প্রতিমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত সহকারী নতুন মিশন নিয়ে মিডিয়ার দ্বারে দ্বারে
প্রকাশ: ১৯ মে, ২০২০, ১:৪০ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার : নিজের অপকর্ম ঢাকতে সন্ধ্যা থেকে রাত সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থতায় বরিশাল মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের ব্যাক্তিগত সহকারী হাদীস মীর। নিজেকে এখন সাচ্চা ধোয়া তুলসী পাতা রূপ দেয়ার পাশাপাশি পুলিশের ইজ্জত রক্ষায় সেই মিডিয়ার দরজায় কৌশলে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। পড়শী এক দম্পতির সাথে বিরোধে নাটকীয় কায়দায় পুলিশ দিয়ে হয়রানির খবর প্রকাশিত হওয়ার এক দিনের ব্যাবধানে নিজেকে মিডিয়ার দরজায় সোপর্দ করেছেন নিজের পক্ষে একখন্ড সংবাদ প্রকাশে। যদ্দুর তথ্য পাওয়া গেছে তাতে মিডিয়ার মোড়লরূপী দুই যুবক হাদীস মীরের স্বপক্ষে সংবাদ তৈরীতে এক বিকেল বৈঠক করেছে।
সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিমন্ত্রীর এই ব্যাক্তিগত সহকারীর বিরোধী পক্ষকে কলম দিয়ে তুলোধনা করতে বিশাল এক সংবাদ প্রকাশ করা। আজ সোমবার বিকেলে বরিশালের রঙিন একটি আঞ্চলিক পত্রিকার পাশাপশি একটি অনলাইন দৈনিক পত্রিকা কার্যালয়ে চলে সংবাদ তৈরীর ঘষামাজা। এর আগে শর্তস্বরূপ টাকার লেনদেন সম্পাদন করে হাদীস মীরের একজন ঘনিষ্টজন। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, শর্তের আলোকে মিডিয়ার মোড়লরূপী ঐ দুই যুবক পৃথক অবস্থান থেকে দায়িত্ব নিয়েছে অধিকাংশ আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা ও কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে এই সংবাদ ফলাও করে প্রকাশ করা হবে। যদি এ তথ্যের ব্যত্যয় না ঘটে তাহলে আগামীকাল মঙ্গলবার এর প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যেতেও পারে।
ঐ সূত্রটি নিশ্চিত করেছে, একটি আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক তার সহকর্মীকে দিয়ে এক বিকেল ধরে বিশাল এক প্রতিবেদন তৈরী করেছেন। সেখানে হাদীস মীরকে উপস্থাপন করা হয়েছে তিনি নিজ এলাকা চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সাপানিয়ায় জমি কিনে হয়রানির শিকার। পড়শি জামাল শরীফ তার পিছু নেওয়ায় স্বস্তিতে নেই। উপরন্তু গত শনিবার সন্ধ্যায় তার পিতা খালেক মীর ও দুই ভাই আলামীন ও আজমল হামলার শিকার হলেও প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। যেকারনে পুলিশ আইনগত সহায়তা দিতে একটি মামলা নিয়েছিলো এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেই পড়শী জামাল শরীফ ও তার স্ত্রী-কন্যাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
কিন্তু কীভাবে এই মামলা দায়ের হলো এবং পুলিশ যেভাবে আসামী আটক করেছে, সেই ঘটনা যে বড়ই পীড়াদায়ক ছিলো তো বটেই বরং বরিশালের ইতিহাসে পুলিশের এধরনের পদক্ষেপের নজির খুবই বিরল। এই মন্তব্য সাপানিয়া এলাকার সচেতন মহলের। আলোচনায় উঠে এসেছে প্রতিমন্ত্রীর প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরে হাদীস মীর তার এলাকা সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানায় বেশ প্রভাব বিস্তার করে এই জমি নিয়ে দ্বন্দের আগাগোড়া পুলিশকে ব্যাবহার করে আসছিলো। এমনকি আদালতের আদেশও উপেক্ষা করে চলছিলো একটি কৌশলী পথ অবলম্বনে।
এরই মাঝে গত শনিবার সন্ধ্যায় আকস্মিক জামাল শরীফ ও তার স্ত্রী রুমা আক্তারকে পিটিয়ে যখম করে। এই দম্পতির অভিযোগ, ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত জমি নিয়ে আদালতের স্মরনাপন্ন হওয়ায় হাদীস মীর ক্ষুদ্ধ হয়েই তার পরিবারকে লেলিয়ে দিয়েছিলো, অন্তত থামিয়ে দিতে সতর্কস্বরূপ। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত ঘটে। আহত ঐ দম্পতি ঘটনার পরপরই থানায় আইনের আশ্রয় নিতে গেলে পুলিশ প্রতারনা করে। চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে তাদের শেবাচিমে পাঠিয়ে উল্টো ঐ রাতে হাদীস মীরের পক্ষে তার ভাই আজমল একটি মামলা দায়ের করে। অভিযোগ আনা হয় তার ভাইসহ পিতাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়।
প্রশাসনেরই একটি সূত্র জানায়, অতি উৎসাহী পুলিশ মামলাটি গ্রহনরে পর আসামী আটকে নাটকীয় ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ঘটনার পরদিন রবিবার দুপুরে শেবাচিম থেকে ফেরার পথে জামাল শরীফ ও তার স্ত্রীসহ এক কন্যাকে নগরীর বাংলাবাজার এলাকা থেকে আটক করে।
ঐ সূত্রটি জানায়, সাপানিয়ায় সেদিন কী ঘটেছিলো তা জানতে একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার এসআই জসিমকে ঘটনাস্থলে যেতে নির্দেশ দেন। মাঠ পুলিশের এই কর্তা প্রকৃত ঘটনা চেপে গিয়ে উল্টো হাদীস মীর পরিবারের পক্ষে কথা বলায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঐ রাতে মামলাটি গ্রহনে উৎসাহ পায়। নেপথ্যে রয়েছে আর্থিক বিষয়। সবকিছুর মূলে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের প্রভাব সহায়ক হয়েছে এবং পুলিশ আগামীতে মন্ত্রীর সুনজরে থাকার কৌশলও নিয়েছে হাদীস মীরের পক্ষ নিয়ে।
এই খবর মিডিয়া পাড়ায় পৌঁছনো মাত্র শূরু হয় প্রতিমন্ত্রীর পিএস এর পক্ষে তদবীর। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি একটি আঞ্চলিক পত্রিকার সম্পাদক নিজেই প্রকাশ্যে এই ঘটনা সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রকাশে বিরত রাখতে বিশেষ করে অনলাইন দৈনিক পত্রিকাগুলো নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যার্থতায় রাতেই হাদীস মীর অধিকাংশ অনলাইন দৈনিকসহ প্রিন্ট মিডিয়ায় শিরোনাম হন, প্রতিমন্ত্রীর পিএস হয়ে কীভাবে ক্ষমতার দম্ভে তিনি ভাসছেন।
একটি সূত্র জানায়, প্রকাশিত সংবাদে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসায় শুধূ হাদীস মীর নয় কাউনিয়া থানা পুলিশও বিতর্কের মুখে পড়ে। এতে লজ্জিত নয়, ক্ষুদ্ধ হয়ে হাদীস মীর আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েকজন সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের চেষ্টায় ঘোরেফেরেন বিভিন্ন মহলে। কিন্তু তারা মিডিয়া কর্মীদের সাথে সাংঘর্ষিক সম্পর্ক তৈরী না করে বরং তার পক্ষে এবং জামাল শরীফের বিপক্ষে সংবাদ প্রকাশের পরামর্শ বাতলে দেয়।
তারই আলোকে দুটি পত্রিকা কার্যালয় ও একটি দৈনিক পত্রিকা সম্পাদকের বাসভবনে কয়েকদফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে থেকেই গাইডলাইন তৈরী করে দেওয়া হয় কীভাবে হাদীস মীরকে সাচ্চা ব্যাক্তি হিসেবে এবং কাউনিয়া থানা পুলিশকে বিতর্কের বাইরে রাখতে সংবাদ প্রকাশ করা যায়।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পূর্ব হাদীস মীর যখন ব্যাস্ত তখন জামাল শরীফ মেট্রোপুলিশ কমিশনার সাহাবুদ্দিন খানের সাথে সাক্ষাৎ করে পুলিশী নিপীড়নের অভিযোগ অবহিত করতে তার কার্যালয়ে যান। কিন্তু তাকে না পাওয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রলয় চিচিং কাছে ঘটনার সবিস্তর তুলে ধরলে শীর্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তা কাউনিয়া থানা পুলিশকে ঘটনা তদন্তপূর্বক রিপোর্ট দিয়ে সত্যতা জানানোর তাগিদ দেন। সত্যতা খুঁজে পেলে হাদীস মীরের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
একটি সূত্রের দাবী অনুযায়ী সর্বশেষ জানা গেছে, আজ সোমবার বিকেলেই হাদীস মীরের বিরুদ্ধে এই ঘটনায় কাউনিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এখন দেখার বিষয় তাকে আটকে পুলিশ কোন পথে হাঁটে ?
অবশ্য কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিমুল করিম জানান, এখনও মামলা দায়ের হয়নি, তবে তদন্ত চলছে। আভাস পাওয়া গেছে, পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনার প্রতিকুল খবরে বর্তমানে অবস্থানরত প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের ব্যাক্তিগত এই সহকারী মোটেই বিচলিত নয়। এই প্রতিবেদকের সাথে সন্ধ্যায় তার আলাপকালে সেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।