লালমাই উদ্ভিদ উদ্যান। জেলার ঐহিত্যবাহী লালমাই পাহাড়ের ভাঁজে ইট বিছানো পথ ধরে হাঁটতেই একটু পরপর দেখা মেলে- বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের। পথের দুই পাশে থাকা এসব উদ্ভিদের সঙ্গে রয়েছে পরিচিতি বোর্ডও। লেখা আছে উদ্ভিদের নাম-পরিচয়, গোত্রসহ বিস্তারিত বর্ণনা। চোখে পড়ে বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশঝাড়ও। আছে রং-বেরঙের নানান ধরনের ফুলের সমারোহ। রয়েছে ক্যাকটাস ও অর্কিড হাউসও। দর্শনার্থীদের এমন নান্দনিক দৃশ্য এখন যে কারো চোখে পড়বে কুমিল্লার পর্যটন নগরীখ্যাত কোটবাড়ী এলাকার লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানে গেলে। উদ্যানের বিরল এই উদ্ভিদের মেলা প্রতিনিয়তই মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীদের মধ্যে।
কুমিল্লা নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোটবাড়ি ময়নামতি জাদুঘরের কাছে সালমানপুর এলাকায় প্রায় ১৭ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এ উদ্যান। এখানে রয়েছে কয়েক শ প্রজাতির উদ্ভিদ। যার অন্তত ৯০ শতাংশই বিপন্ন ও দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির উদ্ভিদ বলে জানিয়েছে কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ। বন বিভাগে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মিরপুর ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পর লালমাই উদ্ভিদ উদ্যানটি দেশের তৃতীয় বিরল উদ্ভিদ উদ্যান। ২০১৫ সালে এটির কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালের শুরুতে শেষ হয়। ঐ বছরের ৭ নভেম্বর দর্শনার্থীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় বিরল উদ্ভিদের এই উদ্যানটি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ উদ্যানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ, বন্য প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি, বিনোদনের ব্যবস্থা, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে উদ্যানটিতে বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল উদ্ভিদের মধ্যে রাধাচূড়া, নাগেশ্বর, আগার, নাগলিঙ্গম, কাঞ্চন, অশ্বথ, চন্দন, রক্তচন্দন, চালমুগরা, লোহাকাঠ, চাপালিশ, ধূপ, বাবলা, হরীতকী, বহেরা, হিজল, কনক, তমাল, অশোক, সিভিট, উড়ি আম, বন পেয়ারা, অর্জুন, মহুয়া, তেলশুর, পুঁটিজাম, বাঁশপাতা, কুম্ভি, পীতরাজ, পারুল, জারুল, চম্পা, টগর, বেলি, চিকরাশি, হরিয়ান, লটকন, ফেন্স, বোটলব্রাশ, বাসক, রঙ্গন, করমচা, সোনালু, বট, কৃষ্ণচূড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। এখানে আরও রয়েছে ক্যাকটাস হাউস, অর্কিড হাউস, বিভিন্ন ফুলের বাগান, বিরল উদ্ভিদ বাগান, বন্য প্রাণীর জন্য জলাশয়, বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস। এখানে দর্শনার্থীদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু আরসিসি বেঞ্চ, ব্যাঙের ছাতা সদৃশ বিশ্রামাগার। নির্মাণ করা হয়েছে পৃথক শৌচাগারও। ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর উদ্যানটির উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে উদ্যানটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট ৫ টাকা, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই উদ্যান।
কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, এখানে দেশের প্রথম ফরেস্ট মিউজিয়াম গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া জাতীয় মানের একটি উদ্যান হিসেবে গড়ে তুলতে মন্ত্রণালয় একটি মাস্টার প্লান প্রণয়ন করেছে। উদ্যানটির সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এটি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে এখানে বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করতে পারবেন। তিনি আরও জানান, এই উদ্যানের ৯০ ভাগ উদ্ভিদই বিরল এবং বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির। এই উদ্যান নতুন প্রজন্মকে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দেবে। আর এই উদ্যানটি দেশের অন্যতম সেরা বিরল উদ্ভিদের উদ্যানে পরিণত হবে।