ইন্দুরকানীতে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ বছরেও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ৩২ জন শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেতন না পাওয়ায় তাঁদের মধ্যে কেউ এখন সবজি বিক্রেতা, কেউবা দিনমজুর।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি হলো– বিজিএস মহিলা দাখিল মাদ্রাসা ও রাজিয়া রশিদ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা। এ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০২৩ সালের দাখিল পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে ২০ জনের বেশি ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক এখনও এমপিওভুক্তির আশায় কষ্টে দিন পার করলেও পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাঁদের জীবিকার জন্য অন্য কাজও করতে হচ্ছে।
উপজেলা সদরের চার কিলোমিটার দূরে ভবানীপুর গ্রামে অবস্থিত বিজিএস মহিলা দাখিল মাদ্রাসা। ইবতেদায়িসহ দশম শ্রেণি পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানে তিন শতাধিক ছাত্রী রয়েছে। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠানটি একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়ায় এর শিক্ষার্থীরা ২০০৪ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরপর দুই বছর আবেদন করলেও এমপিওভুক্ত হয়নি।
উপজেলার কালাইয়া গ্রামে স্থাপিত রাজিয়া রশিদ মহিলা দাখিল মাদ্রাসাতেও তিন শতাধিক ছাত্রী রয়েছে। ২০০২ সাল থেকে একাডেমিক স্বীকৃতি পেয়ে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বেতনের আশায় ২০ বছর ধরে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে সব শর্ত পূরণ করলেও এমপিওভুক্ত হচ্ছে না।
বিজিএস দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী আব্দুস সালাম জানান, বিশ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন। এমপিও হবে, তাই অন্য কোথাও যাননি। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। ধার-দেনায় জর্জরিত। মাঝে মাঝে না খেয়েও থাকতে হয়। মাদ্রাসায় পাঠদানের পাশাপাশি বাজারে বাজারে সবজি বিক্রি করে যে আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকমে দিন চালাচ্ছেন তিনি।
রাজিয়া রশিদ দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আব্দুল হালিম হাওলাদার জানান, এমপিও হবে, বেতন পাবেন– এই আশায় ২০ বছর ধরে পাঠদান করছেন। কিন্তু আজও বেতনের মুখ দেখেননি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্টে জীবন কাটান। মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্তির দাবি তাঁর।
বিজিএস দাখিল মাদ্রাসা সুপার শাহ আলম হাওলাদার জানান, ২০ বছর ধরে মেয়েদের শিক্ষার জন্য ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের সব শর্ত পূরণ করলেও এমপিওভুক্ত হচ্ছে না। তিনি সরকারের কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে এমপিওভুক্তির দাবি জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আবুল খায়ের জানান, দুটি নন-এমপিও নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কী কারণে এমপিওভুক্ত হচ্ছে না, তা তিনি জানেন না। তবে এমপিওভুক্ত হলে প্রতিষ্ঠান দুটি আরও ভালো করবে বলে আশা তাঁর।