মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) বেলা ১১টায় নগরীর কালিবাড়ি রোডের মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের লিফটের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় লাশ উদ্ধারের পরপরই বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী থানার একটি টিম ও পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর একটি টিম হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছে। কোতোয়ালী মডেল থানার সহকারী কমিশনার মো. রাসেল জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করেন এবং শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্হে প্রেরণ করেন। তিনি আরো বলেন, মৃতের দেহে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। প্রাথমিক ভাবে মনে করেন, তিনি হয়তো উপর থেকে পড়ে গিয়ে নতুবা তাকে কেউ ঠেলে ফেলে দিয়েছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লিফটম্যান, ওই হাসপাতালের শিফট ইনচার্জ ও কর্তব্যরতদের মধ্যে ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন জানান, ডা. আজাদের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের স্বরুপকাঠিতে। আর তার পরিবার ঢাকায় থাকেন। শেবাচিম হাসপাতালে চাকরির সুবাদে তিনি বরিশালেই থাকতেন। প্রাইভেট প্রাকটিসের পাশাপাশি মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের সাততলার একটি কক্ষে (ডরমিটরিতে) থাকতেন তিনি।
তিনি জানান, সোমবার (২৭ এপ্রিল) দিনগত রাত থেকে ডা. আজাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলো না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সকালে মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের লিফটের নিচে তার মরদেহ পরে থাকতে দেখা যায়।
ডা. আজাদকে দিন-রাত যখনই রোগীদের প্রয়োজনে তাকে যখনই ডাকা হতো তখনই পাওয়া যেতো। আজাদের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক বলেও জানান শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির।
এদিকে মৃত চিকিৎসক আজাদের স্বজন ও সহকর্মীরা জানিয়েছেন, শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসক আজাদের স্ত্রী ও দুই সন্তান ঢাকায় বসবাস করেন। এ কারণে প্রায় বছরখানেক যাবত তিনি নগরের কালিবাড়ি রোডের মমতা হাসপাতালের সাত তলার একটি কক্ষে বসবাস করতেন। মঙ্গলবার রাতে সেহেরির সময় তার স্ত্রী ঢাকা থেকে ফোনে যোগাযোগ করে না পাওয়ায় মমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার রুমে তালা দেওয়া দেখে পুলিশে খবর দেয়। সকালে পুলিশের উপস্থিতিতে ওই কক্ষের তালা ভেঙে হয়। এরপর খোঁজাখুঁজি করে হাসপাতালের লিফটের নিচে তার মরদেহ দেখতে পান মমতা হাসপাতালের এক কর্মী। পরে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।
তবে এ মৃত্যুকে প্রাথমিকভাবে সন্দেহজনক বলে মনে করছেন স্বজনরা, তারা ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
যদিও এ মৃত্যু দুর্ঘটনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন মমতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জহিরুল হক মানিক।
এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক নিখোঁজ থাকার বিষয়টি সকালে তাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়। এরপর তারা হাসপাতালে এসে অনুসন্ধান চালিয়ে লিফটের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ও চশমা উদ্ধার করা হয়েছে।
বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোকতার হোসেন বলেন, এ মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তদন্ত করছে। পাশাপাশি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের প্রয়োজন রয়েছে। তাই ময়নাতদন্তের মরদেহ উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে বিষয়টি।
এদিকে, পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর একটি টিম হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত করতে মাঠে নেমেছে। তারা হত্যার ক্লু উদঘাটনে ঘটনাস্থল থেকে আলামত উদ্ধার করেছে বলে জানান পিবিআই’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা। এছাড়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে পিবিআই।