বরিশালের বাহাদুরকে হত্যা চেষ্টা : মহসিন আলমের ৩০লাখ টাকার মিশন
প্রকাশ: ২৭ মে, ২০২০, ১০:৫৬ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার : অন্যের পক্ষ নেয়ায় বরিশালের আলোচিত ভুমিদস্যু হাজী মহসিন আলম আপন শ্যালককে হত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর তার অপকর্মের ফিরিস্তি সবে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। পুলিশ তার রূপাতলির নির্জন ডেরায় অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা বাহাদুরকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত হাতুড়ি- দা ও রক্তমাখা জামাকাপড়সহ বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। সেই সাথে অন্তত ১০ ব্যাক্তির ভূমি দখলের বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেছে। যুবলীগ নেতা বাহাদুরের উপর হামলার ঘটনার পরপরই আত্মগোপনে চলে যাওয়া ভূমিদস্যুতায় একটি বাহিনী গড়ে তোলায় মূর্তিমান আতঙ্ক এই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে ঈদের দিন দেখা গেছে, নামাজ পড়েছে নগরীর নূরিয়া স্কুল সংলগ্ন একটি মসজিদে। ঐ দিন বিকেলেই রূপাতলি হাউজিং এর নিজ বাড়ি হাজী ম্যানশনে এসে পরিধেয় কাপড়ভর্তি একটি ল্যাগেজ নিয়ে বেড়িয়ে যান। অথচ পুলিশ তাকে পলাতক হিসেবে খুঁজছে (!) অন্যের জমি নিজের কজ্বায় নিতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে প্রতিবাদে সোচ্চার ব্যক্তিদের মামলা দায়েরে কৌশলী এই মহসিন এবারই প্রথম ফেঁসে গেলেন শ্বশুরালয়ের সাথে দ্বন্দ থেকে সংঘাতে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভূমি নিয়ে রূপাতলিতে বহুল বিতর্কিত মহসিন বরিশাল প্রেক্ষাপটে এখন আলোচিত নামে পরিণত হয়েছেন।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এই তথ্য দিয়ে জানান, ঈদের দিন বিকেলে আকস্মিক উপস্থিতি এবং আবার উধাও হয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে মহসিন স্থানীয়দের সামনে ঘোষণা দিয়ে যান, বাহাদুরের ঘটনা সামাল দিতে তিনি ৩০ লাখ টাকার বাজেট নিয়ে মাঠে নেমেছেন। উল্লেখ্য, গত ২২ মে রাত নয়টায় নিজের ছোটশ্যালক মোঃ সাইদুর রহমান বাহাদুরকে অপহরণ করে রূপাতলির বটতলা সংলগ্ন আরাফাত হাউজিং এর পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে নিয়ে হত্যার চেস্টা চালায়। এসময় তার দুই চোখে মরিচের গুড়া ঢেলে ও স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে দেয়। পরে তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়।
ভাগ্যচক্রে স্থানীয় জনৈক এক চায়ের দোকানী যুবক এই অপহরনণর দৃশ্য অবলোকন করে এবং অপর এক ব্যক্তি ঐ নির্জন ঘরে গোঙানির আওয়াজ শুনে বাহাদুরকে উদ্ধারে তার পরিবারকে খবর দেয়। ২৬নং ওয়ার্ড অর্থাৎ জাগুয়া এলাকার যুবলীগ নেতা বাহাদুর বর্তমানে ঢাকা শেরে বাংলা নগরে চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে তার পরিবারসূত্রে জানা গেছে। গত ৪ দিনে তাকে ৩ দফা অপারেশনের পর চিকিৎসকরা এখন বলছেন সময়সাপেক্ষে তার একটি চক্ষু স্বাভাবিক করে তোলা সম্ভব। অন্যটি অন্ধত্ব বরন করতে হবে।
একাধিক সূত্র ও পুলিশ নিশ্চিত করেছে, রূপাতলির বটতলা এলাকায় চেয়ারম্যান বাড়ী হিসেবে পরিচিত বাহাদুরদের ঘর লাগোয়া বিক্রিত একটি সম্পত্তি বোনজামাই নিজের দাবী করলে নীতিগত কারনে তার শ্বশুর পরিবার ক্রেতার পক্ষ নেয়। এনিয়ে মহসীন ক্ষুদ্ধ হয়ে মোঃ মিজানুর রহমান মিল্টন ও মোঃ তৌহিদুর রহমান তসলীম দুই ভাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিলে তাদের ছোটভাই বাহাদুর এর প্রতিবাদ করায় সেই থেকে ক্ষুদ্ধ মহসীন প্রতিশোধ নেওয়ার প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে আসছিলো।
২মে তারই প্রতিফলন হচ্ছে এই অপহরন পরবর্তী ঘটনা। আহত বাহাদুরের ভাই তসলিম মহসিনকে আসামী করে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে ২৩ মে ঘটনার পরের দিন। পুলিশ এঘটনার তদন্তে মাঠে নামলে ২৪ মে দুপুরে অনেকটা নাটকীয়ভাবে কোতয়ালী মডেল থানার এসআই আরাফাত হোসেন সেই হাউজিং এর পরিত্যক্ত বাড়ি টার্গেট করে সেখানকার একটি তালাবদ্ধ রুম খুলে উদ্ধারকৃত আলামতের সন্ধান পায়। এই রুমেই অপহরনের পর বাহাদুরের উপর নির্যাতন চালানো হয়েছিলো।
অবশ্য পুলিশ প্রথমে বাহাদুরের উপর হামলার ঘটনার পিছনে অন্য কোনো কারন বিশেষ করে মাদক নিয়ে বিরোধের বিষয় সন্দেহের তালিকায় এনেছিলো। কিন্তু ঐ পরিত্যক্ত বাড়ির কক্ষ থেকে বাহাদুরের উপর হামলার সার্বিক আলামত খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি সেখানকার একজন ভাড়াটিয়া যুবককে আটকের অভিনয় করলে সে স্বীকার করে সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ঘটনার বর্ণনা দেয়। এই যুকবের দেয়া তথ্যের ভিক্তিতেই ঐ তালাবদ্ধ ঘর হামলার স্থান হিসেবে নির্ণয় করতে পুলিশ সক্ষম হয়। ঐ পরিত্যক্ত বাড়িটির মালিক মহসিন নিজেই।
ঐ বাড়ি নিয়েও রয়েছে নানা গল্প কাহিনী । স্থানীয় সূত্রগুলো এখন মুখ খুলতে শুরু করায় জানা যায়, আরাফাত হাউজিং এর এই পরিত্যক্ত বাড়িটি মহসীন টর্চার সেল হিসেবে ব্যাবহার করতেন। বিশেষ করে বিভিন্ন র্ব্যাক্তির জমি দখল পরবর্তী প্রতিবাদ করলে আপোস-মিাংসার নামে তাদের এই বাড়িতে ডেকে এনে নির্যাতন, আবার কখনও ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিস্তেজ করে দিতে সক্ষম হন। এধরনের বেশ কিছু উদাহরন এই প্রতিবেদক সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, শ্বশুরালয়ের সাথে দ্বন্দের শেষ অধ্যায় বাহাদুরের উপর হামলার ঘটনায় চেয়ারম্যান বাড়ীর অন্যান্য পরিবার জামাই মহসিনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ছন্দপতন ঘটে তার দাপটীয় একটি স্বর্ণযুগের। নলছিটির দপদপিয়ার বাসিন্দা এই মহসিন ৯০ দশক পরবর্তী সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়ক থাকাকালীন চাকরী থেক মহসীন রূপাতলী থেকে জাগুয়া এলাকা পর্যন্ত কয়টি জমি দখল নিয়েছে তা যেনো অগনিত। তবে অন্তত ১০ টি ঘটনার বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে কালিজিরা এলাকার সালাম খান , আনিচ হাওলাদার ও জাগুয়ার এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মুদাচ্ছির, খসরু আলম এবং শেরে বাংলা সড়কের সার্ভেয়ার সাইফুল আলমসহ ইসমাইল হোসেন নামক এই ব্যাক্তিদের ক্রয়কৃত সম্পত্তি অলৌকিকভাবে মালিক এখন মহসিন। এর মধ্যে ২৪নং ওয়ার্ডের মুদাচ্ছিরের পৈতৃক একটি পুকুর রাতের আধারে দখল নিতে ভরাট করার কাহিনী মুখরোচক গল্পের ন্যায় পরিনত হয়েছে।
জমি দখলের মধ্যে পুলিশ সালাম খান ও সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট ইসমাইলও আইনের আশ্রয় নিয়ে পেরে তার সাথে পেরে ওঠেনি।
অপর একটি সূত্র বলছে , অন্যের জমি দখল করে একসময়ের স্বল্প অর্থের মালিক মহসিন বর্তমানে বরিশালে ক্রোড়পতিদের মধ্যেকার একজন। তিনি নিজেই এখন গড়ে তুলেছেন সশস্ত্র একটি বাহিনী। মূলত যুবকদের সমন্বয়ে গঠিত এই বাহিনীর কাজ হচ্ছে জমি দখলের সময় সশস্ত্র অবস্থান নেওয়া।
এসব কারনেই শ্বশুরালয়ের সাথে মহসিনের সম্পর্কের অবনতি চরম আকার ধারন করে। সর্বশেষ নিজ শ্যালক বাহাদুরকে হত্যা করে তার শক্তি সামর্থ্য যেমন জানান দিতে চেয়েছিলো, তদ্রুপ প্রতিশোধ নিয়ে শ্বশুরালয়কে দমনের পরিকল্পনা ছিলো বলে ধারনা করা হচ্ছে। বাহাদুরকে হত্যা চেষ্টায় ব্যার্থ হওয়ার পর মহসিন চেয়েছিলো ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে দায় এড়িয়ে যেতে। কিন্তু বাহাদুর বেঁচে যাওয়ায় মহসিন কীভাবে অপহরন পরবর্তী নির্যাতন চালায় তা ফাঁস হয়ে যায়। এর পর থেকেই এই ভ’মিদস্যু পলাতক রয়েছে।
একটি নির্ভরযোগ্যসূত্র জানায় , ঈদের দিন কিছু সময়ের জন্য এলাকায় ফিরে এসে বেশ দাপটের সাথে দম্ভ প্রকাশ করে বলেন, বাহাদুরের মামলাকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তার ভাষায় , তিনি ৩০ লাখ টাকা বাজেট করে মাঠে নেমেছেন।
মহসিনকে আটকে পুলিশের ধীরগতির সাথে এই মন্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়ায় বাহাদুরের মামলার ভবিষ্যত নিয়ে কোনো কোনো মহল সন্দীহান । এদিকে মহসীনের কারনে বেহাত হয়ে যাওয়া জমির মালিকরা একট্টা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
নিজ শ্যালক বাহাদুরের চোখ নষ্ট করে দেয়া ভুমিদস্যু মহসিন আলম ওরফে দালাল আলম ওরফে জমির দালাল হাজি আলম এখন দিয়েছে গাঢাকা।
বরিশাল যুবলীগ নেতা সাইদুর রহমান বাহাদুর ২২ মে বাসা থেকে বের হওয়ার পরে কুখ্যাত জমির দালাল ও ভুমিদস্যু মহসিন আলম ওরফে হাজি আলম ও একদল কিলার ধরে নিয়ে মধ্য যুুগীয় কায়দায় দুটি চোখ স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে মরিচ দিয়ে দেয়। এছাড়া হাটু,কনুইসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ইট ভাঙ্গার মত হাতুড়ি পিটা করে। বাহাদুরকে প্রথমে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ঐ রাতেই ঢাকায় প্রেরন করা হয়। বাহাদুরের সাথে থাকা তার বড় ভাই মিল্টন জানিয়েছে বাহাদুরের চোখের অপারেশন হয়েছে হয়তো বাহাদুর আর কোন দিন আলো দেখবেনা। এছাড়া হাটুসহ শরীরের ভাঙ্গাস্থানগুলোর চিকিৎসা দেয়া হবে পঙ্গু হাসপাতালে। বর্তমানের চোখের চিকিৎসা চলছে। এদিকে ২৬ মে বাহাদুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে বাহাদুরের মায়ের বিলোপে কাদঁছে আকাস বাতাস। তিনি ভুমি দস্যু মহসিন ওরফে মহসিন আলম ওরফে হাজি আলমের গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন।