রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রাইমারির শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়েছে। নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আসা উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা না পেয়ে এমন অভিযোগ করেছেন অবিভাবকরা। তাদের দাবি এরসঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং সংশ্লিষ্ট লোকজন জড়িত। জানা যায়, ২০২১ অর্থবছরে মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। শিক্ষার্থীদের কিট অ্যালাউন্স হিসেবে ১ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে বৃত্তির ১৫০ টাকা করে ৬ মাসের ৯শ’ টাকা অভিভাবকদের নিজস্ব নগদ অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাঙ্গাবালী উপজেলার ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪ হাজার ৯৩৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ হাজার ১৮ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। আর ওই সব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির সেই টাকা উত্তোলন করতে গিয়েই বিপত্তির মধ্যে পড়ছেন কিছু কিছু অভিভাবকরা। একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিং নগদে আসার পর সেই টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ক্যাশ আউট হয়েছে অজানা একটি এজেন্ট নম্বরে। এ বিষয়ে উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ভুক্তভোগী এক অবিভাবক বলেন, ‘আমার ৫টা মেয়ে, অনেক কষ্টে পড়া-লেখা করাই। মেয়ে রুবিনা কোড়ালিয়া এ রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
উপবৃত্তির ৯৫০ টাকা নগদে আসে টাকা উঠাতে দোকানে গেলে দোকানদার বলে টাকা অন্য নম্বরে ক্যাশ আউট হইছে। অথচ ওই নম্বর আমার অচেনা। নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। এর আগেও আমার মেয়ের উপবৃত্তির ১৯শ’ টাকা নিয়ে গেছে। একই প্রতিষ্ঠানের আরেক অবিভাবক বলেন, ‘আমার দুই নাতি জান্নাতুল ও বাইজিদ একজন প্রথম শ্রেণিতে, আরেকজন পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে সবার মোবাইলে নগদে টাকা আসে জেনে আমি স্থানীয় বাজারে দোকানির কাছে গেলে, দোকানদার জানায় আপনার টাকা ক্যাশ আউট হয়েছে। শুধু নাতিদেরই নয় অনেক বাচ্চার উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারে নাই।’ উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের টুঙ্গিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক শামিম শিকদার বলেন, মোবাইলে মেয়ের উপবৃত্তির টাকা আসছে দেখেছি কিন্তু দুইদিন পর দোকানে টাকা উঠাতে গিয়ে দেখি টাকা নাই। এর আগেও মাইয়ার পোশাকের জন্য টাকা আসছিল তাও নিয়া গেছে। মাস্টারেগো কাছে গিয়াও কোনো ধরনের ফয়সালা হয় নাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, গত জুলাই মাসের ১৯ তারিখের আগে যারা টাকা উত্তোলন করেছে তারা টাকা পেয়েছে। তবে ১৯ তারিখের পর যারা টাকা উত্তোলন করেনি তাদের টাকা উধাও হয়েছে। অনেক অভিভাবক আমাদের কাছে টাকা তুলতে এসে আবার খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কাউখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সালাম মিয়া বলেন, ‘মূলত টাকা ক্যাশ ইন হলে কোনো এসএমএস আসে না। যার কারণে অধিকাংশ অভিভাবকগণ জানেও না যে তাদের ফোনে টাকা আসছে। গত জুলাই মাসে ১৯ তারিখের আগে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পিন নম্বর ম্যাস করেনি, আবার এর পরে উঠাতে গেলে ক্যাশ আউট দেখায়। অধিকাংশ অভিভাবক এসে অভিযোগ জানায় তবে আমাদের তো কিছু করার নেই।’ রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের দপ্তর থেকে শিক্ষার্থীদের চাহিদা দাখিল করেছি। এরপরে নগদ থেকে যেই টাকাটা ছাড় করা হইছে এ রকম কোনো ম্যাসেজ আমরা পাইনি। শুধু অভিভাবকদের কাছ থেকে শুনছি। যারা ১৯শে জুলাইয়ের পরে যারা টাকা তুলতে গেছে অনেকেরই দেখা যাচ্ছে যে টাকা ক্যাশ আউট হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অভিভাবক জানে না। এরকম আমরা মেসেজ পাইতেছি। তবে আমাদের কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি, মৌখিকভাবে জানিয়েছে। আমরা অধিদপ্তরের উপবৃত্তির সেলে জানিয়েছি।