সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বর্ষাকালীন খাঁটি বাংলার সুবাসিত ফুল গন্ধরাজ। বাংলাদেশের শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের আনাচে-কানাচে প্রায় সর্বত্রই এটি দেখা যায়।সুগন্ধ ও সহজলভ্যতার কারণে ফুলটি অনেকেরই বেশ চেনা। বেশ পুরোনো আর ঝোপাল। সাধারনত বসন্তের শেষভাগে গন্ধরাজের শুভ্র পাপড়ির ফুল গুলো ফুটতে শুরু করে। ফুলের অফুরন্ত ভান্ডার যেন। ফুল ফুটছে তো ফুটছেই। মাসের পর মাস। প্রতিদিনই দু-একটা ফোটা চাই। অনেক ফুলপ্রেমী মেয়েরা প্রতিদিন একটি ফুল তুলে খোঁপায় গুঁজে কলেজে যায়। আবার অনেকে ফুলটি রেখে দেয় বইয়ের ভেতর। ফুল শুকিয়ে গেলেও পাপড়ির সুগন্ধ অটুট থাকে অনেক দিন। গ্রামীন পটভূমির মাঝে বেড়ে ওঠা অনেকেরই মনে গন্ধরাজ ফুল মানে একরাশ স্মৃতি, কলেজের বর্ণিল এবং সুবাসিত দিন। এখন কোথাও গন্ধরাজ দেখলেই মনটা কেমন ব্যাকুল হয়! সুগন্ধ ও সহজলভ্যতার কারণে ফুলটি আমরা অনেকেই চিনি। এই গাছের বংশবৃদ্ধির কৌশলও অত্যন্ত সহজ। ডাল কেটে পুঁতে দিলেই বেঁচে যায়। মাত্র দু-এক বছর পর দিব্যি ফুল ধরতে শুরু করে। এভাবেই গাছটি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। একসময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এই গাছ চোখে পড়ত। এ ফুলের গন্ধ একেবারেই স্বতন্ত্র। গ্রীষ্ম-বর্ষার আলু থালু বাতাসে মাতাল করা সুগন্ধ ভেসে বেড়ায়। বিশেষত রাতের অন্ধকারে গন্ধের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। সহজলভ্যতা, পুষ্পপ্রাচুর্য এবং দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে এই ফুল গ্রামেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। গাছটি গঠনবিন্যাস ও ফুলের সুগন্ধের জন্য সর্বত্রই সমাদৃত। তাই আমাদের পার্ক ও উদ্যান গুলো গন্ধরাজ ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ। কেউ কেউ আবার ডালপালা ছেঁটে, মাথা মুড়িয়ে তাতে অন্য রকম সৌন্দর্য খুঁজে পান। কিন্তু নিয়মিত ডালপালা ছাঁটলে পুষ্প প্রাচুর্য অনেকটাই কমে আসে। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া চিরসবুজ এই গাছ স্বভাবে ঝোপাল, ডালপালা গুলো আঁটসাঁট ও শক্ত ধরনের। কখনও কখনও গোড়া থেকেও ডালপালা গজায়। পাতার রং চকচকে সুবজ। ৭ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফুলের মৌসুম বসন্ত থেকে শুরু করে একেবারে বর্ষা-শরৎ অবধি বিস্তৃত। ফুলের গোড়ার দিকটা
নলাকার, মুক্ত পাপড়ি গুলো দুধসাদা রঙের, ডাবল ও কয়েক সারি। বাসিফুল ও পরাগধানি হলুদ রঙের। এই ফুলের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পরও সুগন্ধ থেকে যায় অনেক দিন।হিন্দুদের পূঁজার ফুল হিসেবে গন্ধরাজের গুরুত্ব অনেক। গন্ধরাজ চাষের জন্য আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি যেন বেশি ভিজে কাদা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সতেজ গাছ রাখতে হলে একটি সোজা শাখা ও চার-পাঁচটি পার্শ্বশাখা রাখতে হবে। বেশি ফুলের জন্য গাছের আগা কেটে দিতে হবে। গন্ধরাজ ফুল স্নায়বিক সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা, বদহজম এবং জন্ডিস সারাতে কাজে লাগে।