সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) থেকেঃ
আধুনিক পদ্ধতিতে নয় মান্ধাতা আমলের মতো জ্যামিতিক হারে গড়ে উঠছে এসব ইটভাটা। সব ধরনের সরকারি বিধিবিধান উপেক্ষা করে গলাচিপা উপজেলায় একের পর এক গড়ে ওঠা ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কোথাও লোকালয়ে কোথাও স্কুলের পাশে আবার কোথাও সরকারি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি দখল করে। এতে এলাকার পরিবেশ হয়ে পড়ছে বিপন্ন। ইটভাটার আশপাশের গাছপালা যাচ্ছে মরে। এমনকি ভাটা থেকে সরাসরি কার্বন মনো অক্সাইড গ্যাস বাতাসে মিলে যাওয়ায় আশপাশের এলাকার মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ইটভাটায় শিশু শ্রমিক ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রভাবশালী ইটভাটার মালিকরা এসব করে গেলেও দেখার কেউ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলায় ৫টি ইটভাটা রয়েছে। ধানি জমিতে স্কুলের পাশে এবং সরকারি ও পাউবো’র জমিতে গড়ে ওঠা এসব ভাটা তৈরিতে মানা হচ্ছে না কোনো সরকারি নিয়মকানুন। ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া সরাসরি বাতাসে যাতে বেড়াতে না পারে এজন্য আধুনিক পদ্ধতিতে পানির ট্যাংকি দিয়ে পরিশোধনের বিধান রয়েছে। ধোঁয়া নির্গমনের জন্য সরকার নির্ধারিত ৬৫ ফুট বদলে ২৫ ফুট চোঙা ব্যবহার করা হচ্ছে। তাও আবার সিমেন্টের তৈরি নয়। ড্রাম শিট দিয়ে এসব ভাটার চোঙা নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও একটি বাদে সব ভাটায় ইট পোড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, গলাচিপার ইটভাটাগুলোতে বছরে ২ লাখ মনের বেশি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সরেজমিন গজালিয়া ইউনিয়নের ইসাদি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় এমনই একটি ইটভাটা। স্থানীয়রা জানান, এ ই্টভাটার মালিক ওই ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন খান। তার ইটভাটাটি করা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ও সরকারি খাস জমিতে। স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তার সত্যতা স্বীকার করেছেন। দেখা গেছে, ভাটায় কাঠের কয়েকটি বিশাল স্তুুপ। ভাটার মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন খান এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ ভাটার কাছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রসা, বাজার ও অসংখ্য বাড়িঘর রয়েছে। ওই এলাকার আনোয়ার হোসেন খান এ ভাটা বন্ধের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বন ও পরিবেশ সচিব বরাবরে লিখিত আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি কোনো প্রতিকার। এছাড়া আমখোলার মুসুরী কাঠিতে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আ. ছত্তার হাওলাদারে ইটভাটায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, লোক দেখানোর জন্য কিছু পরিমাণ পাথর ও কয়লা ভাটার পাশে স্তুুপ করা রয়েছে। এলাকাবাসী জানান, শুরু থেকেই পাথর ও কয়লা ওইভাবেই রাখা রয়েছে। ম্যানেজার ফোরকান হাওলাদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, দুই একবছরের মধ্যে ড্রামশিটের বদলে আধুনিক পদ্ধতি চালু করা হবে। সুহরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রতনদি তালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বাঁশবাড়িয়া হাজী সামসুদ্দিন মোল্লা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ৩টি ইটভাটা। এদিকে পরিবেশ অধিদফতরের এসব দেখে ভাল করার দায়িত্ব থাকলেও পটুয়াখালী জেলায় আজ পর্যন্ত স্থাপিত হয়নি এ দফতর।