বরিশালের গাইনী ডাক্তার তানিয়া আফরোজের হাতে মৃত্যু ও পঙ্গু হচ্ছে নারীরা
প্রকাশ: ২ মে, ২০২০, ৫:০২ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
*টাকাই তার কাছে সব কিছু
* সরকারি দ্বায়িত্ব থেকে প্রাইভেট প্রাক্টিসে ব্যস্ত
*এখন মামলার আসামী
*ম্যানেজ করে রেহাই পেয়ে যান
মামুনুর রশীদ নোমানী :বরিশালের গাইনি ডাক্তার তানিয়া আফরোজ। সরকারি কর্ম বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালে। প্রাইভেট প্রাক্টিসে জড়িত বরিশাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল,রয়েল সিটি হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চেম্বার রয়েছে ডাঃ তানিয়া আফরোজের । তিনি এখানেই ২৪ ঘন্টার ১৩ ঘন্টা পার করেন সিজারিয়ান অপারেশন ও রোগী দেখতে। দিনে রাতে সমানে সমান। তার মুল কর্মস্থল বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে সময় দেন খুবই কম। যখন তিনি সেখানে রোগী দেখেন তখন সেসব রোগীদের কখনো ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আবার কখনো রয়েল সিটি হাসপাতালে তার কাছে এসে দেখা করার কথা বলেন। রোগীকে বলে দেন সরকারি হাসপাতাল ভালো চিকিৎসা হবেনা। বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ব্যক্তি ডাঃ দেলোয়ারের সাথে তার খুব সখ্যতা তাই ডাঃ তানিয়া আফরোজের কোন জবাবদিহিতা নেই। ডাঃ তানিয়া আফরোজ বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী হলেও টাকার প্রভাবে আবার বরিশালে। তখনকার সময়ে তিনি বানারীপাড়ায় যেতেন প্রাইভেট কারে করে শুধু হাজিরা খাতায় সই দেয়ার জন্য। সই শেষ কর্ম শেষ। শুরু হত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে প্রাইভেট প্রাক্টিস। ডাঃ তানিয়ার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল থেকে। সেই ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথেও তিনি প্রতারনা করেছেন বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানায়। করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়লে বরিশাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে আসা বন্ধ করে দেন। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি অযুহাত দিয়ে এড়িয়ে চলেন। তানিয়া আফরোজ এসময়টায় নিরাপদ হিসেবে বেছে নেন রয়েল সিটি হাসপাতাল। এখানেই ভর্তি করেন ২০ মার্চ সোনিয়াকে। সোনিয়ার সিজারিয়ান অপারেশন করেন তিনি। ভুল অপারেশন হলে গত ২৩ এপ্রিল আবার ভর্তি হন সোনিয়া। ২৭ এপ্রিল অপারেশন থিয়েটারে ব্লাড ছাড়া ভুল অপারেশনের কারনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন সোনিয়া। মৃত্যুর ঘটনায় সোনিয়ার পিতা কালাম হাওলাদার ডাঃ তানিয়া আফরোজসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারার অভিযোগ এনে ‘বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৩০।
গাইনী চিকিৎসক তানিয়া আফরোজের
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু -১
“সোনিয়া ”
সোনিয়া বেগম গত ২০ মার্চ তানিয়া আফরোজের অধিনে বরিশাল রয়েল সিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সিজার করে একটা বাচ্চা হয়। বাচ্চা হওয়ার পরে সিজারের রোগীর ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হয়। তাই তারা পরবর্তীতে আবার গত ২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ডাঃ তানিয়া আফরোজের অধিনে রয়েল সিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডাক্তার দেখে বলেন হয়তো কাটা জায়গার ভিতরে কোন অপরিষ্কার রয়েছে যার জন্য এই ইনফেকশন হয়েছে। আবার অপারেশন করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার এ ভর্তি হওয়ার পরেও তারা কোন কিছু না করে ২৭ এপ্রিল সকাল আটটার সময় তাকে নিয়ে যায় অপারেশন করতে ওটিতে। রোগীর স্বজনদের ভাষ্য রোগী বেলা দুটার সময় মারা গেলে তারা বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে তারা মৃত বলে ঘোষণা করে।
