বরিশালে প্রতিমন্ত্রীর এপিএস এর দাপটে আহত দম্পতির পিছু নিল পুলিশ
প্রকাশ: ১৮ মে, ২০২০, ৪:৪২ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার : পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের ব্যাক্তিগত সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হবার পর তরুণ বয়সী হাদীস মীর বরিশাল শহরতলীর একাংশে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন। পারিবারি প্রতিপক্ষদের দমনে নিজের ক্ষমতা ব্যাবহার করছে পেশীশক্তির পাশাপাশি প্রশাসনিক সহায়তায়।
এবার একটি জমি দখল দিতে প্রকৃত মালিক ও তার স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত করায় শেবাচিমে চিকিৎসা শেষে এই দম্পতি বাড়ি ফেরার প্রাক্কালে পুলিশ তাদের আটক করেছে। গত ২ দিন ধরে চলমান এই ঘটনায় কেউ কোনো শব্দ করছে না বিধায় বিষয়টি একপ্রকার ধামাচাপার মতোই ছিলো অজানা। কিন্তু রবিবার কাউনিয়া পুলিশের ভুমিকায় চড়বাড়িয়া ইউনিয়নের সাপানিয়া এলাকার এই ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। সেই সাথে প্রতিমন্ত্রীর এপিএস এর ক্ষমতার পরিধিও জানা গেলো।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, শনিবারের ঘটনায় এপিএস একাই নয়, তার বাবা খালেক মীরসহ অপর দুই ভাই আলামীন ও আজমল জড়িত।
সাপানিয়া এলাকার শরিফ বাড়ীর জামাল শরীফের পৈতৃক একখন্ড সম্পত্তি মীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে দাবী করে আসছে। বিশেষ করে বরিশাল সদর আসনের সাংসদ থেকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রনালয়ে জহিদ ফারুক শামীম দায়িত্ব নেওয়ার পর তার এপিএস হাদীস মীরের বাবা ঐ সম্পত্তি নিজেদের দাবীতে আরও শক্ত অবস্থান নেয়।
জানা গেছে, এনিয়ে আদালতে একটি মামলার প্রেক্ষাপটে বিচারক ঐ সম্পত্তির কাছে কোনোপক্ষ যেনো না যায়, সেলক্ষ্যে একটি নোটিশ সাইনবোর্ড আকারে সেখানে বসানো হয়। দুই-একদিনপূর্বে কোনো একসময় সেই সাইনবোর্ড রাতের আধারে কে বা কারা উপড়ে ফেলে। জামাল শরীফ সন্দেহবশত মীর পরিবারকে টার্গেট করে তাদের কাছে বিষয়টির কারন জানতে চায়।
ধারনা করা হচ্ছে, দীর্ঘ বিরোধের মাঝে এই কৈফিয়ত চাওয়ায় তারা আরও ক্ষুদ্ধ হয়। গত ১ মে শনিবার সন্ধ্যার কিছুপূর্বে বাড়ির দক্ষিণ পাশের সড়কের উপর জামাল শরীফ ও তার স্ত্রী শামীমা আক্তার রুমা দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় আচমকা হামলার শিকার হন। জামাল শরীফের অভিযোগ, হামলায় নেতৃত্ব দেয় সেই হাদীস মীর। তার সাথে যুক্ত হন বাবসহ অপর দুই ভাই।
পরিবারিক উদ্যোগে আহতদের তাৎক্ষণিক শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাতে কাউনিয়া থানা পুলিশকে এই ঘটনা অবহিত করে আইনী পদক্ষেপ গ্রহনের ইচ্ছা ব্যাক্ত করলে থানার ভারপ্রাপত কর্মকর্তা বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যেতে আগে সুস্থতার পরামর্শ দেন। যদিও এ পুলিশ কর্মকর্তা এধরনের তথ্য অস্বীকার করেন। কিন্তু হামলাকারীদের মামলা নিলেন কোন গ্রাউন্ডে সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নানা আইনী উপমা দেন এই প্রতিবেদককে।
এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, প্রতিমন্ত্রীর কর্মচারী বিধায় ঘটনার রাতেই উল্টো জামাল ও তার স্ত্রীসহ মেয়ে রজিনা আক্তার রেশমাকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করতে সহসাই পুলিশী সহায়তা পায়। মামলার বাদী হাদীস মীরের সহোদর আলামীন মীরের অভিযোগ, তার বাবা খালেক মীর ও ভাই আজমলকে দা দিয়ে কোপানোর চেস্টা করা হয়েছে। আজমল এখন শেবাচিমে চিকিৎসাধীন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে শেবাচিমের সার্জারী ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান আজমল অতটা আহত নয়। এধরনের রোগীর পক্ষে মামলা দিতে সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব নয়।
হাদীস মীরের ভাষ্য হচ্ছে, জামাল শরীফ নয়, তারাই হামলার শিকার হয়েছে। মামালা দায়েরে পেছনে প্রতিমন্ত্রীর কোনো ভ’মিকা বা তিনি কোনো প্রভাব সৃষ্টি করেননি। বিরোধপূর্ন ঐ সম্পত্তি তিনি ক্রয় করেছেণ। একটি মামলায় আদালত তাদের পক্ষে রায়ও দিয়েছেন। মাঝখানে এসে জামাল শরীফ ঝামেলা পাকাচ্ছেন। যা পুলিশ অবগত হয়েই হামলার অভিযোগ দেয়ায় মামলা গ্রহন করেছে।
এদিকে জামাল শরীফ ও তার স্ত্রী শামীমা আক্তার রুমার আঘাত অতোটা গুরুতর নয় মন্তব্য করে আজ রবিবার তাদের শেবাচিম থেকে নাম কেটে দিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের চিকিৎসকবৃন্দ। বেলা ২ টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে শহরের বংলাবাজার এলাকায় পৌঁছামাত্র জামাল শরীফ দম্পতিকে বহন করা ইজিবাইকটি ঘিরে ফেলে কাউনিয়া থানা পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংশ্লিষ্ট থানার ৩ জন দারোগাসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ এমন কায়দায় তাদের আটক করে, তাতে মনে হয়েছিলো বড় মাপের কোনো আসামী খুঁজে পেয়েছে। এই আটক অভিযানে নেতৃত¦ দেওয়া এস আই জসীম এই প্রতিবেদককে জানান, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিমুল করিমের নির্দেশেই নিজ থানা এলাকা ছেড়ে কোতয়ালী থানা সংশ্লিষ্ট বাংলাবাজারে আসামী ধরতে অবস্থান নিতে হয়েছিলো।
এস.আই জসিম এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি জামাল শরীফ দম্পতিসহ কন্যা রেশমাকে আটকের পর কাউনিয়া থানায় নিয়ে বেশীক্ষণ অবস্থান না করে আদালতে সোপর্দ করেন। বিকেলে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে এসেছেন বলে নিশ্চিত করেন জামাল শরীফ।