ফাঁদে ফেলে বারবার টাকা দাবি করায় দেবীকে হত্যা করেন পরকীয়া প্রেমিক
প্রকাশ: ৯ এপ্রিল, ২০২১, ৬:০১ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
যশোর জেলা প্রতিনিধি : প্রেমের ফাঁদে ফেলে বারবার টাকা দাবি করায় মণিরামপুরের দেবী টিকাদারকে হত্যা করা হয় বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তার পরকীয়া প্রেমিক এবং চরমপন্থী দলের সদস্য পাচু বিশ্বাস।
গত বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি শেষে আসামি পাচুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক মামুনুর রহমান।
গ্রেফতার পাচু বিশ্বাস একই উপজেলার লেবুগাতী গ্রামের রাজবংশীপাড়ার জীবন বিশ্বাসের ছেলে। এর আগে বুধবার রাতে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ষোলগাতিয়া
গ্রামের আত্মীয় বাড়ি থেকে পাচুকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম। এরপর তার দেয়া তথ্য মতে, মণিরামপুরের কুচলিয়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে দেবী টিকাদারকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ৩ এপ্রিল রাত আটটার দিকে কে বা কারা মোবাইল ফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় মণিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামের পীযুষ টিকাদারের স্ত্রী এক সন্তানের জননী দেবী টিকাদারকে। তিনি নিখোঁজ থাকার দুইদিন পর ৫ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে একই এলাকার মুকুন্দ সরকারের স্ত্রী রেখা সরকার আম কুড়াতে তাদের পুকুরপাড়ে গেলে দেবী টিকাদারের লাশ দেখতে পান। তার বুকসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।
লাশ উদ্ধারের দিনই নিহতের স্বামী পীযুষ অজ্ঞাতনামা আসামি করে মণিরামপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি ক্লুলেস হওয়ায় জেলা পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িত আসামিকে গ্রেফতারের জন্য ডিবি পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে ডিবি পুলিশ। পরে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে গত বুধবার রাত ১০টার দিকে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ষোলগাতিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে নিহতের প্রেমিক পাচু বিশ্বাসকে তার ভগ্নিপতির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেবী টিকাদারকে হত্যার কথা স্বীকার করেন পাচু। পরে তারই স্বীকারোক্তিতে বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত একটি চাকু কুচলিয়া গ্রামের মুকুন্দ সরকারের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।
এসআই মফিজুল জানিয়েছেন, পাচু বিশ্বাসের সঙ্গে দেবী টিকাদারের দীর্ঘদিনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ২০০৬ সালের শেষের দিকে দেবী টিকাদার স্বামী ও এক পুত্র সন্তানকে ফেলে পাচুর সঙ্গে পালিয়ে ভারতে চলে যান। প্রায় দুই বছর সেখানে থাকার পর আবার তারা দেশে ফিরে আসেন। এরপর দেবী টিকাদার স্বামীর সংসার করলেও গোপনে পাচুর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। কিন্তু পাচু বিশ্বাস চরমপন্থী সদস্য হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা থাকায় তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময় টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন দেবী।
খুন হওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে তাকে একইভাবে আগের মতো ব্ল্যাকমেইলিং করে ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন দেবী টিকাদার। এরপর তার কাছে আরও ৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু পাচু তাকে ২ হাজার টাকা দিতে চাইলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন দেবী। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি দেবী টিকাদারকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, এজন্য গত ৩ মার্চ রাতে তিনি দেবীকে টাকা দেয়ার কথা বলে ফোন করে এলাকার মুকুন্দ সরকারের বাগানে দেখা করতে বলেন। রাতে দেবী টিকাদার সেখানে এলে পাচু চাকু দিয়ে উপুর্যপুরি আঘাত করে তাকে হত্যা করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর চাকুটি পাশের পুকুরে ফেলে দিয়ে তিনি খুলনার ডুমুরিয়ার শোলগাতিয়া গ্রামে তার এক ভগ্নিপতির বাড়িতে চলে যান। সেখানে তিনি দু’দিন মাছের ঘেরে মাটি কাটার কাজও করেছেন। গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হলে দেবীকে হত্যার কথা স্বীকার করে পাচু বিশ্বাস আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।