সোনিয়ার ছাড়পত্রে দেখা গেছে ডাঃ তানিয়া আফরোজের অধীনে ভর্তি হন। অপারেশনে ছিলেন ডাঃ মনিরুল আহসান,ডাঃ রফিকুল বারী,ডাঃ সজিব।
গাইনী চিকিৎসক তানিয়া আফরোজের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু -২
বরিশাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের গাইনী ডাক্তার ও উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তানিয়া আফরোজ এর অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবী করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন নবজাতকের বাবা সিএন্ডবি ১ নংপুলের বাসিন্দা টিআইবি কর্মী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তার অভিযোগে বলেন, তার স্ত্রী কামরুন নাহার লিজা ডা. তানিয়া আফরোজ এর একজন রোগী। তানিয়ার অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর এ ঘটনা ঘটে।
ডা: তানিয়া আফরোজের
ভুল অপারেশনের শিকার গৃহবধু :
নগরীর স্ব-রোডের বাসিন্দা লিলি বেগম নামে এক প্রসুতি নারী সিজারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২০১৭ সালের ২৮ই আগষ্ট সকালে ডা: তানিয়া আফরোজ প্রসুতি রোগী লিলি বেগমের সিজার অপারেশন করলে রোগির একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। কিন্তু সিজার অপারেশন শেষে রোগির সিজার করা স্থানে কোন রকম পরিষ্কার না করেই ঐ স্থানে রক্তসহ শেলাই করে দেয় ডাক্তার তানিয়া আফরোজ। অসুস্থ্য রোগী লিলি বেগমের স্বামী তিনি জানান সিজারের দুইদিন পরেই লিলি বেগমের সিজারের ঐ স্থানে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু করে পরে ডা: তানিয়া রোগীর অবস্থা বেগতিক জানালে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। পরীক্ষা শেষে বিভিন্ন ধরনের ঔষুধ খাওয়ার কথা বলেন কিন্তু এতেও রোগীর কোন ভালো ফলাফল মেলেনি গত ৭ই সেপ্টেম্বর বরিশাল সদর জেনারেল হাসপাতাল থেকে অসুস্থ্য রোগী লিলি বেগমকে তার পরিবারেরা ডা: আরিফ মেমোরিয়াল হসপিটালে ভর্তি করেন। ৯ সেপ্টেম্বর ডা: মো: নজরুল ইসলাম অসুস্থ্য রোগী লিলি বেগমের সিজার করা ঐ স্থানে অপারেশন করে ডা: তানিয়া আফরোজের ভূল চিকিৎসার কারনে জমে থাকা পয়জন বের করলে রোগী কিছুটা সুস্থ্য হয়। উক্ত বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্র -পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে গোমর ফাঁস শুরু হয় ডা: তানিয়া আফরোজের।
২০১৭ সালের ১৫ জুন
সংবাদপত্রের শিরোনামে তানিয়া আফরোজ
বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী বিশেষজ্ঞ) তানিয়া আফরোজ’র সিজারিয়ান অপারশেনের মূল দায়িত্ব পালন করছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রিতা রানী শীল।জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী বিশেষজ্ঞ) ডা.তানিয়া আফরোজ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বরিশাল শহর থেকে প্রাইভেটকার যোগে বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিছু সময়ের জন্য এসে হাজিরা দিয়ে পূনরায় ফিরে গিয়ে বরিশালে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন সহ প্রাইভেট প্রাকটিসে ব্যস্ত সময় পাড় করেন।
ডা: তানিয়া আফরোজের অপচিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু, অপারেশন করে রোগীর পেটের ভিতরে গজ কাপড় রেখে সেলাই করে দেওয়া। একই রোগীকে বারবার অপারেশন করাসহ বিবিধ অভিযোগ রয়েছে ডাঃ তানিয়া আফরোজের বিরুদ্ধে।
১৯৮২ সনের অধ্যাদেশে রয়েছে সরকারী ও বেসরকারী চিকিৎসকদের সরকারের ফি নির্ধারনের পাশাপাশি রেজিস্ট্রি চিকিৎসকদের কর্তব্যকালীন সময় বাহিরে প্রাকটিস না করার নির্দেশনা থাকলেও তানিয়া আফরোজ কোন আইন বিধি অদ্যাদেশ মানেন না।
এব্যাপারে তানিয়া আফরোজের মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেন নি।