পরকীয়ার মোহে ঘরে আগুন দিয়ে মামলা ঠুকে স্বামী ও বৃদ্ধা শাশুড়িকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন গৃহবধূ হালিমা আক্তার মীম (২২)। ভয়ংকর এ পরিকল্পনার নেপথ্যের প্ররোচক ছিলেন মীমের প্রাক্তন প্রেমিক চাচাতো বোনের স্বামী আরিফ হোসেন শিকদার।
স্বামী জামালের সংসারে অশান্তি ছিল তাই আরিফের সঙ্গে নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্নে এমন পরিকল্পনা করেন মীম। অথচ সেই আগুনে দগ্ধ হয়ে গৃহবধূ মীম নিজেই প্রাণ দিলেন। ওই আগুনে দগ্ধ মীমের ছয় মাসের পুত্রসন্তান ওয়ালিফ জিসান বেঁচে গেলেও বর্তমানে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের আইসিউতে প্রাণ সংকটে রয়েছে।
মীমের স্বামী ও জিসানের বাবা জামাল হোসেন প্রিন্স বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগুনে দগ্ধ হওয়ার এক দিনের মাথায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান মীম।
পরকীয়ার মোহ ও পারিবারিক দ্বন্দ্বে এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মীমের প্রাক্তন প্রেমিক আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার পটুয়াখালীর এসপি মো. সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এমন তথ্য জানান।
আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে জামাল-মীম দম্পতি দুমকি থানা সংলগ্ন জনৈক শাজাহান মুন্সির বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত ৮ জুন মীমের বসত ঘরে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে মীম ডাক-চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এসে মীমকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা এবং মীমের শিশু সন্তানকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিমে নিয়ে চিকিৎসা দেন। অবস্থার অবনতি হলে মা-সন্তানকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। পরদিন ৯ জুন দগ্ধ মীম মারা যান। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে মীমের বৃদ্ধা শাশুড়ি পিয়ারা বেগমকে আটক করা হয়।
পরবর্তীতে মীমের শাশুড়ি পিয়ারা বেগমকে অভিযুক্ত করে মীমের মামা মোহাম্মদ ওমর ফারুক বাদী হয়ে দুমকি থানায় মামলাও করেন। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মীমের প্রাক্তন প্রেমিক আরিফের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ।
এরপর বাউফল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শাহেদ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গত ১১ জুন শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের সামনে থেকে অভিযুক্ত আরিফকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর আরিফের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১৩ জুন মঙ্গলবার গণমাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার বর্ণনা দেন এসপি সাইদুল ইসলাম।
বর্ণনায় এসপি বলেন, আরিফ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং পরিকল্পিতভাবে এটি ঘটিয়েছেন তারা; কিন্তু মীম মারা যাবে এমনটা বুঝতে পারেননি। আদালতেও এমন জবানবন্দি দিয়েছেন আরিফ।
পুলিশের অপর একটি সূত্র বলেন, মীম নিজেই তার মুখ ও পা বাঁধেন। পরে আরিফ মীমের মুখ বাঁধেন। পরিকল্পনা ছিল ঘরের মশারিতে আগুন দেবে আরিফ। সে অনুযায়ী শিশু সন্তান জিসানকে ঘরের সামনের বারান্দায় রাখা হয়। ওই আগুনে মীম কিছুটা আহত হলে শাশুড়ি-স্বামীকে আসামি করে মামলা দেবেন মীম। স্বামী-শাশুড়ি জেলে গেলে জামালের সংসার ছেড়ে আরিফের সঙ্গে নতুন সংসার শুরু করবেন মীম; কিন্তু আরিফ ভুল করে পুরো ঘরে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন দেন। যে আগুন পরে ভয়াবহ রূপ নেয়।
অগ্নিদগ্ধে নিহত মীমের স্বামী জামাল হোসেন প্রিন্সের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পারিবারিক সম্মতিতে পাঁচ বছর আগে মীমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু মীমের চাচাতো বোন লিমার স্বামী অভিযুক্ত আরিফ হোসেনের সঙ্গে পূর্বে তার স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল তা জানত না জামাল। যে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বিবাহের পরও ধরে রেখেছেন মীম। যে কারণে পারিবারিক দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত।