জেলেদের ফাঁদে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমাণে ডিমওয়ালা মা ইলিশ
প্রকাশ: ৮ নভেম্বর, ২০১৯, ৬:০২ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
সঞ্জিব দাস, গলাচিপা, পটুয়াখালী:-
বৃহস্পতি ও শুক্রবার সরেজমিনে উপকূলের পটুয়াখালীর গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে। মা ইলিশ রক্ষায় প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়ে গেছে আরও এক সপ্তাহ আগেই। তবুও জেলেদের জালে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ছে নিয়মিত। এ ব্যাপারে জেলেদের দাবি, নদীতে এখনও ডিম ছাড়ছে ইলিশ। তাদের মতে এবারের নিষেধাজ্ঞার সময় আগাম হয়ে গেছে। কিন্তু মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশের প্রজননের জন্য এ নিষেধাজ্ঞার সময় সঠিক ছিল। এ সময়ই বেশি পরিমাণ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। এ বিষয়ে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে মাছ শিকারে ব্যস্ত জেলে রফিক হাং বলেন, ‘আরও ১০দিন অবরোধ থাকলেই মাছ ঠিকমত ডিম ছাড়তে পারত।’ আরেক জেলে বেল্লাল বলেন, ১০ টা মাছ জালে উঠলে তার সাতটাতেই দেখি ডিম। সরেজমিনে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার সময় কাটিয়ে পুনরায় জেলেরা এক সপ্তাহ আগে উপজেলার আগুনমুখা, রামনাবাদ, দারচিরা ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদ-নদীতে ইলিশ শিকারে নেমেছেন। তবে এসব ইলিশের বেশিরভাগই পেট ডিমে ঠাসা রয়েছে। জেলেদের জালে কমবেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। বিভিন্ন হাট-বাজারে এসব ডিমওয়ালা ইলিশ বিক্রিও হচ্ছে। গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের কয়েকটি মা ইলিশ কেটে পেটে পরিপক্ক ডিম পাওয়া গেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার পরেও জালে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ার ঘটনায় কিছুটা আতংকিত উপকূলীয় জেলেরা। এতে ইলিশ উৎপাদন কমতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। এ নিষেধাজ্ঞার সময় সঠিক ছিলনা বলে মনে করছেন তারা। ইলিশ ধরতে ব্যস্ত পটুয়াখালীর জেলেরা। এবার প্রধান প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে মা ইলিশ রক্ষায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের জেলে লিমন মোল্লা বলেন, ‘নদীতে যাইয়া যেসব ইলিশ পাই। সব মাছের প্যাডে ডিম। এহনো অনেক মাছ ডিম ছাড়তে পারে নাই। আর কিছুদিন পর ডিম ছাড়বে। কিন্তু এহনতো অবরোধ নাই।’জেলে মনির হোসেন বলেন, ‘এবার অবরোধ আগে ওইয়া গেছে। একটু পিছাইয়া দিলে সব মাছগুলো ডিম ছাড়তে পারতো। বেশি মাছে ডিম ছাড়লে, নদীতেও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে।’ মাছ বাজারে ডিমে ঠাসা ইলিশের উপস্থিতির কথা স্বীকার করে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. কামরুল ইসলাম প্রতিবেদকে বলেন, ‘ডিমওয়ালা ইলিশ এখনও থাকবে। ৩-৫ মাস পরেও থাকবে। যেই পরিমাণ ইলিশ ডিম ছাড়া দরকার, তা হয়ে গেছে। এ অবরোধে আমরা জেলেদেরকে জাল ফেলা থেকে বিরত রাখতে পেরেছি। যেই পরিমাণে ইলিশ ডিম দিয়েছে, দিয়ে আবার সাগরে চলে গেছে। যেইটায় ডিম ছাড়েনি, সেইটা আবার সাগর থেকে উঠে আসবে।’ ইলিশ সারা বছরই ডিম ছাড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি না যে, নিষেধাজ্ঞাকালীন ইলিশে সব ডিম ছাড়বে। ওই সময়টা ছিল বেশি পরিমাণে ডিম ছাড়ার সময়।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমরা যা আশা করেছি, এবার তার চাইতে বেশি ডিম ছেড়েছে ইলিশ।’ এ ব্যাপারে গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-বাংলাদেশ প্রকল্পের টিম লিডার প্রফেসর ড. মো. আব্দুল ওহাব আরো বলেন, ‘মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ প্রকল্প দ্বারা সারাবছর ব্যাপী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই সময়টা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়টির ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। তবে ২২ দিনের চাইতে বেশি সময় ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে কিনা তা প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। এটা বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভিত্তিতে হবে। বিষয়টি বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত, বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর তথ্য সংযোজন পর্যালোচনা অব্যাহত থাকবে।’