ভোলার ইলিশা এলাকায় স্ত্রীর অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের বিচার ও শাস্তি মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন স্বামী ইজিবাইক চালক নিজাম সিকদার। শনিবার রাতে তিনি বিষপান করেন। রোববার বিকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরকালে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ দিতে স্বজনদের বলা হয়।
অপরদিকে নিজাম সিকদারের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভাই নিরব ও ভুট্টু সিকদার। এরা জানান, চেয়ারম্যানের বিচারের সময় ইয়াসিন আরাফাত ও চৌকিদারসহ কয়েকজন নিজাম সিকদারের হাত-পা বেঁধে মারধর করে। রোদে মুখ করিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। পরে একটি ঘরে আটকে রাখে। তার ওপর নির্মম মানসিক নির্যাতনও করা হয়। প্রকাশ্যে এমন নির্যাতন মেনে নিতে না পারায় নিজাম সিকদার আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। নিরব সিকদার জানান, তার ভাইয়ের স্ত্রী জান্নাত বেগম বাড়ির পাশের একটি কারখানায় চাকরি করত। এটা নিজাম পছন্দ করতেন না। চাকরি ছাড়তে বারবার বলার পরও জান্নাত বেগম ওই চাকরি না ছাড়ায় ঝগড়া হয়েছিল। এর বাইরে কোনো ঘটনা ছিল না। স্বামীর লাশের পাশে জান্নাত বেগমকে আহাজারি করতে দেখা যায়। স্বামীর এমন মৃত্যু তিনিও মেনে নিতে পারছেন না। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই জান্নাত বেগম স্বামীর সঙ্গে বাড়ি ফেরেন শনিবার ইফতারের আগ মুহূর্তে। ঘরে ইফতারের ব্যবস্থা করেন। রাতে কখন বিষপান করেছেন তা টের পাননি স্ত্রী। পরে নিজামই জানান, তিনি বিষ খেয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে নিতে নিতে নিজাম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এদিকে রোববার এ নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। পক্ষে-বিপক্ষে চলে নানা মন্তব্য। কেউ কেউ ঘটনার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়ী করেন। কেউ দায়ী করেন মহিলা মেম্বারের স্বামীকে। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, নিজামকে বেঁধে রোদে দাঁড় করিয়ে শাস্তি দেওয়া হয় ৩ ঘণ্টা। এসব ঘটনার তদন্ত চান স্থানীয়রা। ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন জানান, স্ত্রী জান্নাত বেগমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার (চেয়ারম্যানের) পোলগোড়া এলাকার অফিসে শনিবার বিকালে ডেকে আনা হয় নিজাম সিকদারকে। এ সময় জান্নাত অভিযোগ করেন, নিজাম তাকে প্রায়ই মারধর করে। কয়েকদিন ধরে ঘরে যেতে দিচ্ছে না। স্বামী জুয়া খেলে টাকা নষ্ট করে বলেও অভিযোগ দেয়। ভবিষ্যতে এমন কাজ যাতে আর না করে এই মর্মে সতর্ক করা হয় নিজামকে। একই সঙ্গে প্রতিদিন সংসার ব্যয়ের জন্য স্ত্রীর হাতে ৫০০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। পরে ইফতারের আগে স্বামী, স্ত্রী ও ছেলে এমরানসহ এরা বাড়ি ফিরে যায়। রাতে নিজাম বিষ খেয়েছে বলে শুনেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। নিজাম সিকদারের ওপর কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তাকে মারধরও করা হয়নি। শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতেই বিচার করা হয়েছিল। বিচারের সময় নিজাম সিকদারের ছেলে এমরানও উপস্থিত ছিল বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।