নিজস্ব প্রতিবেদক ।। বরিশাল নগরীতে মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় স্থানীয়দের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। যদিও পাল্টা হামলার অভিযোগ করেছেন হামলাকারীদের স্বজনরা। এ ঘটনায় স্থানীয় একাধিক যুবকসহ এক মাদক কারবারি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে বরিশাল নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের খালেদাবাদ কলোনি ও আলেকান্দা কাজীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের এলাকায় গোলাম শেখের মেয়ে সাথী, আনু, জামাতা (আনুর স্বামী) রফিক, ছেলে আরমান শেখসহ বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসা করে আসছেন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বরিশালের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের কারণে এলাকার তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যারা তাদের কথা শুনছে না, মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন না তাদের নানানভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ফলে এলাকার লোকজন তাদের ভয়ে কোনো ধরনের প্রতিবাদ করতে পারে না। আলম বলেন, আজ দুপুরের পর আরমান শেখ ও তার স্বজনরা একটি নিরপরাধ টোকাই ছেলেকে মারধর করছিল। এসময় আমার ছেলে রাতুল তাদের কাছে ওই ছেলেটিকে মারধর করার কারল জানতে চান। এসময় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে রাতুলকে প্রথমে মারধর করেন এবং পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আঘাত করেন।
আহত রাতুল ও আরিফ জানান, বাসার সামনে ঘোরাঘুরি করায় ওই ছেলেটিকে মূলত আরমান শেখ ও তার পরিবারের স্বজনরা পুলিশের সোর্স মনে করেছিল। তাই তারা ছেলেটিকে ধরে বেধম মারধর করেন। মারধর করতে বারণ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদক ব্যবসা করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে আমাদের ওপর সবাই মিলে হামলা চালায়। তাদের হামলায় একে একে রাতুল, আরিফসহ মুরগি ব্যবসায়ী আরমান, ইমরান, ইব্রাহিম আহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। এতে স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে মাদক কারবারি আরমানসহ তাদের স্বজনরা পুলিশের ভয় দেখায়। স্থানীয় বাসিন্দা রকিব বলেন, এ ঘটনার পর স্থানীয় বিভিন্ন বয়সী কয়েকশত নারী-পুরুষ মিছিল নিয়ে বিচারের দাবিতে নগরের আমতলার মোড়স্থ পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে যায়। সেখানে কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ কমিশনারের আশ্বাসে স্থানীয়রা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমি বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলতে বাসা থেকে তাৎক্ষণিক কার্যালয়ে এসেছি। স্থানীয়দের অভিযোগ তাদের এলাকায় বেশ কয়েকজনে মাদক ব্যবসা করছে। আর সে কাজে সহায়তা করার জন্য স্থানীয়দেরও চাপ দেওয়া হয়ে থাকে। আর মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করলে নানানভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। অভিযোগগুলো জানার সঙ্গে সঙ্গে আমি খোঁজ-খবর নিয়েছি। স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেছি ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই এলাকাসহ বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোনো এলাকায় মাদক ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। পুলিশ কমিশনারের আশ্বাসে শান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন। আমরা মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেবো। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।অপরদিকে আরমানের বাবা গোলাম শেখ জানান, আমার মেয়ের সঙ্গে স্থানীয় একটি ছেলের ঝামেলা হয়েছে। যেটি মীমাংসা না করে কিছু লোকজন ঘটনাটিকে উসকে দেয়। পরে কিছু যুবক আরমান শেখকে মারধর করে এবং আমাদের দোকানে ভাঙচুর ও হামলা চালায়। এসময় দোকানে থাকা নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল লুট করা হয় বলেও জানান তিনি। এদিকে গোলাম শেখসহ তার পরিবার মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তবে কোতোয়ালি থানা পুলিশ বলছে, সাথী,রফিক, আরমান, আনুদের বিরুদ্ধে মাদক মামলা রয়েছে। এদিকে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গোটা এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।