরা জানি। পেটের দায়ে চালাতে হচ্ছে। সবকিছু ম্যানেজ করে চলার জন্য ভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে।’ উত্তাল নদীতে ছোট এসব ট্রলারে গাদাগাদি করে গড়ে ৫০-৬০ যাত্রী পরিবহনের কারণে কেউ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দুরত্ব। এতে ঝুঁকি রয়েছে করোনা সংক্রমণের। যাত্রীদের পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামও নেই। অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ কাচিয়া-মাঝের চর, নাছির মাঝি-মদনপুর, তজুমদ্দিন-মনপুরা, কচ্ছপিয়া- ঢালচর, ইলিশা- মতিরহাট রুটেও চলছে অবৈধ ট্রলার-স্পিডবোট। অবৈধ ট্রলার চলাচল বন্ধে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন ভোলা নৌ অফিসার ইনচার্জ সুজন চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের জরিমানা করা হয়েছে। তারপরেও কিছু ট্রলার অভিযানের আড়ালে চলছে, আমরা তাদের ধরতে কঠোর অভিযান চালাচ্ছি। আর নৌ-পুলিশের নামে কেউ যদি টাকা তোলে বা অবৈধ ট্রলার চালায়, তাদের ধরতে পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ভোলা বিআইডব্লিটিএ সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুট ডেঞ্জার জোনের আওতায়, সেখানে ছোট ছোট ট্রলার বা স্পিডবোট চলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সি-সার্ভে ছাড়া নৌ-যান চলার অনুমতি নেই। ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজিত হাওলাদার বলেন, ‘আমরা অবৈধ নৌ-যান বন্ধে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেল জরিমানা করছি। ভোলা-লক্ষ্মীপুর ঘাটের কিছু সুবিধা ভোগী এ ধরণের অবৈধ নৌযান চালানোর সঙ্গে জড়িত। শিগগিরই এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে ইজারাদারদের ইজারা বাতিল করে দেয়া হবে।