বরগুনায় প্রাথমিকে ৯৯২ শিক্ষকের পদ শূন্য, পাঠদান ব্যাহত
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:২৪ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
বরগুনা (দক্ষিণ) সংবাদদাতা
বরগুনা জেলায় ৭৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৯২টি শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ২০৯টি প্রধান শিক্ষক ও ৭৮৩টি সহকারী শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানসহ দাপ্তরিক কাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যার। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদরে ২২৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। আমতলী উপজেলায় ১৫২টি বিদ্যালয়ে ৪১টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। তালতলীতে ৩০, পাথরঘাটায় ৩৫, বামনায় ২৬ ও বেতাগীতে ৩১ জন প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষকের সংকটও চলছে জেলার বিদ্যালয়গুলোতে। বরগুনা সদরে ২৩৮, আমতলীতে ৬৪, তালতলীতে ১৪০, পাথরঘাটায় ১৬১, বামনায় ৫৫ ও বেতাগীতে ১২৫টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
সরেজমিনে বরগুনার জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ বছরে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবসরজনিত, মৃত্যু ও সরাসরি প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের পদে নিয়োগ না থাকায় পদগুলো শূন্য হয়ে পড়েছে। আর ঐসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হলেও সহকারী শিক্ষকের বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকায় অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সদর উপজেলার ছোনবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পাঁচটি পদ আছে। কিন্তু বর্তমানে তিন জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে দুটি পদ শূন্য। এই বিদ্যালয়ে ১২৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, তাকে প্রায়ই দাপ্তরিক কাজে জেলা শহরে যেতে হয়। তখন মাত্র দুই জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে পড়ালেখা ঠিকমতো হবে না।
বেতাগী উপজেলার উত্তর কাজীরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শিক্ষক সংকট থাকায় শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পড়ানো যায় না। দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি ক্লাশ করাতে হিমশিম খেতে হয়। এদিকে, সারাদেশে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সহকারী শিক্ষকের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বরগুনা জেলায় লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ২ হাজার ৫৩৭ জন। যার ফলাফল এখনো প্রকাশ হয়নি। জেলার শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগ দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছেন ফলাফল প্রত্যাশীরা।
শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগ বাস্তবায়ন কমিটির বরগুনা জেলা আহবায়ক মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগ উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে বরগুনায় প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও প্রাক প্রাথমিক মিলিয়ে শূন্যপদ হাজারের অধিক, যা অনেক বিদ্যালয়েই দুই শিফটের চাহিদা অনুযায়ী তালিকা করা। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এক শিফটে চলবে বলে আমরা বিদায়ি সচিব থেকে জানতে পারি। সেক্ষেত্রে পাঠদানের জন্য সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগের প্রয়োজন। প্রকৃত শূন্য পদ অনুযায়ী নিয়োগ হলে প্রাথমিকে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বরগুনা জেলায় শূন্য পদের জন্য যে আন্দোলন হচ্ছে, তা সমাধানের বিষয় আমাদের হাতে নেই। শূন্য পদের তালিকা ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘বরগুনা জেলায় আগামী বছর সব বিদ্যালয়ে এক শিফটে ক্লাস পরিচালনা করার মতো শ্রেণীকক্ষ আমাদের নেই।’