আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে এসে পড়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত। যার একটি- মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের তৃতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটারের সামনে লিফটের দরজায় রক্তের দাগ ও অপরটি লিফটের দরজায় আঘাতের চিহ্ন।
এ দুটি আলামত রহস্যের জাল আরও ঘনীভূত করে তুলেছে ঘটনাস্থলে তদন্তে যাওয়া র্যাব ও পুলিশের দুটি টিমকে। তাদের মতে ‘যিনি আগে লিফটে উঠতে চেয়েছেন, তিনি আগে থেকেই আহত ছিলেন। তার হাত থেকেই এ রক্ত লাগতে পারে।
আবার ধস্তাধস্তির কারণে দরজায় আঘাত লাগতে পারে। অবশ্য এটি দুর্ঘটনা কিনা সে বিষয়টিও তদন্তের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাচ্ছে।’ তবে ‘লিফট দরজার অর্ধেকে এসে থেমে ছিল, ডাক্তার আজাদ দরজা খুলে লিফট না দেখে পা বাড়ানোয় নিচে পড়ে যান, সেটিও তদন্ত টিমের কাছে খাপছাড়া লাগছে।
যদি লিফট দরজার মাঝে থেমে থাকে, তবে ভুল করে উঠতে গেলে তার মাথায় আঘাত পাওয়ার কথা। অথবা হাতের কবজিতে। কিন্তু তার মাথায় আঘাত ছিল না। বরং হাতের সোল্ডার ভাঙা ছিল।’ এ রহস্যের জাল ভেদ করতে ৩ দিন ধরে তদন্ত করছে র্যাব ও পুলিশের পৃথক টিম।
এদিকে তদন্তকারীরা এসব রহস্যের উত্তর খুঁজতে মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালে লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকেদের বরিশালে আনার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এছাড়া রহস্য উদ্ঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রম থেমে নেই। হেফাজতে নেয়া মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের ৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও দিনভর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জানা গেছে, ডা. আজাদ মমতা হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতেন। আর একই ভবনের সপ্তম তলার একটি কক্ষে ব্যাচেলর জীবনযাপন করতেন।
গুঞ্জন রয়েছে ওই কক্ষেই তার দুই মাসের সঞ্চিত প্রচুর টাকা ছিল। যা রোগী দেখা ও অপারেশনের ফি বাবদ তিনি উপার্জন করেছিলেন।
তবে এমন গুঞ্জনকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন হাসপাতালটির কর্ণধার বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জহিরুল হক মানিক।
তিনি বলেন, ‘ডা. আজাদের রোগীর সংখ্যা নিতান্তই কম ছিল। আর ২ মাসে ২টি অপারেশনও করেননি তিনি। তার কাছে অনেক টাকা থাকার বিষয়টি ঠিক নয়। তাই এখনও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন এটি দুর্ঘটনা ছাড়া কিছু নয়।’
তবে ডা. এমএ আজাদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন তার পরিবারের লোকেরা। নিহতের ভাই ডা. শাহরিয়ার বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলাও করেছেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত এখনও চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা ৯ জনের মধ্যে ৭ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দু’জনকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখনও কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত আসেনি।
র্যাব ৮-এর অধিনায়ক ও কমান্ডিং অফিসার আতিকা ইসলাম বলেন, র্যাব ও পুলিশ তদন্ত এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসেনি।
২৮ এপ্রিল সোমবার ইফতারের পূর্বে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ থাকা ডা. এমএ আজাদ সজলের মৃতদেহ মঙ্গলবার সকালে নগরীর কালীবাড়ি রোডের বেসরকারি মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার ডান পা ভাঙা ছিল। পিঠে আঘাতের চিহ্ন ছিল, দুই হাতের শোল্ডারও ভাঙা ছিল।